“যত ক্ষণ না অন্য সব সমাজ, সংস্কৃতি ও ধর্মকে নির্মূল বা ধর্মান্তরিত করা যাচ্ছে, তত ক্ষণ পর্যন্ত স্থির হওয়া সম্ভব নয়” – মুসলমানদের কটাক্ষ করে এমনই এক ইসলাম-বিরোধী উদ্ধৃতি সলমন রুশদির (Salman Rushdie) বলে সোশাল মিডিয়ায় চালানো হচ্ছে।
বুম দেখে, রুশদি এই রকম কোনও মন্তব্য করেননি। উদ্ধৃতিটি মিথ্যে করে তাঁর বলে চালানো হচ্ছে।
‘মিডনাইটস চিল্ডরেন্স’-এর লেখক ও বুকার প্রাইজ বিজেতার নতুন বই সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। রুশদির বইগুলি ধর্মীয় বিতর্ক সৃষ্টিকারী বিষয় নিয়ে লেখা। তার জন্য ইন্টারনেটে বিদ্বেষের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। ১৯৮৮ সালে, তাঁর বই ‘সেটানিক ভার্সেস’ প্রকাশিত হওয়ার পর, তাঁর উদ্দেশ্যে ধর্মীয় ফতোয়া জারি করা হয় ও দীর্ঘ দিন হত্যার হুমকি ঝুলে থাকে তাঁর মাথার ওপর। ২২ অগস্ট, ২০২২-এ, নিউইয়র্ক শহরের চাউটাউকুয়া ইনস্টিটিউটে বক্তৃতা দিতে মঞ্চে ওঠার সময়, তাঁকে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করা হয়। ৭৫ বছর বয়সী রুশদির ওপর জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রপচার করা হয় ওই আক্রমণের পর। ওই আক্রমণের ফলে, তিনি একটি চোখে দৃষ্টিশক্তি হারান। এবং তাঁর এক হাতের স্নায়ু কেটে যায়। তাঁর আক্রমণকারী, ২৪ বছর বয়সী হাদি মাতার, তাঁর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা ও মারধোর করার সেকেন্ড ডিগ্রির অভিযোগ অস্বীকার করেন।
একজন মুসলমানের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে, ওই মিথ্যে উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে, “সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান শান্তিপূর্ণ হলেও তাতে কিছু এসে যায় না। কারণ, কোরান মেনে-চলা একজন মুসলমানের দ্বারাই আক্রান্ত হই আমি।” তাতে আরও বলা হয়, “সব ধর্ম এক নয়্। কারণ বিধর্মীদের জন্য মৃত্যুর বিধান দেওয়া নেই সেগুলিতে। আমি বিশ্বকে এই বলে সাবধান করতে চাই যে, যত ক্ষণ না অন্য সব সমাজ, সংস্কৃতি ও ধর্মকে নির্মূল বা ধর্মান্তরিত করা যাচ্ছে,ততক্ষণ পর্যন্ত স্থির হতে পারবে না ইসলাম।”
একটি টুইটে বলা হয়, আল্লা তাঁর নিজের মানুষদের শাস্তি দিচ্ছেন। সেটির জবাবেই এই উদ্ধৃতিটি দেওয়া হয়। কোনও ক্যাপশন ছাড়াই, @Lokakas থেকে শেয়ার করা হয় উদ্ধৃতিটি।
টুইটটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন। আর্কাইভ দেখতে এখানে।
ভুয়ো উদ্ধৃতিটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হচ্ছে।
দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে, উদ্ধৃতিটি মিথ্যে করে রুশদির নামে চালানো হচ্ছে। কোনও সাক্ষাৎকারে বা বিবৃতিতে উনি ওই ধরনের কোনও মন্তব্য করেননি।
টুইটারে সলমন রুশদি নিজেই বিষয়টা স্পষ্ট করেন। উদ্ধৃতিটি সম্পর্কে উনি লেখেন, “মিথ্যে উদ্ধৃতি। ওই কথা আমি বলিনি।”
তাছাড়া, ওই উদ্ধৃতিটি দিয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে, কোনও কিছুই বেরিয়ে আসে না। তা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, জনসাধারণের জন্য ওই ধরনের কোনও বিবৃতি রুশদি দেননি।