এক দল লোক ও এক যুবকের সঙ্গী একটি স্কুল ইউনিফর্ম (school uniform) পরা বালিকাকে (Girls) নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় সাম্প্রদায়িক রঙ (communal spin) চড়িয়ে ভাইরাল করা হচ্ছে যে, এটি লাভ-জেহাদের (love jihad) একটি গল্প।
বুম দেখলো যে, গোটা গল্পটা সাজানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধির নামে তৈরি।
সম্প্রতি এই ধরনের বেশ কয়েকটি সাজানো গল্পের ভিডিওর পর্দাফাঁস করেছে বুম, যেগুলি সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। যদিও যারা ভিডিওগুলি বানায়, তারা শিক্ষামূলক বা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এগুলি তৈরির কথা বলে, কিন্তু পরবর্তীতে এগুলির অংশবিশেষ কাটছাঁট করে সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে সোশাল মিডিয়ায় তা ভাইরাল করার ক্ষতিকর প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
৫ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে এক দল লোককে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তির কলার ধরে রয়েছে যাতে সে পালাতে না পারে এবং একজন মোবাইল ফোনে ঘটনাটির ভিডিও তুলে রাখছে। লোকগুলি স্কুল ইউনিফর্ম পরা এক বালিকাকে জেরা করছে। পরে নিজেকে স্কুলের প্রিন্সিপাল বলে পরিচয় দেওয়া এক মহিলাকেও দেখানো হচ্ছে, যিনি ঘটনাটির ছবি তুলতে নিষেধ করছেন।
ওই মহিলা লোকগুলির কাছে ক্ষমা চাইছেন এবং তাঁর কক্ষের ভিতরে গিয়ে গোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার প্রস্তাবও দিচ্ছেন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করে হিন্দিতে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "দেখুন, কীভাবে মুসলিমরা লাভ জেহাদের নামে সরলমতি হিন্দু মেয়েদের প্রলুব্ধ করছে।"
পোস্টটি দেখুন এখানে।
একই ভুয়ো দাবি নিয়ে শেয়ার করা ভিডিওর আর একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
আরও পড়ুন: প্রেমিকার জন্য উপহার 'দাঁত বাঁধানো নেকলেস'? ভুয়ো দাবিতে ছড়াল কৌতুক
তথ্য যাচাই
বুম আগেও এই ধরনের সাজানো ভিডিওর পর্দাফাঁস করেছে। আমরা দেখেছি, সচরাচর এই ধরনের ভিডিওগুলোয় সচেতনতা বৃদ্ধির কিংবা শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যর অজুহাত তৈরি করা হয়। তাই এগুলির ক্যাপশনের বয়ানও থাকে একই রকম। ফেসবুকে আমরা 'মা-বাপ ধ্যান রাখে', হিন্দিতে এই মূল শব্দগুলি বসিয়ে অনুসন্ধান করে ২৭ নভেম্বর ২০২১ দীপিকা শাহের আপলোড করা একটি ভিডিওর খোঁজ পাই, যেটি ভাইরাল ভিডিওর চেয়ে সামান্য বড়ো।
দীপিকার ফেসবুক পেজে তাঁকে নাম-করা ব্যক্তিত্ব বলা হয়েছে।
৫ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটির হিন্দি ক্যাপশনে লেখা, "খেয়াল রাখুন, স্কুলে যাওয়ার নাম করে আপনার মেয়ে ঠিক কোথায় যাচ্ছে !মা-বাবারা সতর্ক হোন!"
এই ভিডিওটি ১ কোটি ২০ লক্ষ লোক দেখে ফেলেছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির দীর্ঘতর বয়ানে ৫ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের মাথায় একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া আছে— "এই ভিডিওটি সাজানো গল্প এবং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যেই এটি বানানো হয়েছে। যদি এই ভিডিও কোনও ভাবে কারও ক্ষতি করে, তবে তা ঘটনাচক্রের ব্যাপার, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।"
বুম দীপিকা শাহর প্রোফাইল পরীক্ষা করে এ ধরনের আরও অনেকগুলি সাজানো ভিডিওর সন্ধান পেয়েছে। ওর ফেসবুক পেজে ১৮ ডিসেম্বর পোস্ট হওয়া একই ধরনের একটি ভিডিও গল্পে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা স্কুল ইউনিফর্ম পরা একই মেয়েটিকে দেখা গেছে।
সেই ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
বুম সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেজটির সঙ্গে যোগাযোগও করেছে, এবং তার জবাব পেলেই এই প্রতিবেদনটি তদনুযায়ী হালনাগাদ করা হবে।
আরও পড়ুন: জন ফোর্ডের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ মিথ্যে দাবিতে ছড়াল মার্কিন ব্যক্তির ছবি