একটি পুরনো সম্পর্কহীন ভিডিও যেটিতে উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে (Yogi Adityanath) কপালে ছাইয়ের তিলক লাগাতে দেখা যায়, ওই ভিডিওটি এই বলে অনলাইনে শেয়ার করা হচ্ছে যে, এক পুলিশ কর্মী, যিনি উমেশ পালকে (Umesh Pal) বাঁচানোর চেষ্টা করে মারা যান, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আদিত্যনাথ ওই ছাইয়ের তিলক কেটেছেন। ২০০৫ সালে, বিধায়ক রাজু পাল (MLA Raju Pal) হত্যা মামলায় উমেশ পাল ছিলেন অন্যতম প্রধান সাক্ষী।
বুম দেখে ভিডিওটি ২০২২ সালের, এর সঙ্গে উমেশ পাল খুন হওয়ার ঘটনার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, বিএসপি বিধায়ক রাজু পাল হত্যার এক মাত্র সাক্ষী আইনজীবী উমেশ পালকে প্রয়াগরাজে তাঁর বাড়ির বাইরে আক্রমণ করে খুন করা হয়। পুলিশ কনস্টেবল রাঘবেন্দ্র সিংহ, যিনি উমেশের সুরক্ষার দায়িত্বে ছিলেন, গুলি লেগে তিনিও আহত হন। পরে ১ মার্চ, মারা যান তিনি। যোগী আদিত্যনাথের ভিডিওটি এই পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তিনি ওই ভাবে সিংহের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানান।
শেয়ার করা ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, “প্রয়াগরাজ, উত্তরপ্রদেশ, বিধায়ক রাজু পালের হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী উমেশ পালের খুনের সময় যে পুলিশ কনস্টেবল শহিদ হন, সেই কনস্টেবলের চিতাভস্ম লাগানোর সময় যোগী আদিত্যনাথ বলেন, বড় কিছু একটা ঘটবে, খুব শীঘ্রই বড় খবর পাওয়া যাবে।”
এর আগেও একই ভিডিও, সেনাদের প্রতি আদিত্যনাথের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন পরিপ্রেক্ষিতে এই ক্লিপটি শেয়ার করা হয়েছিল। তথ্য-যাচাইটি পড়ুন এখানে।
(হিন্দিতে লেখা মূল ক্যাপশন: "उत्तरप्रदेश के प्रयागराज में राजू पल विधायक हत्या के गवाह उमेश पाल हत्याकांड में शहीद हुए पुलिस कांस्टेबल की राख को सर माथे पर लगाते हुए योगी आदित्यनाथ --कहा--कुछ तो बड़ा ही होकर रहेगा, बहुत जल्दी कोई बड़ी सूचना भी मिल सकती है")
টুইটটি দেখুন এখানে।
সাম্প্রতিক ক্লিপ বলে দাবি করে, আরও কিছু ব্যবহারকারীও সেটি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে, ভিডিওটি অন্তত পক্ষে ২০২২-এ তোলা. তার পরে নয়। এবং উমেশ পাল ও কনস্টেবল রাঘবেন্দ্র সিংয়ের সঙ্গে সেটির কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা লক্ষ করি, ভাইরাল ক্লিপটি উদ্ধৃত করে একটি টুইটে বলা হয়েছে, ভিডিওটিতে উত্তরপ্রদেশের হোলিকা উৎসবের (ন্যাড়াপোড়া) প্রথা দেখনো হয়েছে।
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
ওই তথ্য সূত্র ধরে, প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ডের সাহায্যে, আমরা টুইটারে ভিডিওটির সন্ধান করি। তার ফলে, ২২ মার্চ, ২০২২-এ, সাংবাদিক সমীর দীক্ষিতের আপলোড করা ভিডিওটি দেখতে পাই।
এই সূত্র ধরে আরও সার্চ করলে আমরা দেখি যে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশে তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র গোরেক্ষপুরে হোলি উৎসব পালন করেন।
আমরা নিউজ-১৮-এর একটি রিপোর্টও দেখতে পাই। তাতে বলা হয়, যোগী আদিত্যনাথ গোরক্ষপুর পৌঁছে, হোলিকা ভস্ম দিয়ে কপালে তিলক কেটে, হোলি উৎসবের সূচনা করেন। গোরক্ষনাথের মন্দিরে তিনি এই আচারটি পালন করেন।
রিপোর্টটিতে আরও বলা হয়, ওই বিশেষ উপলক্ষে তিনি একটি বড় জনসভায় ভাষণ দেন ও একটি শোভাযাত্রা বার করেন।
ইটিভি ভারত-এর একটি রিপোর্টও আমাদের নজরে আসে। ওই রিপোর্টের সঙ্গে একটি ছবি ছিল যেটিতে গোরক্ষনাথের মন্দিরে হোলিকার ছাই দিয়ে যোগী আদিত্যনাথকে তিলক কাটতে দেখা যায়।
হোলিকা দহন একটি প্রথা যেটি হোলির আগের দিন ভারতের নানা প্রান্তে অনুষ্ঠিত হয়। ওই প্রথার মাধ্যমে, পৌরাণিক চরিত্র প্রহ্লাদদের জ্বলন্ত চিতা থেকে উদ্ধার হওয়ার ঘটনাটি উদযাপন করা হয়। হোলিকা দহনের ছাই দিয়ে কপালে তিলক কাটা গোরক্ষপুরের একটি প্রচলিত প্রথা।