টাকার বান্ডিল, সোনার তাল, আর গয়নার তিনটি ছবির একটি সেট ভাইরাল হয়েছে। সেই সঙ্গে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে, তিরুপতি বালাজি মন্দিরের (Tirupati Balaji Temple) পুরোহিত শেখর রেড্ডির (Sekhar Reddy) বাড়িতে আয়কর (IT Raids) দফতর হানা দিলে, ধনসম্পদ সমেত তিনি ধরা পড়েন।
বুম আগেই সোনার গয়নার ছবিটি খন্ডন করে ছিল। একই দাবি সমেত সেটি আগেও একবার ভাইরাল হয়েছিল। বুমের তথ্য-যাচাই পড়ুন এখানে। আমরা দেখি, সুগন্ধি ব্যবসায়ী পীযূষ জৈন'র কানপুরের বাড়িতে ডিসেম্বর ২০২১'এ আয়কর হানার সময় তোলা হয় বাকি দু'টি ছবি। ওই হানায়, তাঁর বাড়ি থেকে কয়েক কোটি টা্কা মূল্যের নগদ টাকা ও সোনার গয়না উদ্ধার করা হয়।
ছবিগুলির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে লেখা হয়, "তিরুপতি বালাজি মন্দিরের গরিব পুরোহিত শেখর রেড্ডির বাড়িতে আয়কর দফতর হানা দেয়। তাঁরা সেখান থেকে ১২৮ কিলোগ্রাম সোনা, ১৫০ কোটি নগদ টাকা ও ৭৭ কোটি টাকার হীরে আটক করেন। বাকি সব কিছু ঠিকঠাক চলছে। ধর্মের ব্যবসা পৃথিবীতে এখনও এক নম্বর স্থানে রয়েছে। আর এই দেশ হল সব চেয়ে গরিব, অভুক্ত, পুষ্টিহীন ও অশিক্ষিত।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: तिरुपति बालाजी मन्दिर के एक गरीब पुजारी शेखर रेड्डी के घर इनकम टैक्स की रेड हुई उसमें 128 किलो सोना, 150 करोड़ रुपये नगद और 77 करोड़ रुपये के हीरे मिले हैं।बाकी सब कुछ खैरियत हैं।धर्म का व्यापार दुनियां में अभी भी नंबर वन पर बना हुआ हैं। ओर ये देश सबसे ज्यादा गरीबों, भूखमरा, कुपोषित व अशिक्षित..)
একই ক্যাপশন সমেত ছবিগুলি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০১৮ সালে বিজেপি নেতার হাতে নিগ্রহের ঘটনার দৃশ্য ফের ছড়াল
তথ্য যাচাই
প্রথম ছবি
বুম দেখে, প্রথমটি হল তামিলনাডু'র ভেলোর'এ একটি চুরির ঘটনার ছবি। সেটি একটি ভিডিওর অংশ। একই ক্যাপশন সহ ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছিল। বুম সেই সময় ছবিটি যাচাই করে। দেখা যায়, ভিডিওটি হল একটি চুরির ঘটনা সংক্রান্ত। তামিলনাডুর ভেলোরে, জয় আলুক্কাস'র শোরুমে একটি চুরির ঘটনার পর পুলিশের উদ্ধার করা সোনা ও গয়না দেখা যাচ্ছে ভিডিওটিতে। বুম ভেলোর'র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএস সুন্দরমমূর্তি ও যুগ্ম পুলিশ সুপার অ্যালবার্ট জন'র সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁরা নিশ্চিত করে বলেন যে, ভিডিওটির সঙ্গে যে দাবিটি করা হয়, সেটি মিথ্যে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছবি
আমরা ছবি দু'টির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। দেখা যায়, সেগুলি হল কানপুরের ব্যবসায়ী পীযূষ জৈন'র বাড়িতে পাওয়া টাকার বান্ডিল ও সোনার বারের ছবি। পীযূষ জৈনের বাড়ির নীচে একটি গুদম ঘরে সেগুলি রাখা ছিল। রিপাবলিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, "ডিরেকটরেট জেনারেল অফ জিএসটি ইন্টেলিজেন্স সুগন্ধি ব্যবসায়ী পীযূষ জৈন'র বাড়িতে হানা দিয়ে মাটির তলায় একটি লুকনো গুদম থেকে ২৫০ কোটি নগদ টাকা, ২৫ কেজি সোনা ও ২৫০ কেজি রূপো উদ্ধার করে।"
সিএনএন নিউজ-১৮'এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বিদেশ থেকে আনা সোনা পাওয়া যায় পীযূষ জৈন'র বাড়িতে।
তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানের (টিটিডি) প্রতিক্রিয়া জানার জন্য বুম তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁদের বক্তব্য জানা গেলে, এই প্রতিবেদন সংস্করণ করা হবে।
শেখর রেড্ডি কে?
শেখর রেড্ডি বা জে শেখর রেড্ডি হলেন টিটিডি'র পর্ষদের একজন প্রাক্তন সদস্য। তাঁর বাড়ি আর অফিসে আয়কর দফতর হানা দিলে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও সোনা উদ্ধার হয়। তারপরই অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার রেড্ডিকে মন্দিরের পর্ষদ থেকে সরিয়ে দেয়। চেন্নাই ও ভেলোরে উনি পূর্ত দফতরের একজন কন্ট্র্যাক্টর ছিলেন। ২০১৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার রেড্ডিকে তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থান'র পরিষদের একজন বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য হিসে্বে মনোনীত করে। পরে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রমাণের অভাবের কারণে' এক বিশেষ সিবিআই আদালত তাঁকে আয়কর মামলায় নির্দোষ বলে ঘোষণা করে।
আরও পড়ুন: না, মার্ক জাকারবার্গ বলেননি ফেসবুকে দৈনিক ২০০ কোটিবার 'জয় শ্রীরাম' লেখা হয়