পাকিস্তানের এক ইসলাম (Islamic scholar) ধর্মের বিশেষজ্ঞ আরএসএস (RSS) নিয়ে প্রশংসাসূচক বক্তব্যকে তালিবানের (Taliban) মুখ্য সচিবের (Chief Secretary) বক্তব্য বলে চালিয়ে একটা ভিডিও দেখানো হচ্ছে।
ভিডিওটিতে ইসলামি পণ্ডিত খালিদ মেহমুদ আব্বাসি বিজেপি এবং আরএসএস-এর সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলছেন। ২০২১ সালের অগস্টে মার্কিন সেনা চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানে তালিবানের দখল কায়েম হওয়ার প্রেক্ষিতে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।
তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, "আরএসএস, সংঘ পরিবার এবং বিজেপি ভারতের অতিশয় শক্তিশালী সংগঠন এবং তাদের ঔরঙ্গজেবের ক্ষমতার সঙ্গে তুলনা করা যায়। ওরা মনে করে, ভারত হিন্দু দেবদেবী ও তাদের অনুগামীদের দেশ এবং যারা তা মানে না, তাদের ভারতে থাকবার অধিকার নেই।"
ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করে ইংরেজিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে— "তালিবান এটা মেনে নিয়েছে যে, আরএসএস ও বিজেপি ভারতে খুবই শক্তিশালী এবং যতদিন বিজেপি আছে, ততদিন কেউ ভারতকে আক্রমণ করতে পারবে না। তাই প্রথমেই বিজেপিকে হটাতে হবে। তালিবানের মুখ্য সচিবের এই বক্তব্য ভিডিওটিতে শুনুন। আরএসএস-কে নিয়ে গর্বিত...পুরো ভিডিওটা শুনুন..."
একই বিবরণ সহ হিন্দি ও বাংলা ক্যাপশনেও ফেসবুকে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে ।
এ রকমই একটি হিন্দি ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "তালিবান নাকি এটা স্বীকার করে নিয়েছে যে, ভারতে আরএসএস ও বিজেপি অত্যন্ত শক্তিশালী। তালিবানের মুখ্য সচিব নিজেই এ কথা বলেছেন"
(মূল হিন্দিতে ক্যাপশন: तालिबान ने यह सिद्ध कर स्वीकार किया कि भारत में RSS और BJP ज्यादा ताकतवर है इस विडियो को देखिए कि तालिबान के मुख्य सचिव ने क्या कहा)
তথ্য যাচাই
বুম ইউটিউবে খালিদ মেহমুদ আব্বাসি অফিশিয়াল নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি শেয়ার হতে দেখে। ভাইরাল ভিডিওটি ১৭ মিনিটের একটি দীর্ঘতর ভিডিওর অংশ, যেটি ৩ অগস্ট ২০২১ আপলোড করা হয়। ভিডিওটির শিরোনাম, "হিন্দুস্তানের উত্তরোত্তর খারাপ পরিস্থিতি—খালিদ মেহমুদ আব্বাসি"।
ভিডিওটির ৫১ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ২৩ সেকেন্ড পর্যন্ত আব্বাসিকে আরএসএস ও বিজেপির সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে শোনা গেছে। দেখা যাচ্ছে, এটি রেকর্ড করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ১ মার্চ।
ভিডিওটিতে ইসলামাবাদের নয়া স্টুডিওর লোগো দেখা যাচ্ছে। এই নয়া স্টুডিও ইসলামি বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিও, বক্তৃতা ও আলোচনার আয়োজন ও প্রচার করে থাকে। আব্বাসির পরিচয় দিতে গিয়ে নয়া স্টুডিও লিখেছে— "আব্বাসি হলেন পাকিস্তানের সবচেয়ে খ্যাতনামা ইসলামি পণ্ডিত। তিনি প্রয়াত ড. ইসরার আহমেদের ছাত্র।"
বুম দেখেছে, নয়া স্টুডিও এই একই ভিডিও ২০২০ সালের ৬ অগস্ট আপলোড করেছে। ভিডিওটির শিরোনাম, হিন্দুদের প্রকৃত এজেন্ডা কী—খালিদ মেহমুদ আব্বাসি।
বুম ফেসবুক এবং টুইটারে আব্বাসির সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টও দেখেছে এবং তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের ফেসবুক পেজও দেখেছে, কিন্তু কোথাও আব্বাসিকে তালিবানের নেতা বলে শনাক্ত করা হয়নি।
ফেসবুকে তাঁর নামের পেজে আব্বাসি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে, "ড. ইসরার আহমেদের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক চিন্তাধারার একনিষ্ঠ অনুগামী ও উত্তরসূরি বলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সুব্বান-উল-মুসলিমিন নামে একটি পুনরুত্থানবাদী ইসলামি আন্দোলনের সুরার প্রধান হিসাবে রয়েছেন। এই আন্দোলন আল্লামা ইকবাল, মৌলানা মউদুদি এবং ইসরার আহমেদের ধর্মীয় ও সামাজিক চিন্তার অনুপ্রেরণাতেই চলে থাকে।"
এর পর আমরা আব্বাসির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি সরাসরি তালিবানের সঙ্গে কোনও রকম সংশ্রবের কথা অস্বীকার করেন। বুমকে তিনি জানান— "আমি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে থাকি। যদিও আমি তালিবানের আফগানিস্তান দখলের ঘটনায় সুখী, তথাপি তালিবানের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।" তিনি বুমকে আরও জানান—
"ভিডিওটি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বালাকোটে ভারতীয় বিমাবাহিনীর হামলার পর রাওয়ালপিণ্ডিতে দেওয়া একটি বক্তৃতা। তারই একটি অংশ ছেঁটে নিয়ে ভুয়ো দাবি সহ সোশাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল করা হয়েছে।"
বিবিসি-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে তালিবানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জনৈক হিবাতুল্লা আখুন্দজাদা, যিনি ২০১৬ সালের মে নাস থেকে তালিবান বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। তালিবানের পাকিস্তানি শাখা তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের প্রধান হিসেবে ধরা হয় মুফতি নুর ওয়ালি মেহসুদ-কে। ২০১৩ সালে হাকিমুল্লা মেহসুদের মৃত্যুর পর নেতৃত্ব আসে মেহসুদের হাতে।
আফগানিস্তান তালিবান দখল করার করার সময় থেকেই তা নিয়ে রকমারি ভুয়ো খবর ও ভিডিওর পর্দাফাঁস করে চলেছে বুম। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখতে নিচের থ্রেডটি দেখতে পারেন।