বাংলাদেশের (Bangladesh) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) বিমান থেকে অবতরণের এক ভিডিও সম্প্রতি সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা পোস্ট করে দাবি করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার সুবাদে দেশে ফিরতে পেরেছেন শেখ হাসিনা। ভিডিওটিতে কয়েকজন ব্যক্তিকে হাসিনাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা করতেও দেখা যায়।
বুম যাচাই করে দেখে ভিডিওটি ২০২৪ সালের জুন মাসের, সাম্প্রতিক নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য হাসিনার নয়াদিল্লিতে পৌঁছানোর সময় ভিডিওটি তোলা হয়।
গত ৩১ অক্টোবর ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে বাংলাদেশে এক বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হওয়ার অভিযোগ করেন। এছাড়াও, তিনি ওই পোস্টে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হিংসাত্মক ঘটনার নিন্দা করার পাশাপাশি জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের নেতৃত্বাধীন মার্কিন সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
অতঃপর, গত ৬ নভেম্বর আমেরিকান সংবাদমাধ্যম ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসাবে অনানুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু কন্যা হাসিনার বাংলাদেশে ফেরার ভুয়ো দাবি ভাইরাল হয় সমাজমাধ্যমে। বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনের জেরে ২০২৪ সালের অগাস্ট মাসে হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন ও সেখানে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
প্রায় ১ মিনিটের সেই ভিডিও শেয়ার করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, "ট্রাম জেতায় বাংলাদেশে ল্যান্ড করেছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ইউনুস ফখরুল শফিক একটাও জেনো পালাতে না পারে,ছাত্রলীগের তৃণমুলকে সিমান্ত পাহারা দেয়ার জন্য বলা হলো। - গর্ত থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সভাপতি সাদ্দাম।"
পোস্টটি দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফেরা সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করে কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন খুঁজে পায়নি।
এরপর, আমরা ভাইরাল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে সেখানে সংবাদ সংস্থা এএনআই ও সংবাদ মাধ্যম দ্য প্রিন্টের লোগো লক্ষ্য করি। এর থেকে ইঙ্গিত নিয়ে গুগলে ভাইরাল ভিডিওর কিফ্রেমের একটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করি।
সার্চটির মাধ্যমে আমরা দ্য প্রিন্টের ইউটিউব চ্যানেলে ২১ জুন, ২০২৪-এ প্রকাশিত এক রিপোর্ট খুঁজে পাই যেখানে ভাইরাল ভিডিওর একটি দীর্ঘতর সংস্করণ দেখা যায়।
ওই প্রতিবেদনের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেটি দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর উপলক্ষে শেখ হাসিনার দিল্লিতে পৌঁছানোর ভিডিও। ওই ভিডিও রিপোর্টে শেখ হাসিনাকে বিমান থেকে নামতে দেখা যায় এবং তাকে ভারতের তরফ থেকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনাও জানানো হয়। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিমানবন্দরে ভারতীয় লোক নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
নীচে ভাইরাল ভিডিওর একটি স্ক্রিনশটের সঙ্গে দ্য প্রিন্টের ভিডিও প্রতিবেদনের দৃশ্যের তুলনা দেখা যাবে।
এরপর, আমরা হাসিনার ভারত সফর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশী সংবাদ মাধ্যম প্রথম আলোর ২১ জুন, ২০২৪-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাই। ওই প্রতিবেদনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ২১ ও ২২ জুনের জন্য রাষ্ট্রীয় সফরে নয়া দিল্লি পৌঁছানোর সংবাদ পাওয়া যায়।
প্রথম আলো জানায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে দিল্লি যান শেখ হাসিনা। প্রতিবেদন অনুসারে, "বিমানবন্দরে ভারতের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল এবং দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।"
আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনের ২০২৪ সালের ২২ জুনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে পুনর্নির্বাচিত হলে দ্বিপাক্ষিক সফরে আসেন শেখ হাসিনা। মোদীর সঙ্গে বৈঠকে হাসিনা একাধিক চুক্তি চূড়ান্ত করে যার মধ্যে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমুদ্রাঞ্চলে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা চুক্তি অন্যতম। এছাড়াও, তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন ওই সফরে।