একজন শিখকে (Sikh) এক দল লোক নির্মমভাবে মারধর (brutally thrashed) করছে, সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এ রকম দুটি ভিডিও এই বলে শেয়ার করা হচ্ছে যে, ঘটনাটি পাকিস্তানের (Pakistan)।
একটি খুব কাছ থেকে এবং অন্যটি খানিকটা দূর থেকে তোলা ভিডিও দুটিতে এক যুবককে দেখা যাচ্ছে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা একজন শিখকে অনবরত মারধর করতে, যখন চারপাশে ঘিরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদেরও কেউ-কেউ তাতে হাত লাগাচ্ছে। এরপরই দেখা যায়, নিগ্রহকারী যুবকটি ওই শিখের চুলের মুঠি ধরে টানছে, তার মুখে আঘাত করছে এবং তারপর চুল ধরে টেনে-হিঁচড়ে রাস্তার ওপর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বুম দেখলো, ভিডিওর সঙ্গে জানানো দাবিটি ভুয়ো এবং ঘটনাটি মোটেই পাকিস্তানের নয়, বরং ভারতেরই পাঞ্জাব রাজ্যের লুধিয়ানা জেলায় ঘটেছে।
অথচ ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, "এই হলো পাকিস্তানে সর্দারদের প্রকৃত অবস্থা, আর সর্দাররা সেই মোল্লাদের সাহায্য নিয়ে খলিস্তান বানানোর খোয়াব দেখছে।"
নীচে ভিডিও পোস্টটির একটি স্ক্রিনশট দেওয়া হলো। টুইটারেও এই একই ভিডিও একই ক্যাপশন সহ ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওর দৃশ্য নৃশংস হওয়ায় আমরা তার লিংক বা সংযোগ সূত্র এখানে সংযুক্ত করিনি।
কাছ থেকে তোলা অন্য ভিডিওটির স্ক্রিনশট নীচে দেওয়া হলো।
তথ্য যাচাই
বুম টুইটারে খোঁজখবর চালিয়ে বেশ কয়েকটি পোস্ট উদ্ধার করেছে, যাতে এই নির্মম অত্যাচারের ঘটনাটি লুধিয়ানার বলে জানানো হয়েছে। এ রকমই একটি টুইট নীচে দেখুন।
এই সূত্র অনুসরণ করেই আমরা পাঞ্জাবি ভাষায় খোঁজখবর লাগিয়ে দেখি ৫ মার্চ ২০২২ প্রকাশিত একটি পিটিসি সংবাদ-প্রতিবেদন যাতে ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে এবং ভাইরাল হওয়া ভিডিওর স্ক্রিনশটও দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে ঘটনাটিকে লুধিয়ানার টিব্বা রোডের ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়।
আমরা একই দিনে পিটিসি-র সরকারি ইউ-টিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি সংবাদ-বুলেটিনও দেখেছি। তাতে ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্যও ধরা রয়েছে এবং ঘটনাটি যে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় ঘটছে, সে কথারও উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বর্ণিত তথ্য সঠিক কিনা জানতে বুম টিব্বা রোড থানার স্টেশন হাউস অফিসার নরদেব সিংহের সঙ্গেও যোগাযোগ করে। তিনি নিশ্চিত করেন যে, ভাইরাল ভিডিওতে দেখানো দৃশ্যগুলি পাকিস্তানের নয়, লুধিয়ানা জেলার টিব্বা রোডে ঘটা ঘটনার দৃশ্য।
"একটা মোবাইল ফোন চুরি করার দায়ে লোকেরা ওই ব্যক্তিকে ওভাবে মারছিল। পুলিশ সব হামলাকারীকেই গ্রেফতার করেছে এবং জেলেও পাঠিয়েছে"—বললেন নরদেব সিংহ।
একই সঙ্গে তিনি ঘটনাটির মধ্যে কোনও সাম্প্রদায়িক ব্যাপারও খুঁজে পাননি।
আরও পড়ুন: মিথ্যে দাবি: অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নের জন্য সাংবাদিককে মারল উগান্ডা পুলিশ