দুটি গ্রাফিক ভিডিওর (Video) একটি সেট, যার একটিতে দেখা যাচ্ছে যে বাঘেরা (Tiger) এক ব্যক্তির দেহকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে, আর অন্যটিতে দেখা যাচ্ছে ভয়ঙ্কর ভাবে আহত এক ব্যক্তির মুখ। এই দুটি ভিডিওকে একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে দাবি করা হয়েছে যে, ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গের (Sundarbans) সুন্দরবনের।
পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) দক্ষিণ ২৪ পরগণার কুলতলি অঞ্চলে একটি বাঘ ধরা পড়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই গ্রাফিক ভিডিওটি হোয়াটসঅ্যাপে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, একটি প্রাপ্তবয়স্ক রয়াল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনের অভয়ারণ্য থেকে বেরিয়ে ছোট একটি খাল পেরিয়ে ধানক্ষেতে লুকিয়ে ছিল। রয়াল বেঙ্গল টাইগার সাধারনত সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে দেখা যায়। প্রায় ১৬ ঘণ্টা খোঁজার পর গ্রামবাসী এবং বনকর্মীরা ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর রাতে বাঘটিকে ধরতে সক্ষম হন।
বুম যাচাই করে দেখে ভিডিওটিতে আসলে দুটি পুরনো ক্লিপ দেখা যাচ্ছে। একটিতে চিনে বাঘের আক্রমণে এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটিতে সম্পাদনা করে বাংলায় লেখা হয়েছে, "সুন্দরবন মোই পীঠের ঘটনা আজ তারিখ ১, ২০২১ দেবা রায়।"
যাচাই করার জন্য ভিডিওটি বুমের হোয়াটসঅ্যাপে হেল্পলাইনে আসে।
ভিডিওটি অস্বস্তিকর বলে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হল না।
তথ্য যাচাই
বুম নিশ্চিত ভাবে জানতে পেরেছে যে, দুটি পুরানো এবং পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কহীন ক্লিপ একসঙ্গে জুড়ে ভিডিওটি বানানো হয়েছে। আমরা লক্ষ করি যে, ভিডিও দু'টিতে আক্রান্তের প্যান্টের রঙ আলাদা। নীচে ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট দেওয়া হল যাতে বাঘের দ্বারা আক্রান্ত এক ব্যক্তি এবং মুখে বীভৎস চোট নিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা এক জনের ছবি দেখা যাচ্ছে।
আমরা ভিডিওটিকে দু'টি ভাগে ভাগ করে নিই, এবং তার পর দুটি ভিডিওরই গুরুত্বপূর্ণ অংশে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি।
প্রথম ভিডিও
এক ব্যক্তির উপর বাঘের আক্রমণের ভিডিওটির উপর আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চ করি এবং ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি ডেইলি মেলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। ওই প্রতিবেদনে চিনে বাঘের আক্রমণে এক ব্যক্তির মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "চিড়িয়াখানায় একটি বাঘ এক যুবককে তাঁর স্ত্রী ও পুত্রের সামনে নিজের খাঁচায় টেনে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে। ঘটনাটি সাংহাই থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে নিংবো শহরে অবস্থিত ইয়ংগার ওয়াইল্ড লাইফ পার্কে ঘটে।"
এই সূত্র ধরে আমরা ইউটিউবে সার্চ করি এবং একটি নিউজ বুলেটিন দেখতে পাই, যাতে একই ভিডিও একই তথ্যসমেত চিনের সরকারের অনুমোদিত মিডিয়া নেটওয়ার্ক সিজিটিএন'র চ্যানেলে ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি আপলোড করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ভিডিও
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা দেখতে পাই যে, ভিডিওটি একটি সন্দেহজনক ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। ওই ওয়েবসাইটে প্রচুর গ্রাফিক, পর্নোগ্রাফিক এবং কুৎসিত ভিডিও রয়েছে। ভিডিওটি ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১৮ মে আপলোড করা হয় সঙ্গে রাশিয়ান ভাষায় লেখা ক্যাপশন দেওয়া হয়। ওই ক্যাপশনের অনুবাদ, "দুর্ঘটনার পর মুখের কিছু অবশিষ্ট নেই।"
গ্রাফিক বিষয়বস্তু রয়েছে বলে ওই ওয়েবসাইটের লিঙ্ক এখানে দেওয়া হল না।
কমেন্ট অনুসারে একটি পথ দুর্ঘটনার পরের দৃশ্য ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে। এরকম একটি কমেন্টে লেখা হয়েছে, "ঈশ্বরের দোহাই… সব সময় হেলমেট পরুন এবং সেটি বেঁধে রাখুন।"
তবে বুম নিজে থেকে ভিডিওটি যাচাই করেনি। যেহেতু ভিডিওটি ২০২১ সালের মে মাস থেকে ইন্টারনেটে দেখা যাচ্ছে, অতএব বোঝা যায় যে, এটি পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের সাম্প্রতিক বাঘের আক্রমণের ঘটনার ভিডিও নয়।
আরও পড়ুন: মিথ্যে দাবিতে ছড়াল চিত্রনাট্য আধারিত মেয়েদের মদ্যপানের ভিডিও