পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া (Howrah) জেলায় রাম নবমীতে (Ram Navami) দাঙ্গার মতো পরিস্থিতিতে লোকজনকে পাথর ছোঁড়ার (stone pelting) একটি অস্বস্তিকর ভিডিওত মিথ্যে দাবি সহ সোশাল মিডিয়ায় মধ্যপ্রদেশের (মধ্যে Pradesh) খারগোনের (Khargone) ঘটনা বলে দাবি করা হচ্ছে।
৩০ মার্চ, ২০২৩, রাম নবমীর দিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে হিংসাত্মক ঘটনার খবর আসে। সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। তার ফলে, এই বছরের উৎসবকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ায়। কিন্তু খারগোন-এ ওই রকম কোনও ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, উৎসবের শোভাযাত্রা থমকে গেছে, এবং এক দল লোক সেটিকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ছে। ভিডিওটি টুইটারে এই ক্যাপশন সমেত শেয়ার করা হচ্ছে, “রাম নবমীর দিন হিংসাত্মক ঘটনার জন্য, মধ্যপ্রদেশের খারগোন-এ, ৭০ জন সন্ত্রাসবাদী পাথর নিক্ষেপকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
২০২২ সালে রাম নবমীকে কেন্দ্র করে হিংসার কেন্দ্রবিন্দু ছিল খারগোন। গত বছর এপ্রিলে, সেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ালে, বেশ কিছু বাড়িঘর, দোকান ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
টুইটটি দেখুন এখানে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখে, ৩০ মার্চ একাধিক টুইটার ব্যবহারকারী ওই ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করেন যে, সংঘর্ষের ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গের।
ওই সূত্র ধরে আমরা প্রাসঙ্গিক হিন্দি কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করি। তার ফলে, দেখা যায়, এবিপি নিউজ-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে ৩০ মার্চ, ২০২৩-এ হাওড়ায় পাথর ছোঁড়ার দৃশ্য।
টুইটটি দেখুন এখানে।
সংবাদ বুলেটিনটিতে, পশ্চিমবঙ্গে পাথর ছোঁড়ার দৃশ্য দেখানো হয়। বলা হয়, হাওড়ায়, ৩০ ও ৩১ মার্চ, পর পর দু’দিন পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। ওই প্রতিবেদনে ভাইরাল ভিডিওটির একটি অংশ দেখানো হয়। বলা হয়, ৩০ মার্চ, রাম নবমী উদযাপনের সময়, ওই অঞ্চলে হিংসার দৃশ্য সেটি।
ঘটনাস্থল থেকে পাঠানো এবিপি নিউজ-এর আরও একটি প্রতিবেদন আমরা দেখতে পাই। হাওড়ার শিবপুর অঞ্চলে যে ভাঙচুর চালানো হয়, তার ছবি দেখানো হয় তাতে। ওই প্রতিবেদনে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ৩০ মার্চ শোভাযাত্রা চলা কালে প্ররোচনামূলক স্লোগান দেওয়া হয়। তারপরই সংঘর্ষ বেধে যায়।
ভাইরাল ভিডিওটিতে বুম একটি দোকানের নাম দেখতে পায়। তাতে লেখা ছিল, ‘ঘোষেস আই ক্লিনিক’।
ওই নামটি সহ প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে, একটি ফেসবুক পেজ সামনে আসে। তাতে হাওড়ার শিবপুরে জিটি রোডের ওপর অবস্থিত ওই চোখের ক্লিনিকের একটি পুরনো ছবি ছিল।
ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করার জন্য আমরা দোকানটির সঙ্গে যোগাযোগ করি। ঘোষেস আই ক্লিনিক-এর একজন কর্মচারি আমাদের নিশ্চিত করে জানান যে, ঘটনাটি হাওড়ায় তাঁদের দোকানের সামনে ঘটে।
২ এপ্রিল, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের ক্রিমিন্যাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) হাওড়ায় রাম নবমী শোভাযাত্রর সময় যে হিংসার ঘটনা ঘটে, তার তদন্ত শুরু করেছে। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তা জানিয়েছে যে, পুলিশ আধিকারিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ও তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
রিপোর্টটিতে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীন কুমারকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়, “ওই হিংসাত্মক ঘটনা সংক্রান্ত পদক্ষেপে ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রুজু করা হয়েছে দু’টি মামলা।”
২০২২-এ খারগোন-এ কী ঘটেছিল?
আমরা বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনের সন্ধান পাই যাতে বলা হয়, ২০ এপ্রিল, ২০২২-এ, মধ্যপ্রদেশের খারগোন জেলায় বেশ বড় ধরনের পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। ওই লেখাগুলিতে বলা হয় রাম নবমীর শোভাযাত্রার ওপর পাথর ছোঁড়া হয়। এবং ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
১১ এপ্রিল, ২০২২ প্রকাশিত প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্টে বলা হয়, “জেলা সদর দপ্তরের কাছে, তালাব চৌক থেকে রাম নবমীর শোভাযাত্রা শুরু হলে, সেটিকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে।”
২ অগস্ট, ২০২২ প্রকাশিত কুইন্ট-এর রিপোর্টে বলা হয়, “মধ্যপ্রদেশের খারগোন শহরে রাম নবমীর শোভাযাত্রার সময় যে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ায়, তার পরিপ্রেক্ষিতে, ৩১ জুলাই, সোমবার, রাজ্য পুলিশ নাসুল্লাহ খানের ৩০ বছর বয়সী ছেলে সমীরুল্লাহ খানকে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ: ওই হিংসার পেছনে তিনিই ছিলেন মাস্টারমাইন্ড।”