সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেটিতে শাহরুখ খানকে (Shah Rukh Khan) বলতে শোনা যাচ্ছে যে, তাঁর বাবা পাকিস্তানের পেশাওয়ারের মানুষ। ফলে, উনি একজন পাঠান (Pathaan)। তাই পাকিস্তান যখন জেতে, তখন সেটা তাঁর বাবার দিকের জিত বলে মনে হয় তাঁর।
শাহরুখ খানকে পাকিস্তানের সমর্থক হিসেবে দেখানোর উদ্দেশ্যে, ২০ সেকেন্ডের এই ক্লিপটি আগেও অনেক বার ফেসবুকে শেয়ার করা হয়। সেই সঙ্গে শাহরুখের সাম্প্রতিক ছবি 'পাঠান' বয়কট করার ডাক দেওয়া হয়। ছবিটি ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩-এ মুক্তি পেতে চলেছে।
বুম দেখে ভিডিওটি কাটছাঁট করা এবং অপ্রাসঙ্গিক ভাবে সেটি শেয়ার করা হচ্ছে । ঠিকই যে উনি বলেন পাকিস্তান জিতলে তাঁর বাবার দিক জেতে। কিন্তু তার পরেই উনি এও বলেন, ভারত জিতলে সেটা হয় তাঁর মায়ের দিকের জয়।
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে ওই দ্বিতীয় অংশটি বাদ দেওয়া হয়েছে। যাতে মনে হয়, শাহরুখ ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সমর্থন করেন।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তাঁর এক সাম্প্রতিক পোস্টে ভিডিওটি শেয়ার করেন। ক্যাপশনে লেখা হয়, "আমিও একজন পাঠান। পাকিস্তান জিতলে মনে হয় আমার বাবা জিতেছেন -শাহরুখ খান। শুনেছি তাঁর একটি সিনেমা মুক্তি পেতে চলেছে। কিন্তু তার আগে তাঁর পাকিস্তান প্রেম দেখুন। #বয়কটপাঠান #বয়কটবলিউডফরএভার।
ভিডিওটিতে শাহরুখ খানকে বলতে শোনা যায়, "আমি আপনাদের কিছু বলতে চাই। আমার বাবা আসলে পাকিস্তানের পেশাওয়ারের মানুষ। পাঠানের মতো দেখতে না হলেও, আমিও একজন পাঠান। আমার শারীরিক গঠন দুর্বল। তবুও আমি একজন পাঠান। যদিও আমি লম্বা নই। এবং কোনও বিতর্ক সৃষ্টি করার জন্য আমি বলছি না – কিন্তু আপনারা যখন জেতেন, তখন আমার মনে হয়, আমার বাবার দিক জিতেছে।"
অগস্টে, একজন টুইটার ব্যবহারকারী ওই একই ২০ সেকেন্ডের ক্লিপটি শেয়ার করেন পাঠান ফিল্মটি বয়কট করার ডাক দেন।
পরিপ্রেক্ষিত যাচাই
ভিডিওটি খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে, শাহিদ আফ্রিদি ও শোয়েব মালিকের মতো পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলছিলেন শাহরুখ খান। এই সূত্র ধরে আমরা 'শাহরুখ খান শাহিদ আফ্রিদি পেশাওয়ার', এই কি-ওয়ার্ডগুলি দেয়ে ইউটিউবে সার্চ করি। এর ফলে, ২৬ অক্টোবর, ২০০৯-এর একটি ইউটিউব ভিডিও আমাদের সামনে আসে। সেটির শিরোনামে লেখা ছিল, "শাহিদ আফ্রিদি ও পেশাওয়ার সম্পর্কে কথা বলছেন শাহরুখ খান"।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, ভারতের স্পিন বোলার হরভজন সিংকেও স্টেজে নিয়ে আসেন শাহরুখ খান। আমরা আমাদের সার্চে 'হরভজন' নামটিও যোগ করি। তার ফলে, আমরা আরও একটি ভিডিও দেখতে পাই। তাতে "চক দে ইয়ারা" লেখা ছিল।
এই সূত্র ব্যবহার করে আমরা 'শাহরুখ খান চক দে ইয়ারা' কি-ওয়ার্ড দিয়ে ইউটিউবে সার্চ করি। এর ফলে, সম্পূর্ণ ভিডিওটাই আমাদের সামনে এসে যায়।
এক ঘন্টার ওই ভিডিওটির নাম: "চক দে ইয়ারা। ভারত-পাকিস্তান বন্ধুত্বের এক নিদর্শন"। সেটির ক্যাপশনে বলা হয়, "চক দে ইয়ারা। ২০০৭-এ আয়োজিত একটি ভারতীয় অনুষ্ঠান। সেই সময় এক দিনের খেলা ও টেস্ট সিরিজের জন্য পাকিস্তান টিম ভারত সফর করছিল। ওই সন্ধ্যায়, হোস্ট ছিলেন শাহরুখ খান ও সাজিদ খান।"
ইউটিউব ভিডিওটির ৩৩:২০ সময় চিহ্নে, আমরা সেই অংশটা দেখতে পাই যেটি কেটে নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক কারণে ভাইরাল হয়েছে। এখানে শাহরুখ বলছেন, যেহেতু তাঁর বাবা পেশাওয়ারের মানুষ, তাই পাকিস্তান জিতলে তাঁর মনে হয় তাঁর বাবার দিক জিতেছে।
এর পরেই উনি বলেন, "যখন আমাদের ভারত জেতে, তখন মনে হয় মায়ের দিক জিতেছে"। ভাইরাল ভিডিওতে এই অংশটি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আইবি টাইমস-এ প্রকাশিত একটি লেখায় বলা হয়, পাকিস্তান দল ৫টি এক দিনের খেলা ও ৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলার জন্য ভারত সফর কালে, চক দে ইয়ারা নামক বিশেষ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।
খানের পাকিস্তানি শিকড়
এমন নয় যে এই প্রথম, তাঁর বাবা মীর তাজ মহম্মদ খানের পাকিস্তানি শিকড়ের জন্য শাহরুখ খানকে মিথ্যের শিকার হতে হল।
গত বছর, একটি সংবাদপত্রে বলা হয়, ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কনিষ্টতম স্বাধীনতা সংগ্রামীদের একজন ছিলেন শাহরুখ খানের বাবা। একাধিক দক্ষিণপন্থী ফেসবুক পেজ মিথ্যে সাজিয়ে ওই দাবির বিরোধিতা করে। অনুপমা চোপড়ার লেখা খানের জীবনী, 'কিং অফ বলিউড' বইটিতে বলা হয়, তাঁর বাবা ১৯৪২-এ ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য ১৫ বছর বয়সে ভারতে আসেন।