অসমের (Assam) জোড়হাটের একটি সরকারি স্কুলে 'গুণোৎসব' অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়, সকলকে প্রার্থনায় সমবেত হওয়ার জন্য একটি ছাত্রকে আজান দিতে শোনা যাচ্ছে ভিডিওতে। কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় ভিডিওটি এই বলে শেয়ার করা হচ্ছে যে, ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়খণ্ডে।
একটি উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে একটি ছাত্রকে আজান দিতে শোনা যাচ্ছে ওই ভিডিওটিতে। আর শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে তাতে।
খবরে প্রকাশ, সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায় একটি স্কুলে মুসলমান পড়ুয়াদের সংখ্যা বেশি হওয়ায়, সেখানে রবিবারের বদলে শুক্রবারকে ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়। ভিডিওটি ওই ঘটনার পটভূমিতে শেয়ার করা হচ্ছে। অন্য একটি সম্পর্কহীন ঘটনায়, রাজ্যের গরহওয়া জেলার স্কুলের শিক্ষকরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন যে, প্রার্থনার সময় শরিয়তি ও ইসলামী প্রথা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন জেলা প্রশাসনের কাছে তা জানতে চেয়েছে। সে সম্পর্কে এখানে পড়ুন।
বুম দেখে ভিডিওটি অসমের জোড়হাটে হেমলাই জ্ঞান বিকাশ প্রাথমিক স্কুলে তোলা। আমরা ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রণব অরনধরা'র সঙ্গে যোগাযোগ করলে, উনি জানান যে ঘটনাটি তাঁর স্কুলেই ঘটেছে।
শেয়ার করা ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে: "ঝাড়খণ্ডের একটি গ্রামে, যেখানে জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশই হলেন মুসলমান, সেখানে হিন্দু বাচ্চাদেরও ইসলামীয় প্রার্থনা করতে হয়। কী হচ্ছে?" সম্পাদনা করে ভিডিওটিতে একই ধরনের হিন্দি ক্যাপশনও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
(হিন্দিতে লেখা আসল ক্যাপশন: झारखंड 75% मुस्लिम जनसंख्या के गाँवकी स्कूल में हिंदू छात्रोंको भी जबरन अल्लाहकी इबादत-इस्लामिक राज्य आ रहा है ???! झारखंडके 75% मुस्लिम जनसंख्याके गाव की स्यूला हिंदू छात्रोंको भी अल्लाह की खिदमत दैनिक जागरण)
টুইটটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
যাচাইয়ের জন্য ওই একই ভিডিও বুমের হেল্পলাইনেও(+৯১ ৭৭০০৯০৬৫৮৮) আসে।
আরও পড়ুন: অমিত শাহের হায়দরাবাদ জনসভার কাটছাঁট করা পুরনো ভিডিও ভুয়ো দাবিতে ছড়াল
তথ্য যাচাই
ভিডিওটির একটি প্রধান ফ্রেম নিয়ে বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। তার ফলে, ৬ জুন, ২০২২-এ করা একটি টুইট আমাদের নজরে আসে। সেটিতে ওই একই ভিডিও ক্লিপ আপলোড করা হয়েছিল।
টুইটটিতে লেখা হয়, "বলা হচ্ছে, জোড়হাটের নকাছারির মারিয়ানোতে এটি হল জ্ঞান বিকাশ প্রাথমিক স্কুল। যা হচ্ছে তা বেশ উদ্বেগজনক। এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।"
অসমের শিক্ষা দফতরের পাঠানো একটি কারণ-দর্শনের নোটিসের ছবিও শেয়ার করেন ওই ব্যবহারকারী।
টুইটটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
'জোড়হাট আজান স্কুল' – অসমীয়াতে লেখা এই কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করি আমরা। তার ফলে, ইটিভি ভারত ও নিউজ-১৮ অসমীয়াতে আমরা ওই ঘটনা সম্পর্কে খবর দেখতে পাই।
ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, অসম সরকারের আয়োজিত গুণোৎসব-এর সময়, হেমলাই জ্ঞান বিকাশ প্রাথমিক স্কুলে ঘটনাটি ঘটে। সরকারি স্কুলের কাজের মূল্যায়ন করতে আসেন মন্ত্রী ও আধিকারিকরা। ওই মূল্যায়নের কাজকেই গুণোৎসব বলা হয়। গুণোৎসবে আধিকারিকদের দল স্কুল পরিদর্শনে যান। সেখানে তাঁরা প্রাথমিক শিক্ষার কাজ কেমন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখেন।
আমরা ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রনব অরনধরার সঙ্গে যোগাযোগ করি। উনি বলেন, ভিডিওটি তাঁর স্কুলেই তোলা। এবং ঘটনাটির জন্য, কর্তৃপক্ষ স্কুলের প্রশাসনকে কারণ দর্শানর নোটিস দিয়েছে।
তাছাড়া, অসমীয়া সংবাদ চ্যানেল 'টাইম৮ নিউজ', ৪ জুন, ২০২২, ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও আপলোড করে। তাতে অরনধরা বলেন, "গতকালের গুণোৎসবের অংশ ছিল সেটি। আমরা নোডাল অফিসার ও অন্যান্যদের অভ্যর্থনা করি। পড়ুয়ারা ব্যায়াম করে, শপথ নেয়। তারপর এক ছাত্রী একটি রাভা গান গায় (কলাগুরু বিষ্ণু প্রসাদ রাভার রচিত)। এরপর একটি ছাত্র হঠাৎই মঞ্চে উঠে আজান দিতে শুরু করে।"
আরও পড়ুন: জাপানের ইয়াহাগি নদী বাঁধের ভিডিও ভুয়ো দাবিতে ছড়াল ভারতের নয়া বাঁধ বলে