সম্প্রতি একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে যেখানে কিছু আহত মানুষকে দেখা যাচ্ছে। দাবি করা হয় ঘটনাটি নাগপুরের (Nagpur) এবং বলা হচ্ছে উচ্চস্বরে গান বাজানোর ফলে একটি পাঁচিল ধসে যাওয়ায় তারা আহত হন।
বুম যাচাই করে দেখে দাবিটি ভুয়ো এবং এই ভিডিও আসলে উত্তরপ্রদেশের মৌ জেলার এবং সেখানে উচ্চস্বরে সংগীতের কারণে দেওয়াল ধসে যাওয়ার কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভিডিওতে বেশ কিছু মহিলাকে আহত অবস্থায় দেখা যায় এবং তাদের মধ্যে বেশ কিছু জন রক্তাক্ত অবস্থায়ও ছিলেন। আশেপাশের লোকজনকে তাদের সাহায্য করতে দেখা যায় ভিডিওতে।
একজন ব্যবহারকারী এই ভিডিও পোস্ট করে বাংলায় ক্যাপশন হিসেবে লেখেন,"*📌DJ = SOUND BOMB..নাগপুর। কোনও এক অনুষ্ঠানে জোর শব্দে DJ বাজানোয় ভয়ানক কম্পনে দেওয়াল ভেঙে অনুষ্ঠানে উপস্থিত মানুষ জনের পরিণতি ....Please... আসুন সকলে সচেষ্ট হই, এই ভয়ানক শব্দ দূষণ রোধ করি । আমরাই আমাদের ক্ষতি করছি । আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য আমরা কি রেখে যাবো ? ভাবুন .... অন্যদের সচেতন করুন।"
এই ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন। এই পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভিডিওটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের এবং ঘটনাটি উত্তর প্রদেশের, নাগপুরের নয়। এছাড়াও এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি যার থেকে নিচিত ভাবে বলা যেতে পারে পাঁচিলটি উচ্চস্বরে গান বাজানোর জন্য ধসে গেছে।
আমরা ভাইরাল ভিডিওর কিছু অংশের একটি রিভার্স সার্চ করি এবং ডিসেম্বর ২০২৩ সালের বেশ কিছু পোস্ট খুঁজে পাই যেগুলি ইঙ্গিত করে ঘটনাটি আসলে উত্তরপ্রদেশের।
এই সূত্র ধরে আমরা একটি কিওয়ার্ড সার্চ করি এবং বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন খুঁজে পাই যেগুলি প্রকাশিত হয় ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে এবং এখানে এই একই ধরণের ঘটনার বিষয় বলা হয় এটি উত্তরপ্রদেশের মৌ জেলায় ঘটে।
১০ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনে বলা হয় ৮ জন মানুষ যার মধ্যে ছিলেন ৬ জন মহিলা, এবং দুজন বাচ্চা, তাদের দেওয়াল ধসে যাওয়ার কারণে মৃত্যু হয় মৌয়ের, ঘসি এলাকায়। আরও জানা যায় এই মানুষজন একটি বিবাহ অনুষ্ঠানের অংশ ছিলেন।
এরপর এই ঘটনা সংক্রান্ত কিছু ভিডিও আমরা খোঁজার চেষ্টা করি এবং এনডিটিভি ইন্ডিয়ার যাচাই করা ইউটিউব চ্যানেলে ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই যেখানে এই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।
ভিডিওটি এখানে দেখা যাবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিওর সাথে আমরা ইউটিউবের এই ভিডিওর একটি অংশের তুলনা করি যা নিচে দেখা যাবে:
এছাড়া, আমরা এমন কোনও তথ্য এই প্রতিবেদনগুলিতে খুঁজে পাইনি যেখানে বলা হয় উচ্চস্বরে গান বাজানোর কারণে পাঁচিলটি ধসে যায়। নিউজ১৮ ইউপি সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী পাসে রাখা বালির ঢিপির চাপে ধসে যায় দেওয়ালটি এবং সেই সময় এই মানুষগুলি একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। এই ঘটনার পর ২০ জনকে জেলার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বলেও জানা যায়।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয় ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজের সময় উপস্থিত ছিলেন এলাকার কালেক্টর এবং এসপি।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই ঘটনায় আহতদের পরিবারকে ২লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করেন এবং আঘাত পাওয়া ব্যক্তিদের জন্য ৫০,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করেন।