দুজন পুলিশ কর্মীর একজন লোককে অজ্ঞান হওয়া পর্যন্ত ক্রমাগত মারধর করার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো সাম্প্রদায়িক (communal) দাবিসহ ভাইরাল হয়েছে। ২০২০ সালের ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে মধ্যপ্রদেশে (Madhya Pradesh) ওয়াকফ সংশোধনী (Waqf Amendment) আইনের প্রতিবাদ করার ফলে মুসলিমদের (muslim) পুলিশের (police) দ্বারা অত্যাচারিত হওয়ার দৃশ্য দেখা যায় ভিডিওতে।
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের কোনও যোগ নেই। ২০২০ সালের মে মাসে কোভিড পরিস্থিতিতে লকডাউন চলাকালীন মধ্যপ্রদেশের ছিনদ্বারায় পুলিশের হাতে আক্রান্ত হন বামন সারেয়াম নামের এক শ্রমিক। সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায় আক্রান্ত ব্যক্তি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করলে পুলিশ তাকে মারধর করে।
৫৬ সেকেন্ডের ভিডিওয় দুজন পুলিশ কর্মীকে এক ব্যক্তিকে ক্রমাগত লাঠি দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারতে দেখা যায় যতক্ষণ না আক্রান্ত ব্যক্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর, তাকে অজ্ঞান অবস্থায় পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
৪ এপ্রিল, ২০২৫-এ ওয়াকফ সংশোধনী আইন সংসদে পাশ করা হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক নেতাসহ মুসলিম নাগরিকরা ওয়াকফের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। ওয়াকফ আইন পাশ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে দাবি করেছেন, "মধ্য প্রদেশ ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদ করায় পুলিশ পি"টিয়ে মা'রছে সংখ্যালঘু মুসলিমদেরকে।"
আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভাইরাল দাবিটি ভুয়ো এবং এই ঘটনার কোনও সাম্প্রদায়িক দিক বা সাম্প্রতিক ওয়াকফ সংশোধনী আইনের সঙ্গে কোনও যোগ নেই।
আমরা দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ভিডিওটির কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। সার্চের মাধ্যমে আমরা ভাইরাল দৃশ্যের স্ক্রিনশট সহ ২০২০ সালের মে মাসের একাধিক সংবাদ প্রতিবেদন পাই যা থেকে জানা যায়, কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হওয়া লকডাউন চলাকালীন মধ্যপ্রদেশের ছিনদ্বারা জেলায় ঘটনাটি ঘটে।
নবভারত টাইমসের ২৩ মে, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, মধ্যপ্রদেশের ছিনদ্বারার এই ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শশাঙ্ক গর্গ জানান নেশাগ্রস্ত ওই ব্যক্তি এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করলে পুলিশ কর্মীরা তার উপর বল প্রয়োগ করে।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, আক্রান্ত ব্যক্তি বামন সারেয়াম ছিনদ্বারার পিপলা নারায়ণ ওয়ার গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় লোকদের মতে, বামন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় একাধিক বার অন্যান্য গ্রামবাসীদের হেনস্থা করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের কাছে এবিষয়ে অভিযোগও করে।
এনডিটিভির ২৪ মে, ২০২০-র প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গর্গ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভিডিওতে পুলিশ কনস্টেবল কৃষ্ণ ডোঙরে এবং আশিসকে দেখা যায় ও মধ্যপ্রদেশ পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ঘটনায় জড়িত দুই পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়।
জি নিউজ মধ্যপ্রদেশ ছত্তিসগড়ও এই ঘটনা সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।