ভাইরাল সোশাল মিডিয়া পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে, উত্তরপ্রদেশের মথুরা জেলার বৃন্দাবন শহরের এক মন্দিরের পুরোহিতকে দুই জন বাংলাদেশী নির্মমভাবে মেরেছে। কিন্তু দাবিটি মিথ্যে। স্থানীয় পুলিশ বুমকে জানিয়েছে যে, মন্দিরের অভ্যন্তরীণ বিবাদের কারণেই ওই ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার বিভ্রান্তিকর দাবি সহ টুইটার ও ফেসবুকে বিচলিত করার মতো একটি ছবি ভাইরাল হয়। ওই ছবিটেতে মাথায় ও মুখে ক্ষত নিয়ে একজন হিন্দু পুরোহিতকে দেওয়ালে হেলান দিয়ে মাটিতে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
পোস্টগুলিতে দাবি করা হয়েছে যে, আক্রমণকারীদের মধ্যে দুইজন বাংলাদেশী আর বাকিরা অভিযুক্তরা 'বহিরাগত', কিন্তু তারা গা ঢাকা দিয়েছে। আবার অন্যান্য ফেসবুক পোস্টে মিথ্যে দাবিতে বলা হয়েছে যে, মুসলমানরা ওই হামলা চালায়। ছবিগুলি খুবই অস্বস্তিকর। তাই বুম ছবিগুলি প্রতিবেদনে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বৃন্দাবন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুম জানতে পারে যে, মন্দিরের অভ্যন্তরীণ বিবাদের জেরেই ওই পুরোহিত আক্রান্ত হন। অভিযুক্তদের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাকিরা পলাতক। বৃন্দাবন থানার স্টেশন হাউস অফিসার সঞ্জীব কুমার বুমকে বলেন যে, অভিযুক্তদের মধ্যে একজনও মুসলমান নেই।
নিজস্ব টুইটার হ্যান্ডেল থেকে মথুরা পুলিশও এই বিষয়ে একটি টুইট করে।
थाना वृन्दावन क्षेत्र इमलीतला स्थित गौड़ीय मठ के साधुओँ में आपस में हुयी मारपीट करने वाले मुख्य अभियुक्त की गिरफ्तारी व पुलिस द्वारा की जा रही कार्यवाही के सम्बन्ध में क्षेत्राधिकारी सदर द्वारा दी गयी बाइट। https://t.co/0GfacYFQjW pic.twitter.com/OBHlzj2JTJ
— MATHURA POLICE (@mathurapolice) May 12, 2020
আইনজীবী আইপি প্যাটেলও ছবিটি টুইট করেন। তিনি আগেও সাম্প্রদায়িকভাবে উস্কানিমূলক মিথ্যে তথ্য দেওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন। সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে উনি বলেন, "বৃন্দাবনের ইমলিতাল মন্দিরে তমাল কৃষ্ণ দাস নামের একজন বৈষ্ণব পুরোহিত গুণ্ডাদের দ্বারা আক্রান্ত হন। জানা যায়, আক্রমণকারীদের দু'জন বাংলাদেশী। গত ছয় বছরে কত জন বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীকে বিতাড়িত করা হয়েছে?"
টুইটটি পরে মুছে ফেলা হয়।
তথ্য যাচাই
ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বুম বৃন্দাবন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
বৃন্দাবন পুলিশ স্টেশনের স্টেশন হাউস অফিসার সঞ্জীব কুমার বুমকে বলেন, যে-সব সোশাল মিডিয়া পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশী মুসলমানরা ওই আক্রমণ করেছে, সেগুলি সব মিথ্যে। কুমার বলেন, "এর মধ্যে কোনও হিন্দু-মুসলমানের ব্যাপার নেই। এঁরা সবাই ইমলিতলা মঠেরই পুরোহিত। যাঁরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা সকলেই বৈষ্ণব সন্ন্যাসী। একমাত্র সিকিউরিটি গার্ডটি হলেন একজন স্থানীয় হিন্দু। মঠের একটি তালা-দেওয়া বন্ধ ঘর খোলাকে কেন্দ্র করে বর্তমান ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের অনুগামীদের মধ্যে মারামারি হয়।"
এসএইচও কুমার বুমকে আরও বলেন যে, একটি কক্ষের তালা খোলা নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত হয়, "চার বছর আগে, মঠের প্রেসিডেন্ট পদ খোয়ানর পর থেকে তমাল কৃষ্ণ দাস মঠের বিভিন্ন ঘরে তালা লাগিয়ে থাকেন। কয়েকদিন আগেও উনি মঠের একটা ঘরে তালা লাগিয়ে দেন। ১১ মে, রক্ষী ঘরটি খুলতে এলে তমাল কৃষ্ণ দাস তাঁকে বাধা দেন। ওই রক্ষী গোবিন্দকে (একজন অভিযুক্ত) জানান, যিনি ঘরটা খোলার নির্দেশ দিয়ে ছিলেন।" এর পরই মারামারি শুরু হয়ে যায়। একজন অভিযুক্ত ওই পুরোহিতকে ঘুষি মারে। তমাল কৃষ্ণ দাস এখন সুস্থ হয়ে উঠছেন, বলেন স্টেশন হাউস অফিসার।
নির্যাতিত পুরোহিত তমাল কৃষ্ণ দাস এখনও কোনও এফআইআর করেননি। ফলে কেউ গ্রেপ্তারও হননি। তবে, সচ্চিদানন্দ নামের একজন অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে, বলেন ওই পুলিশ অফিসার।
दिनाँक 11.05.2020 को थाना वृन्दावन क्षेत्र में दो साधुओं के मध्य हुये झगड़े के सम्बन्ध में विभिन्न सोशल मीडिया प्लेटफार्म पर चलायी जा रही असत्य खबर के सम्बन्ध में खण्डन । #UPAgainstFakeNews pic.twitter.com/7Du60gjqTm
— MATHURA POLICE (@mathurapolice) May 12, 2020
ঘটনাটির কোনও সাস্প্রদায়িক দিক থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয় মথুরা পুলিশের এই টুইটে।
হিন্দিতে লেখা ওই টুইটে বলা হয়, "আমরা জানাতে চাই যে, এই জেলায় টুইটার ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মিথ্যে বার্তা ছড়ানো হচ্ছে। ওই বার্তায় বলা হচ্ছে: বৃন্দাবনের পুরোহিতকে ভয়ঙ্করভাবে আক্রমণ করা হয়েছে: ইউপি-র বৃন্দাবনে ইমলিতাল মন্দিরের বৈষ্ণব পুরোহিত এবং তমাল কৃষ্ণ দাস নামের একজনকে গুণ্ডারা নৃশংসভাবে মেরে ফেলেছে। দু'জন আততায়ী বাংলাদেশী, বাকিরা বহিরাগত। সব অভিযুক্তরাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আসল ঘটনা হল এই রকম: ১১.০৫ ২০'র বিকেল ৫.৩০-এ ইমলিতলা গৌড়ীয় মঠের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বি পি সাধু ও মঠের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তমাল দসের মধ্যে বচসা বাঁধে। বি পি সাধুর অনুগামীরা – গোবিন্দ, সচ্চিদানন্দ ও সিকিউরিটি গার্ড গোবিন্দ সিং – লাইব্রেরি (বই ঘর) খোলাকে কেন্দ্র করে তমাল দাসকে মারধোর করে। তমাল দাস আহত হন এবং চিকিৎসার জন্য তাঁকে মথুরায় জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত সচ্চিদানন্দকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃন্দাবন পুলিশ আটক করেছে। এফআইআর করা হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেব।"