সিএনএন নিউজ১৮ সোমবার চার বছরের পুরানো একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক ঘটনা বলে সম্প্রচার করল। মিথ্যে দাবি করল যে, এক জন চিনা ইঞ্জিনিয়র করাচিতে তার পাকিস্তানি ড্রাইভারকে পেটাচ্ছে।
ভারতে যখন চিন বিরোধী আবেগ দ্রুত বাড়ছে, সেই সময়ই এই টেলিভিশন চ্যানেলটি এই ভুল তথ্য পরিবেশন করল। ২০২০ সালের ১৫ ও ১৬ জুন পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত এবং চিনের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের ফলে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান নিহত হন।
৫০ সেকেন্ডের এই ক্লিপটিতে নীল টি-শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তিকে লাঠি দিয়ে অন্য এক জনকে মারতে দেখা যাচ্ছে, এবং হলুদ টি-শার্ট পরা আর এক ব্যক্তি পাশে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনাটি দেখছেন।
এই ইংরেজি সংবাদমাধ্যমটি এই ভিডিওটিকে সাম্প্রতিক ঘটনা বলে দাবি করল। এই চ্যানেলের এক সঞ্চালক দাবি করেছেন যে ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরে কর্মরত এক চিনা ইঞ্জিনিয়ার এক পাকিস্তানি ইঞ্জিন ড্রাইভারকে মারধর করছেন। ঘটনাটি করাচির বলে দাবি করা হয়েছে।
(বিজ্ঞপ্তি: নীচের ভিডিওটিকে হিংস্রতার দৃশ্য রয়েছে, পাঠককে তাঁর বিবেচনা অনুসারে দেখার সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে)
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে
এখানে।
একটি টুইটে এই সংবাদমাধ্যম আরও দাবি করে যে সিপিইসি (CPEC) প্রকল্প আশানুরূপ ভাবে এগোচ্ছে না, এবং তার জন্যই পাকিস্তানি কর্মীকে এ ভাবে মারধর করা হয়েছে।
দেখে মনে হচ্ছে চ্যানেলটি এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি আগেই ভাইরাল হয়েছে।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে
এখানে।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে
এখানে।
একই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করে আমরা দেখতে পাই যে ভিডিওটি ফেসবুকেও একই মিথ্যে দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, সিএনএন নিউজ ১৮ যে ভিডিওটি দেখিয়েছে সেটি ২০১৬ সালের নভেম্বর মাস থেকে ইন্টারনেটে দেখা গেছে এবং বিভিন্ন মালয়েশিয়ান ওয়েবসাইটে ঘটনাটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
ভিডিওটিকে ছোটো কিফ্রেমে ভেঙ্গে নিয়ে আমরা গুগল ইমেজে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতে পাই যে, ভিডিওটি পুরানো এবং এতে দেখানো ঘটনাটি সাম্প্রতিক নয়।
এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে নীল টি-শার্ট পরা ব্যক্তির কাছে নিগৃহীত ব্যক্তি ছেড়ে দেওয়ার জন্য কাকতিমিনতি করেন, কিন্তু ওই ব্যক্তি তাঁকে বার বার মারতে থাকেন এবং অন্য এক ব্যক্তি যার পরনে বেরিশ ৫ লোগো দেওয়া হলুদ টি-শার্ট ছিল, তিনি পুরো ঘটনাটি বিনা প্রতিবাদে দেখতে থাকেন।
বুম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভিডিওতে হলুদ টি-শার্টের উপর যে লোগো দেখা যাচ্ছে তা বেরিশ ৫ নামে মালয়েশিয়ার গণতন্ত্র সমর্থনকারী একটি দলের লোগো।
ঘটনাটির উপর ২০১৬ সালের বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং হলুদ টি-শার্টের উপরের লোগো দেখে বোঝা যাচ্ছে ভিডিওটি মালয়েশিয়ার। তবে নিগৃহীত এবং আক্রমণকারীর নাগরিকত্ব বা তাঁদের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
ছবিতে বাঁ দিকে রয়েছে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর দৃশ্য ডানদিকে মালয়েশিয়ায় বেরিশ ৫ মিছিলের ভিড়ের দৃশ্য
বুম দেখতে পায় ২০১৬ সালের নভেম্বরে কং ওয়াহ ইট পহ বা কং ওয়াহ ডেইলি নামে একটি মালয়েশিয়ান চাইনিজ দৈনিক ভিডিওটি ভিডিওটি ইউটিউবে আপলোড করে।
বাঁ দিকে নিউজ ১৮'র আপত্তিজনক ছবি ও ডানদিকে ২০১৬ সালের ইউটিউব ভিডিও
ক্যাপশনটির অনুবাদ করলে বোঝা যায় তাতে লেখা রয়েছে, "(পেনাং ২৮) এক বিদেশি কর্মীকে মারধর করার ভিডিও সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তা নেটিজেনদের রাগের কারণ হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নেটের টি-শার্ট পরহিত এক ব্যক্তি বিদেশি কর্মীর নিগ্রহের ঘটনাটি পুরো দেখেছেন।"
আমরা দেখতে পাই ২০১৬ সালের নভেম্বরে এই ভাইরাল ভিডিওটি অনেকেই অন্য ক্যাপশনের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন।
বুম নিজে এই ঘটনাটি যাচাই করে দেখতে পারেনি। তবে আমরা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি ভিডিওটি কয়েক বছরের পুরানো এবং সম্ভবত মালয়েশিয়ায় তোলা হয়েছে।