আরজি কর হাসপাতালে (RG Kar Hospital) এক মহিলা চিকিৎসকের নির্যাতন ও খুনের ঘটনার তদন্তে সিবিআইয়ের (CBI) উপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে দাবি করে সম্প্রতি এক চিঠি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
নয়াদিল্লির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উদ্দেশ্যে লেখা ওই চিঠিতে সিবিআইয়ের কলকাতা শাখার জনৈক আধিকারিকের নাম করে লেখা হয় আরজি কাণ্ডের তদন্তে রাজনৈতিক চাপ আসায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এই তদন্ত থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে চায়।
উক্ত চিঠি অনুযায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে এমন অনুরোধ জানিয়ে চিঠিটি প্রেরণ করেন সিবিআইয়ের কলকাতা ক্রাইম ব্রাঞ্চের ডিআইজি ডাক্তার আকাশ নাগ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ওই চিঠিতে সিবিআইয়ের তথাকথিত আধিকারিক ডাক্তার আকাশ নাগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে আরজি কর কাণ্ডের তদন্ত থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আর্জি জানান। চিঠিটিতে কোনও প্রমাণ ছাড়াই এই হত্যাটি সুচিন্তিতভাবে হাসপাতালের কর্তব্যরত চারজন ডাক্তারের সরাসরি যোগসাজসে ও রাজনৈতিকভাবে জড়িত ব্যক্তিদের প্রভাবে করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, হাসপাতালে এই চিকিৎসক খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই নারীসুরক্ষা নিয়ে প্রশ্নের মুখে কলকাতা পুলিশ ও মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার। গত ৯ অগাস্ট আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় ৩১ বছর বয়সী মহিলা ওই চিকিৎসকের দেহ। এরপর থেকেই চিকিৎসক মৃত্যুর এই ঘটনা নিয়ে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে নানা গুজব ও বিভ্রান্তি।
সিবিআইয়ের কলকাতা শাখার আধিকারিকের চিঠি দাবিতে ছড়ান এমনই এক সমাজমাধ্যমে করা পোস্ট নিচে দেখতে পাওয়া যাবে।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখতে এখানে।
তথ্য যাচাই
সমাজমাধ্যমে এই চিঠি ভাইরাল হলে এবিষয়ে ২০ অগাস্ট, ২০২৪ তারিখে বিবৃতি জারি করে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এই চিঠির বিষয়ে জানায় ডাক্তার আকাশ নাগ নামের উক্ত পদের কোনও ব্যক্তি তাদের সংস্থাতেই নেই।
এছাড়াও ওই বিবৃতিতে সিবিআই স্পষ্টভাবে জানায়, আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক খুনের ঘটনাটির তদন্ত দিল্লিতে সিবিআইয়ের সদর দফতরের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে, কলকাতার নয়।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখতে এখানে।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সেই বিবৃতিতে জানায়, "সোশ্যাল মিডিয়া তথা হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদির মাধ্যমে কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবকে উদ্দেশ্য করে ডাঃ আকাশ নাগ নামের একজন ব্যক্তির নাম করে ভুয়ো এক চিঠি প্রচারিত হচ্ছে যেখানে তিনি নিজেকে ডিআইজি, যুগ্ম পরিচালক, ক্রাইম ব্রাঞ্চ, কলকাতার আধিকারিক ব্যানার "সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেলের অফিস, দুর্নীতি দমন শাখা, কলকাতা" হিসেবে দাবি করেছেন। স্পষ্টভাবে জানান হচ্ছে যে চিঠিটি ভুয়ো। দিল্লির সিবিআই সদর দফতর এই মামলার তদন্ত পরিচালনা করছে। তাছাড়া, ডাঃ আকাশ নাগ, ডিআইজি, জয়েন্ট ডিরেক্টর, ক্রাইম ব্রাঞ্চ, এসিবি, কলকাতার নাম ও পদমর্যাদায় সিবিআইতে কোনও আধিকারিক নেই। উক্ত চিঠির বিষয়বস্তু মিথ্যা এবং তাই সেটি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করা হয়েছে।"
"সাধারণ জনসাধারণ এবং সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের উল্লিখিত চিঠি বা অনুরূপ সন্দেহজনক বার্তা উপেক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এটি পুনর্ব্যক্ত করা হচ্ছে যে সিবিআই সমস্ত মানক পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করে ও পুঙ্খানুপুঙ্খ পেশাদারিত্বের সাথে মামলার তদন্ত পরিচালনা করছে," উক্ত বিবৃতিতে বলে সিবিআই।
বুম এক ফেসবুক পোস্টও খুঁজে পায় যেখানে ওই ভুয়ো চিঠি এবং ডাঃ আকাশ নাগ নামের এক লিঙ্কডইন প্রোফাইলের স্ক্রিনশট রয়েছে যেখানে ওই ব্যক্তি নিজেকে একজন 'সিনিয়র ফরেনসিক সায়েন্টিস্ট' হিসাবে বর্ণনা করার পাশাপাশি সিবিআই এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সেস, কলকাতার নাম তার 'বায়ো' অংশে উল্লেখ করেছেন।
উক্ত প্রোফাইলটি তখন থেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে।
আমরা ডঃ আকাশ নাগের একই নামে একটি এক্স প্রোফাইল খুঁজে পাই ও তাতে ওই একই ব্যক্তির ছবির উল্লেখও লক্ষ্য করি। আকাশ নিশ্চিত করে বলেন লিঙ্কডইন প্রোফাইলটি তার ও চিঠিটি ভাইরাল হওয়ার পরে তিনি তা নিষ্ক্রিয় করেন। ভাইরাল হওয়া ওই ভুয়ো চিঠি লেখার বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।
আকাশ আরও দাবি করেন যে তিনি সিবিআইয়ের কাছে ছয় মাস ফরেনসিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং বর্তমানে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে রোগী পরীক্ষা চালাচ্ছেন। ভাইরাল হওয়া চিঠির থেকে তার স্বাক্ষর আলাদা বলেও জানান তিনি।
তবে বুমের পক্ষে ভুয়ো এই চিঠির পিছনে তার জড়িত থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি।