দক্ষিণপন্থী ওয়েবসাইট পোস্টকার্ড নিউজ (Postcard News) একটি ভুয়ো গ্রাফিক্স প্রচার করে দাবি করছে, এটি নাকি নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) দেওয়া পরিসংখ্যান (Statistics), যাতে দেখানো হয়েছে, এবারের ভোটে ৯১ শতাংশ মুসলমান (Muslim) তৃণমূল কংগ্রেসকে (Trinamool Congress) ভোট দিয়েছে এবং হিন্দু (Hindu) ভোটারদের ৪১ শতাংশ বিজেপিকে (BJP) ভোট দিয়েছে।
এই গ্রাফিক্সটি (Graphics) সম্পূর্ণ ভুয়ো। নির্বাচন কমিশন এ ভাবে ধর্মীয় (Religious) পরিচয়ের ভিত্তিতে ভোটারদের ভোট দেবার কোনও হিসাব কখনও প্রচার করে না। তা সত্ত্বেও এই ভুয়ো (Fake) পরিসংখ্যান নির্বাচন কমিশনের নামে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
পোস্টকার্ড নিউজ ওয়েবসাইটের পরিচালক মহেশ হেগড়ে অতীতেও বহু বার সাম্প্রদায়িক মোচড় দিয়ে ভুয়ো খবর প্রচার করেছেন, যার প্রতিটিই বুম তথ্য-যাচাই করে নস্যাৎ করে দিয়েছে।
(এই টুইট পোস্টটির আর্কাইভ দেখুন এখানে)
টুইটের এই পোস্টার অনুযায়ী এই পরিসংখ্যান নাকি নির্বাচন কমিশনের দেওয়া, যাতে কমিশন দাবি করেছে:
হিন্দুদের সংখ্যা:
- হিন্দুদের মধ্যে ৩২ শতাংশ এবার ভোট দেয়নি
- শহর ও আধা-শহর এলাকার ২৫.৫ শতাংশ ভোটার এবার বিজেপির বিরুদ্ধে কিংবা 'উপরের কাউকে নয়' বা 'নোটা'-য় ভোট দিয়েছে
- ৪১.৬ শতাংশ হিন্দু বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়েছে
মুসলিম ভোটারদের হিসাব:
- ৯১ শতাংশ মুসলিম ভোটার তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে
- ৩ শতাংশ মুসলিম ভোটার অ-বিজেপি দল ও নোটা-য় ভোট দিয়েছে
- ১ শতাংশ মুসলিম বিজেপিকে ভোট দিয়েছে
পোস্টারটি নীচে দেখা যেতে পারে।
সোশাল মিডিয়াতেও নানা রূপে এই পরিসংখ্যানটি ব্যবহৃত হয়েছে।
বিজেপি প্রবলভাবে এবং মরিয়া হয়ে প্রয়াস চালালেও ২৯২ আসনের রাজ্য-বিধানসভার মধ্যে ২১৩টি আসন পেয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। সেই থেকে রাজ্যে নির্বাচনোত্তর হিংসা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ভুয়ো খবরও অনবরত প্রচারিত হয়ে চলেছে।
আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসা: জখম বাংলাদেশি মহিলার পুরনো ছবি ছড়াল বাংলার বলে
তথ্য যাচাই
বুম নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত যাবতীয় পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখেছে এবং তাতে কোত্থাও ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে ভোটারদের ভোট-প্রবণতার কোনও হিসাব দেওয়া হয়নি। কমিশনের পরিসংখ্যানে কেবল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাওয়া ভোটের সংখ্যা ও শতাংশ, বিভিন্ন দলের জেতা আসন, আসন-ভিত্তিক ভোট-প্রবণতা এবং জয়ী প্রার্থী ও তার জয়ের ব্যবধানেরই উল্লেখ ওয়েবসাইটে থেকেছে।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, আসাম, কেরালা, তামিলনাড়ু, পুদুচেরির বিধানসভা এবং কয়েকটি আসনের উপ-নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই রকমের পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছেl
এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যানের গ্রাফিক্স এখানে দেখুন।
প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশন ঐতিহাসিকভাবে কখনওই ভোটারদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করে না। যে বিষয়টি কমিশন প্রকাশ করে, তা হল:
- ভোটারদের লিঙ্গ-বিভাজন, অর্থাত্ কতজন পুরুষ, মহিলা কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ভোট দিলেন, তার হিসাব
- বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বিভাগে কর্মরত এবং প্রবাসী ভোটারদের হিসাব
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের এ সংক্রান্ত তথ্যপঞ্জি দেখুন এখানে এবং ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত বিহার বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রাপ্ত পরিসংখ্যান দেখতে পারেন এখানে এবং এখানে।
এ থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়, ভোটারদের ধর্ম বা জাত-পাত বিষয়ক কোনও তথ্য নির্বাচন কমিশন সংগ্রহ কিংবা প্রচার করে না।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের অতীতের রেকর্ডও নিষ্কলঙ্ক। ২০০৯ সালে ঝাড়খণ্ডের এক জেলা নির্বাচনী আধিকারিক একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের কতসংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছেন জানতে চাইলে কমিশন উত্তরে বলেছিল: "এতদ্বারা কমিশন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চায় যে ভোটারদের ধর্ম বা জাত-পাত বিষয়ক কোনও তথ্য নির্বাচন কমিশন সংগ্রহ করে না এবং কাউকে করতেও বলে না l নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের এ ধরনের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করাও ঠিক নয় ।"
এ বিষয়ে পড়ুন এখানে।
আরও পড়ুন: না, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসার সঙ্গে এই ভিডিওটির কোনও যোগ নেই