একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম (Indian Media) তাদের প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন দাবি করেছে ১,০০,০০০ দিরহাম বা প্রায় ২৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভারতীয়দের গোল্ডেন ভিসা (Golden Visa) দিচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (United Arab Emirates)।
তবে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি, সিটিজেনশিপ, কাস্টমস অ্যান্ড পোর্ট সিকিউরিটি (আইসিপি) গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলি খণ্ডন করে জানায়, এমন দাবির পিছনে কোনও আইনি ভিত্তি নেই। ভারতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলও দাবিটি খণ্ডন করে।
কী দাবি করা হয়েছিল?
পিটিআই সহ আনন্দবাজার পত্রিকা, এইসময়, টিভি৯ বাংলা, সংবাদ প্রতিদিনের মতো গণমাধ্যমগুলি ২০২৫ সালের ৭ ও ৮ জুলাইয়ের প্রতিবেদনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা সংক্রান্ত ভিত্তিহীন দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরতের রায়াদ গ্রুপ গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদনগুলি পরিচালনা করবে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, পিটিআই ৬ জুলাই, ২০২৫-এ "ভারতীয়রা এখন বাণিজ্য লাইসেন্স, সম্পত্তি ক্রয় ছাড়াই সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পেতে পারে" শিরোনামসহ ইংরেজিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, "নতুন মনোনয়ন-ভিত্তিক ভিসা নীতির অধীনে, ভারতীয়রা এখন ১,০০,০০০ দিরহাম (প্রায় ২৩.৩০ লক্ষ টাকা) দিয়ে আজীবন সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা উপভোগ করতে পারবেন।"
তবে, প্রতিবেদনে সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ভারতীয় কর্মকর্তাদের কোনও উদ্ধৃতি দেওয়া হয়নি, বরং তথ্য সূত্র হিসাবে "সুবিধাভোগী" এবং "প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত" বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও কোনও সরকারি উদ্ধৃতি ছিল না।
মুহূর্তেই দাবিটি ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও।
অনুসন্ধানে আমরা কী পেলাম
১. ভিএফএস আর রায়াদ গ্রুপের স্পষ্টীকরণ
বুম দেখে গোল্ডেন ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া পরিচালনাকারী সংস্থা হিসাবে ভিএফএস এবং রায়াদ গ্রুপকে উল্লেখ করা হয়েছে সংবাদ প্রতিবেদনে। কিওয়ার্ড সার্চ করে, আমরা ভিএফএস-এর ওয়েবসাইটে ৭ জুলাই, ২০২৫-এ "VFS Global Arm launches UAE Golden Visa immigration advisory services in India" শিরোনামের একটি বিবৃতি পাই।
এই বিবৃতিতে নতুন ভিসার জন্য সংস্থা হিসাবে ভিএফএসের সাথে রায়াদ গ্রুপের উল্লেখ রয়েছে যা সংবাদমাধ্যমে করা ভুয়ো দাবির সঙ্গে মেলে। তবে, বিবৃতিটি মুছে ফেলা হয়েছে।
খালিজ টাইমসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে, রায়াদ গ্রুপ এই ভুয়ো দাবিকে একটি "বিভ্রান্তি" বলে চিহ্নিত করে তার জন্য ক্ষমা চেয়েছে। এছাড়াও, তারা বলে ভিসা সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের উপর নির্ভরশীল। আরও জানানো হয়েছে, রায়াদ গোল্ডেন ভিসা আবেদনের জন্য পরামর্শমূলক সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে তাদের এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত অংশীদারদের মধ্যে সম্ভাব্য সহযোগিতার উপায় খুঁজছিল।
২. সংযুক্ত আরব আমিরাত জানিয়েছে দাবিটি ভিত্তিহীন
সরকারি সংবাদ সংস্থা এমিরেটস নিউজ এজেন্সির মাধ্যম্যে সংযুক্ত আরব আমিরতের ফেডারেল সংস্থা আইসিপি সংবাদ প্রতিবেদনগুলি খণ্ডন করে বলে, "এই দাবির কোনও আইনি ভিত্তি নেই এবং সংযুক্ত আরব আমিরতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কোন সংযোগ ছাড়াই দাবিটি করা হয়।"
৩. সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার বিদ্যমান নিয়ম
সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা, পেশাদার ব্যক্তি এবং ব্যতিক্রমী প্রতিভাবান জন্য প্রদত্ত একটি দীর্ঘমেয়াদী আবাস প্রকল্প । আবেদনকারীদের পুনরায় নবীকরণের সম্ভাবনা সহ নির্দিষ্ট অঞ্চলে ৫ বা ১০ বছরের ভিসার জন্য কমপক্ষে ২ মিলিয়ন দিরহাম (প্রায় ৪.৬৬ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করতে হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ভারতীয় সহ অন্যান্য কোনও দেশের নাগরিকদের জন্য কোনও সরলীকৃত প্রক্রিয়া অথবা কম খরচের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
বুম রায়াদ গ্রুপ, ভিএফএস এবং আইসিপি-র কাছে স্পষ্টীকরণের জন্য যোগাযোগ করেছে। প্রতিক্রিয়া পেলে প্রতিবেদনটিতে তার সংযোজন করা হবে।