মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরে (Berhampore) এক ব্যক্তি একজন মহিলাকে ছুরি দিয়ে বারবার আঘাত করছেন, এমনটাই দেখা যাচ্ছে একটি অস্বস্তিকর ভিডিওতে। ভিডিওটি এখন এই মিথ্যে দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে যে, আততায়ী হলেন মুসলমান। এবং মহিলা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করায়, তিনি তাঁকে হত্যা করেন।
বুম দেখে, ভাইরাল দাবিটি মিথ্যে। এবং ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও যোগ নেই। বহরমপুর পুলিশের ইনস্পেকটর রাজা সরকার নিশ্চিত করে বুমকে জানান যে, প্রধান অভিযুক্ত ও নিহত মহিলা উভয়ই হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত।
তিরিশ সেকেন্ডের ওই ক্লিপে, লাল জামা পরা এক ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। তাঁর এক হাতে রয়েছে একটি ছুরি আর অন্য হাতে ধরে আছেন মোবাইল ফোন। ওই লোকটিকে বেশ উত্তেজিত দেখায়। তিনি চিৎকার করে কাউকে কিছু বলছেন, যিনি রয়েছেন ভিডিওটির ফ্রেমের বাইরে। এবং পাশেই এক মহিলার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
ওই ভিডিওটির সঙ্গে একটি ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "ইসলামিক স্টেট অফ বেঙ্গল-এ আপনাকে স্বাগত। মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে লাভ-জেহাদের ঘটনা। হিন্দু মেয়েটি তার শান্তির ধর্ম গ্রহণ করতে চায়নি। তাই সে তাকে জনসমক্ষে ছুরি মারলো।
ভিডিওটিতে হিংসার পুঙ্খানুপুঙ্খ দৃশ্য থাকার কারণে, বুম সেটি এখানে দেয়নি।
পোস্টটির আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র ওই একই ভিডিও তাঁর টুইটে উদ্ধৃত করেন এবং মিথ্যে দাবি করেন যে ওই হত্যা হল 'লাভ-জেহাদের' ঘটনা।
ওই টুইটটি পরে ডিলিট করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: না, কাঁচা বাদামের স্রষ্টা ভারতীয় রেলে চাকরি পাননি
তথ্য যাচাই
একটি টুইটে নিহত মেযেটিকে 'সুতপা চৌধুরি' বলে শনাক্ত করা হয়। তাঁর নামটি দিয়ে ইউটিউব-এ কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে, ৩ মে, ২০২২ ওই হত্যার ওপর নিউজ-১৮ বাংলার প্রকাশিত একটি ভিডিও দেখতে পাই আমরা।
ওই রিপোর্টের দৃশ্য ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্যের সঙ্গে মিলে যায়।
নিউজ-১৮ বাংলা'র রিপোর্টে, ওই হত্যার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার যোগাযোগ ছিল বলে কোনও উল্লেখ করা হয়নি। রিপোর্টটিতে মূল অভিযুক্তকে সুশান্ত চৌধুরি নামে শনাক্ত করা হয়।
হিন্দুস্থান টাইমস-এর একটি প্রতিবেদনে নিহত ও অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করা হয়।
হিন্দুস্থান টাইমস-এর রিপোর্টে বলা হয়, "মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে, মেয়েদের একটি হোস্টেলের সামনে, এক যুবক ২০ বছরের এক মহিলাকে ছুরি মেরে হত্যা করে। নিহতকে সুতপা চৌধুরি বলে শনাক্ত করা হয়। তিনি ছিলেন কলেজ ছাত্রী। ২২ বছর বয়সী আততায়ী সুশান্ত চৌধুরিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
পুলিশকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্তের সঙ্গে ওই মহিলার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ওই মহিলা সেই সম্পর্ক শেষ করে দিয়ে বহরমপুরে পড়াশোনা করতে চলে আসেন।
বুম বহরমপুর পুলিশের ইনস্পেক্টর রাজা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। লাভ-জেহাদের অভিযোগটি তিনি উড়িয়ে দেন।
"ওই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও সম্পর্ক নেই," সরকার বুমকে বলেন। "প্রধান অভিযুক্ত ও আক্রান্ত উভয়ই হিন্দু।"
আরও পড়ুন: রাস্তায় আজানের পুরনো ভিডিও ছড়াল লাউড স্পিকার রদ প্রসঙ্গে