বীরভূম জেলার (Birbhum) তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) সভাপতি অনুব্রত মন্ডল (Anubrata Mandal) জেলে বসেই বিচারককে (Judge) হুমকি দিয়ে চিঠি (Threat Letter) লিখেছেন বিভ্রান্তিকর দাবি সহ একটি গ্রাফিক সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে।
বুম দেখে বর্ধমান এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের করণিক বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের সই ও শিলমোহর সহ হুমকির ওই চিঠিটি আসে। অনুব্রত মণ্ডল সে সময় সিবিআই হেফাজতে ছিলেন, জেলে নয়।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া গ্রাফিক পোস্টে অনুব্রত মণ্ডলের (কেষ্ট নামে পরিচিত তিনি) ছবি সহ লেখা হয়েছে, "জেলে বসেই বিচারক কে হুমকি!! জামিন না দিলে বিচারক কে গাঁজা কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি কেস্টর। বলছি এত গাঁজা কোথায় রেখেছেন উনি??"
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
২৪ অগস্ট পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে ছিলেন অনুব্রত
অনুব্রত মণ্ডলকে ১১ অগস্ট গ্রেফতারের পর ২০ অগস্ট পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে পাঠায় আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালত। ২০ অগস্ট তাঁকে আসানসোলের সিবিআই আদালতে তোলা হলে জামিন নাকচ করে সিবিআই হেফাজতের মেয়াদ ২৪ অগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। ২৪ অগস্ট আবার আসানসোলের সিবিআই আদালতে অনুব্রতকে পেশ করা হলে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফজতের নির্দেশ দেন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী।
বুম যাচাই করে দেখে ১১ অগস্ট থেকে ২৪ অগস্ট অনুব্রত সিবিআই হেফাজতে ছিলেন। জেলে বসে অনুব্রতর ওরফে কেষ্টর বিচরককে হুমকি—এই দাবি বিভ্রান্তিকর।
সিবিআই হেফাজত হল তদন্তের প্রয়োজনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সিবিআই এর তত্ত্বাবধানে রাখা। বিচারবিভাগীয় হেফাজত হল সংশ্লিষ্ট বিচারকের অধীনে হেফাজত।
পুলিশ হেফাজত হল তদন্তের স্বার্থে থানার লক-আপে অভিযুক্ত ব্যক্তিতে রাখা। বিচারপ্রক্রিয়া শেষে দোষী সাব্যস্ত হলে মামলার রায় ঘোষণার পর জেল হেফাজত হল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সংশোধনাগারে কারাবাস।
হুমকি চিঠির প্রসঙ্গ
বুম দেখে ভাইরাল ফেসবুক পোস্টটি ২৩ অগস্টের। বুম ২৪ অগস্ট, ২০২২ আনন্দবাজারের ই-পেপার খুঁজে দেখে। আনন্দবাজারের প্রথম পাতায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গরু পাচার সংক্রান্ত মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া অনুব্রত মণ্ডলকে জামিন না দিলে আসানসোলে বিশেষ সিবিআইয়ের আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর পরিবারকে মাদক (এনডিপিএস) মামলায় ফাঁসানো হবে বলে "হুমকি চিঠি"। বিচারপতি রাজেশ চক্রবর্তীর এজলাসে অনুব্রত মণ্ডলকে তোলা হয় ২৪ অগস্ট। তার আগে সংশ্লিষ্ট বিচারক ওই চিঠি পান বলে খবরে প্রকাশ।
সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশিত চিঠির ছবিতে তারিখ রয়েছে ২০ অগস্ট ২০২২। ইংরেজিতে লেখা ওই "হুমকি চিঠি"-তে নাম ও সই ছিল "ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ তৃণমূল ফেডারেশন"-এর বর্ধমান আদালত ইউনিটের সহ-সম্পাদক ও ওই আদালতের প্রধান করণিক বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, "সিলমোহর তো আমার কাছেই আছে। তা হলে বলতে হবে, সেটাও জাল করা হয়েছে।"
বাপ্পা বর্ধমান সদর উত্তরের মহাকুমাশাসককে চিঠি লিখে জানান এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি জানান তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে সই জাল করা হয়েছে। ২৪ অগস্ট ২০২২, আনন্দবাজারের পঞ্চম পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদন শেষাংশ পড়ুন এখানে।
নিউজ ১৮ বাংলায় ২৫ অগস্ট, ২০২২ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বাপ্পা চট্টোপাধ্যা বর্ধমান একজিকিউটিভ কোর্টের পেশকার। বর্ধমানের শাঁখারিপুকুর এলাকার বাসিন্দা বাপ্পার বিরুদ্ধে আসানসোল দক্ষিণ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে ওই থানার পুলিশের একটি দল তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ২৫ অগস্ট ২০২২ এবিপি আনন্দের রিপোর্ট-এ বাপ্পার বক্তব্য দেখুন এখানে।