একটি পারবারিক বিবাদকে ঘিরে, কয়েকজনকে এক পুরুষ ও দু'জন মহিলাকে আক্রমণ করতে দেখা যাচ্ছে রাজস্থানে (Rajasthan) তোলা একটি ভিডিওতে। কিন্তু মিথ্যে সাম্প্রদায়িক রঙ চড়িয়ে ভিডিওটি এই দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, মুসলমানরা (Muslim) এক হিন্দুকে (Hindu) পিটিয়ে মেরেছে।
বুম দেখে, ভিডিওটি রাজস্থানের যোধপুরে তোলা। তাতে একটি পারিবারিক বিবাদকে কেন্দ্র করে ওই পরিবারের কিছু সদস্য তাঁদের আত্মীয়দের মারছেন।
বুম যোধপুর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা ওই ঘটনার সঙ্গে কোনও সাম্প্রদায়িক যোগের কথা অস্বীকার করেন। তাঁরা বলেন, অভিযুক্ত ও আক্রান্তরা উভয়েই খাতিক সম্প্রদায়ভুক্ত এবং একই পরিবারের সদস্য।
ওই অস্বস্তিকর ভিডিওটিতে কয়েকজনকে লাঠি দিয়ে এক রক্তাক্ত ব্যক্তিতে পেটাতে দেখা যায়। তারপর দু'জন মহিলা, যাঁরা পালানোর চেষ্টা করছিলেন, তাঁদেরও মারে ওই লোকগুলি।
ভিডিওটির সঙ্গে দেওয়া একটি ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, "মুসলমানরা কোনও কিছুকেই ভয় পায় না। কারণ, তাদের কংগ্রেস পার্টি রাজস্থানে রাজ করছে। ঘটনার পাঁচ দিন পরেও কেউ গ্রেফতার না হওয়ায়, (অশোক) গেহলত'র প্রশংসা করা হচ্ছে। কারণ, অভিযুক্তরা সকলেই মুসলমান।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: मुल्लों को कोई डर नहीं क्योंकि राजस्थान में इनकी कांग्रेस सरकार है| जय हो #गहलोत_राज_जंगलराज अभी तक 5 दिन हो गए एक भी गिरफ़्तारी नहीं क्योंकि मारने वाले मुस्लिम हैं)
ভিডিওর দৃশ্যগুলি ভয়াবহ হওয়ায়, আমরা সেটি এখানে দিইনি।
একটি বড় ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, আক্রান্তের নাম যোগেশ যাতব। তাঁকে খুন করে রশিদ নামের এক ব্যক্তি। "রাজস্থানে, যোগেশ যাতব নামের এক নির্দোষ হিন্দুকে রশিদ ও তার দলবল পিটিয়ে মেরেছে। এই গণপিটুনি কংগ্রেস-শাসিত রাজস্থানে ঘটে। কিন্তু এখানে সবাই চুপচাপ। কারণ, মৃত ব্যক্তি একজন হিন্দু আর অভিযুক্তরা হল 'শান্তিপ্রিয়'।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: मुल्लों को कोई डर नहीं क्योंकि राजस्थान में इनकी कांग्रेस सरकार है | जय हो गहलोत अभी तक 5 दिन हो गए एक भी गिरफ़्तारी नहीं क्योंकि मारने वाले मुस्लिम हैं| अखलाक, पहलू खान, तबरेज अंसारी की लिंचिंग पर छाती कूटने वाले आज अफीम चाटकर सो गए क्या? राजस्थान में एक निर्दोष हिन्दू योगेश जाटव की राशीद और उसके साथियों ने पिंट पिंट कर हत्या कर दी| लिंचिंग कांग्रेस शासित राज्य में हुई है, मरने वाला हिन्दू और मारने वाला शान्तिदूत इस लिए सन्नाटाराजस्थान में एक निर्दोष हिन्दू योगेश जाटव की राशीद और उसके साथियों ने पिंट पिंट कर हत्या कर दी| लिंचिंग कांग्रेस शासित राज्य में हुई है, मरने वाला हिन्दू और मारने वाला शान्तिदूत इस लिए सन्नाटा)
আরও পড়ুন: না, এই ছবিটি আফগান বিমানচালিকা সফিয়া ফিরোজির গণপিটুনির দৃশ্য নয়
তথ্য যাচাই
ভাইরাল দাবিতে যোগেশ যাতব নামটির উল্লেখ থাকায়, আমরা ওই নামটি দিয়ে সার্চ করি। তার ফলে, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১-এ, প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাই। তা থেকে জানা যায় যে, ওই নামের এক ব্যক্তিকে রাজস্থানের আলওয়ার জেলায় মারা হয়। খবরে প্রকাশ, ১৯ বছর বয়সের দলিত যুবক যোগেশ যাতব মোটরসাইকেলে করে যা্ওয়ার সময়, এক মহিলাকে ধাক্কা দিলে, ওই মহিলা আহত হন। তাই দেখে, এক উত্তেজিত জনতা যাতবকে আক্রমণ করে। যাতবকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, কিন্তু তিন দিন পরে উনি মারা যান।
আলওয়ারের পুলিশ সুপারের কথা উদ্ধৃত করে 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' লেখে, "প্রাথমিক তদন্ত থেকে জানা গেছে যে, ১৫ সেপেটম্বর, বাইক আরোহী যোগেশ যাতব এক মহিলাকে (মুবিনার মেয়ে) ধাক্কা মরে। এই ঘটনায়, যাতবের মাথায় আঘাত লাগে। এবং মহিলাটিও আহত হন। ওই মহিলা আরও দু'তিন জনের সঙ্গে বাজরা তুলে যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন ওই দুর্ঘটনা ঘটে। ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্যরা এবং রাজ্যে বিরোধী শক্তিরা ঘটনাটিকে গনপিটুনি বলে দাবি করলে, সেটি খবরের শিরোনামে আসে।
যাতব নামের ওই ব্যক্তি সংক্রান্ত কোনও ভিডিও বা ছবি সার্চ করে পাওয়া যায়নি। ফলে, ভাইরাল ভিডিওটি যে ওই দুর্ঘটনা সংক্রান্ত নয়, তা স্পষ্ট হয়ে যায়।
'ম্যান বিটেন ইন রাজস্থান' (রাজস্থানে একটি লোককে মারা হল) – এই কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে, 'দৈনিক ভাস্কর'এর এক সংবাদদাতার টুইট দেখতে পাই আমরা। তাতেও উনি ভাইরাল-হওয়া ভিডিওটি শেয়ার করে ছিলেন। সেই রিপোর্টে উনি জানান যে, ঘটনাটি ঘটে যোধপুরে। দৈনিক ভাস্করের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনাটি ১৯ সেপ্টেম্বর, মহা মন্দির থানার এলাকার মধ্যে ঘটেছিল। খাতিক সম্প্রদায়ভুক্ত একই পরিবারের দুই দলের মধ্যে ব্যক্তিগত বিবাদকে কেন্দ্র করে একে অপরকে আক্রমণ করে। দৈনিক ভাস্কর-এর প্রতিবেদনে যে ছবি আছে, তার সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য মিলে যায়।
এরপর বুম মহা মন্দির থানার স্টেশন হাউস অফিসার লেখরাজ সিহাগ'র সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও সম্পর্কের কথা উনি উড়িয়ে দেন। উনি বলেন, অভিযুক্ত ও আক্রান্ত উভয়ই একই পরিবারের সদস্য এবং তাঁরা একই সম্প্রদায়ভুক্ত। "১৯ সেপ্টেম্বর ঘটনাটি ঘটে। আগের দিনের একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে, ওই পরিবারের কিছু লোক তাঁদের আত্মীয়দের আক্রমণ করে বসেন। ঝগড়া হাতের বাইরে চলে গেলে, একটি গ্রুপ তাদের আত্মীয়দের নৃশংসভাবে মারে," বলেন সিহাগ। উনি আরও বলেন, "দু'পক্ষের লোকজনই হিন্দু। তফসিলি জাতি/উপজাতি অন্তর্গত খাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য তাঁরা। তাঁরা একই পারিবারের লোক এবং একই এলাকায় থাকেন।"
উনি বুমকে অভিযুক্তদের নামও জানান। "অভিযুক্তরা হলেন, সোনু, সুরেশ, রবি, দেবীলাল, সন্তোষ, বিকাশ, ভরত, বিশাল, ভবানী, ঘনশ্যাম ও পুখরাজ।" বুমকে উনি আরও বলেন, আক্রান্তরা হলেন, অজয়, কাঞ্চন, কৈলাশ, কমলেশ ও শান্তি। "ভাইরাল ভিডিওটিতে যে তিন আক্রান্তকে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা হলেন, কমলেশ, শান্তি ও কাঞ্চন," বলেন সিহাগ। উনি বলেন, অভিযুক্ত ও আক্রান্তদের পদবি হল খাতিক।
যোধপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ইস্ট) ভরত ভূষণ যাদব একই কথা বলেন। "অভিযুক্তরা মুসলমান ও ওই ঘটনা সাম্প্রদায়িক এই দাবিগুলি মিথ্যে। ভিডিওতে যোগেশ যাতব'র যে ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটির সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।"
আরও পড়ুন: না, গোহত্যার প্রতিবাদ করা ব্যক্তি কাশ্মীরি পণ্ডিত নন