একটি ভাইরাল মেসেজে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি বলেছেন যে, করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দেওয়ার ন'দিনের মধ্যে কোনও পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন নেই।
এই মিথ্যে বার্তার সঙ্গে দেওয়া হয়েছে একটি অডিও ক্লিপ। বুম দেখে সেই ক্লিপটি চেন্নাইয়ের হাড়ের ডাক্তার ডঃ সন্তোষ জেকবের। উনি বলেন, তাঁর নিজস্ব গ্রুপের এক বন্ধুকে আশ্বস্ত করতে মেসেজটি পাঠানো হয়েছিল।
রেকর্ড-করা বার্তাটি ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করা হচ্ছে, আর সঙ্গে থাকছে সেই একই মিথ্যে দাবি যে, দেবী শেঠি ওই পরামর্শ দিয়েছেন। ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "আমি সকলকে এই অডিও একবার শোনার অনুরোধ করছি। ডঃ দেবী শেঠি স্যার কোভিড-১৯ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন।"
ডঃ দেবী শেঠি 'নারায়ণ হেল্থ'-এর প্রতিষ্ঠাতা। সংস্থাটি বিশেষভাবে হৃদরোগের চিকিৎসা করে।
অভিনেত্রী ও তৃণমূল সাংসদ মিমি চক্রবর্তীও ভি়ডিওটি পোস্ট করেছিলেন। পরে তিনি ভিডিওটি ডিলিট করে দেন। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
দেবী শেঠির নাম উদ্ধৃত করে বাংলা সংবাদ মাধ্যম 'এই সময়'ও এই মিথ্যে বার্তাটি শেয়ার করে।
অডিও বার্তা
ভাইরাল অডিও বার্তাটিতে সাধারণ ফ্লু বা সর্দি-কাশি-জ্বরের লক্ষণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, অবস্থার যদি অবনতি ঘটে বা প্রশমিত না হয়, তাহলেই পরীক্ষা করাতে হবে। তাতে আরও ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে যে, ফ্লুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর ৯ দিন অপেক্ষা করা যেতে পারে। "যদি দেখেন আপনার উপসর্গগুলি উন্নতি হওয়ার বদলে খারাপের দিকে যাচ্ছে, তাহলে কোভিড-১৯ হেল্পলাইনে ফোন করুন। কারণ, ভারতে এখন ১,৫০,০০০ টেস্ট আছে। আমরা হয়তো খুব বেশি হলে ১.৫ মিলিয়ন (১৫ লক্ষ) পেতে পারি।" পরামর্শে আরও বলা হয়েছে যে, "শুধুমাত্র ভয়বশত পরীক্ষা করানো উচিৎ নয়," কারণ, তার ফলে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির ওপর চাপ বাড়বে।
অডিও ক্লিপটিতে 'দ্য রোটারি ক্লাব'-এরও উল্লেখ আছে। বলা হয়েছে, "রোটারি হিসেবে ভারতকে কোভিড-১৯ প্রতিহত করার ব্যাপারে সাহায্য করা উচিৎ।"
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাসের সতর্কতায় রাজ্যে বন্ধ থাকবে ইন্টারনেট খবরটি ভুয়ো
তথ্য যাচাই
বুম ডঃ শেঠির টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে যে, উনি ওই ধরনের কোনও রেকর্ডিং করেননি। "ওটা ডঃ শেঠির গলা নয়। তাছাড়া, উনি অডিও রেকর্ডিঙের মাধ্যমে ওই রকম কোনও পরামর্শ দেননি," বলেন দেবী শেঠির টিমের এক সদস্য।
অডিও মেসেজে রোটারি ক্লাবের উল্লেখ থাকায়, বুম নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ড দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করে। সেখানে দেখা যায় যে, একজন মন্তব্য করেছেন যে, রেকর্ডিঙে যাঁর গলা শোনা যাচ্ছে, তিনি চেন্নাইয়ের ডঃ সন্তোষ জেকব।
এর পর বুম ডঃ জেকবের সঙ্গে যোগাযোগ করে। উনি হলেন, চেন্নাইয়ের 'বি ওয়েল হসপিটাল'-এর অর্থোপেডিক ও স্পোর্টস ইনজুরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান। উনি বুমকে জানান যে, উনিই রেকর্ডিংটি করেছিলেন। সেই সঙ্গে বলেন যে, অডিও ক্লিপটি ভাইরাল হওয়ায় উনি বিস্মিত হয়েছেন। "মেসেজটি নিজস্ব একটি রোটারি গ্রুপে পাঠানো হয়েছিল। কারণ, একজন সদস্য কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ দেখে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। সচেতনতা বাড়াতে এবং ডাক্তারের সঙ্গে কখন যোগাযোগ করতে হবে, সে কথা জানাতেই মেসেজটি দেওয়া হয়েছিল," বলেন ডঃ জেকব।
জেকব জানান, উনি রোটারি ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার সদস্য। আর মেসেজটির মানে এই ছিল না যে, হাসপাতালে যাওয়া ঠিক নয়। "আমি এক বন্ধুকে বোঝাতে চেয়েছিলাম যে, যাঁরা উপসর্গগুলি চেনেন, সেগুলির গতিপ্রকৃতি নজরে রাখতে হবে তাঁদের। যদি দেখা যায়, সেগুলি সাধারণ ফ্লুর উপসর্গের চেয়েও বেশি কিছু, তাহলেই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে," বলেন ডঃ জেকব।