ময়নাতদন্তের পর রাশিয়া (Russia) ও ইতালিতে (Italy) কোভিড-১৯ (COVID-19) নিরাময়ের উপায় বেরিয়েছে বলে একই ভাইরাল ভুয়ো বার্তা এখন সিঙ্গাপুরের (Singapore) নামে ছড়াচ্ছে।
সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রক একটি বিবৃতিতে ওই মেসেজটিকে ভুয়ো বলে জানিয়ে বলে তারা ওই ধরনের কোনও ময়নাতদন্ত করেনি।
ইতালির নাম করে যখন বার্তাটি শেয়ার করা হচ্ছিল, তখনই বুম সেটি খণ্ডন করে। ওই বার্তাটিতে দাবি করা হয় যে, রক্ত জমে যাওয়াই কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর কারণ, শ্বাসকষ্ট নয়। তাতে আরও দাবি করা হয় যে, সার্স-কভ-২ হল একটি ব্যাক্টিরিয়া, ভাইরাস নয়। সাথে এও বলা হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড প্রোটোকল বা নিয়মাবলি ভেঙ্গেছে সিঙ্গাপুর।
বার্তাটির সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ সহ সেটি বুমের হেল্পলাইনেও আসে।
অনেকে ওই একই পোস্ট ফেসবুকেও শেয়ার করেছেন।
আরও পড়ুন: করোনা টিকা নেওয়া পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন? না, ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়
তথ্য যাচাই
সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রক ফেসবুকে একটি বিবৃতি দিয়ে বলে, বার্তাটি ভুয়ো এবং তাদের ডিপার্টমেন্ট ওই ধরনের কোনও ময়নাতদন্ত করেনি।
এর আগে বুম চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে থ্রম্বোসিস বা রক্ত জমাট বাঁধার মতো ঘটনা বেশ কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কিন্তু সেটা কোভিড-১৯'এ মৃত্যুর প্রধান কারণ নয়।
আয়ারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও ইতালিতে করা গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯'এ মৃত্যুর একটা উল্লেখযোগ্য কারণ হল থ্রম্বোসিস। তবে সেটাই কোভিড-১৯'এ মৃত্যুর প্রধান কারণ, ওই গবেষণায় তা বলা হয়নি।
কোভিড-১৯'এ মৃত্যু ও থ্রম্বোসিসের সঙ্গে একটা সম্পর্ক দেখা গেছে ওই গবেষণাগুলিতে। কিন্তু সেটিকে কোভিড-১৯'এ মৃত্যুর প্রধান কারণ বলে চিহ্নিত করেনি গবেষণাগুলি। কোভিডি-১৯'এ কেন মৃত্যু হয়, তা জানার করা চেষ্টা হয়েছে 'দ্য ল্যানসেট'-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে। তাতে বলা হয়েছে শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থায় বিভ্রাটই হল কোভিড-১৯'এ মৃত্যুর প্রধান কারণ।
বুম দু'জন ফুসফুস বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে। একজন হলেন দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের রেসপিরেটারি ও ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডাঃ রাজেশ চাওলা। এবং অন্যজন হলেন, মুম্বাইয়ের সৈফি হাসপাতালের চেস্ট ফিজিসিয়ান ও ইন্টারভেনশনাল পালমোলজিস্ট ডাঃ জীনম শাহ। যে সব কোভিড রোগীর শরীরে থ্রম্বোসিস দেখা দেয়, তাঁদের তাঁরা কীভাবে চিকিৎসা করেন, তা আমাদের বুঝিয়ে বলেন।
ডাঃ চাওলা বলেন যে, দেখা গেছে যাঁদের শরীরে 'থ্রম্বি' বা একাধিক ক্লটস বা জমাট রক্ত দেখা দেয়, তাঁদের হাতে-পায়ে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এবং তার ফলে কিছু ক্ষেত্রে গ্যাঙগ্রিন বা পচন ধরতেও দেখা গেছে। সেক্ষেত্রে তাঁদের শরীরের 'ডি-ডিমার' মাত্রা অনুযায়ী রক্ত তরল করার ওষুধ দেওয়া হয়।
উনি এও বলেন এমনও দেখা গেছে যে, একজন কোভিড রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পথে হঠাৎই কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি বা হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন। তাঁর 'অ্যারিরথমিয়া' শুরু হয়। তাতে হার্টের স্পন্দন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এবং তিনি মারা যান।
ডাঃ শাহ, ডাঃ চাওলার সঙ্গে একমত হন। উনি আরও বলেন যে, সোয়াইন ফ্লু-র রোগীদের মধ্যেও ওই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। এবং তাঁদেরও রক্ত তরল করার ওষুধ দেওয়া হত।
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গ সরকার করোনা মোকাবিলায় রাষ্ট্রসংঘের শান্তি পুরস্কার পেল? একটি তথ্যযাচাই