তারিখহীন ও আগেই খণ্ডন করা একটি খবরের কাগজের ক্লিপিং, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন সোনিয়া গাঁধী, সেটিকে আবার প্রচারে আনা হয়েছে। খবরের সূত্র হিসেবে ভাইরাল ক্লিপিংটিতে হাফিংটন পোস্ট-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং দাবি করা হয়েছে যে, সোনিয়া গাঁধী সেই সব রাজনৈতিক নেতার তালিকায় রয়েছেন যাঁরা "নিজেদের দেশকে লুঠ করে" ধনবান হয়েছেন।
বুম দেখে, হাফিংটন পোস্ট ২০১৩ সালে বিশ্বের ১৮ জন সবচেয়ে ধনী রাজনৈতিক নেতার একটা তালিকা প্রকাশ করেছিল আর তাতে সোনিয়া গাঁধীর নাম ছিল ১২ নং স্থানে। পরে অবশ্য তাঁর নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয় এবং ব্যাখ্যাও দেওয়া হয় তার জন্য।
সোনিয়া গাঁধীর সম্পদ সংক্রান্ত ভুয়ো খবর বুম আগেই খণ্ডন করেছিল। তখন ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা মানেকা গাঁধীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, "... যদি তিনি(সোনিয়া) বিশ্বেরষষ্ঠতম ধনী মহিলা হন, তাহলে টাকাটা এলো কোথা থেকে?"
ভাইরাল পোস্টটিতে একটি তারিখহীন সংবাদপত্রের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়েছে। তাতে হিন্দিতে যা লেখা আছে, তা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়: "সোনিয়া গাঁধীর সম্পত্তি এক বিলিয়নেরও (১০০ কোটি) বেশি।" সোনিয়া গাঁধী ছাড়া, ওই সংবাদ প্রতিবেদনটিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবোল অদুল্যদেজ ও ইংলন্ডের রাণী এলিজাবেথ-২-এর ছবি ছাপা হয়েছে। ওই তালিকায় এঁদেরও নাম রয়েছে।
(হিন্দিতে মূল লেখা হয়: सोनिया की संपत्ति 1 ख़रब से ज़्यादा !)
রিপোর্টটির শুরুতেই লেখা হয়, "বিশ্বের ২০ ধনীতম রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সোনিয়া গাঁধীর স্থান দ্বাদশ। এই দাবিটি করেছে আমেরিকান ওয়েবসাইট হাফিংটন পোস্ট ওয়ার্ল্ড।"
(হিন্দিতে মূল লেখা: दुनिया के 20 सबसे अमीर नेताओं में सोनिया गाँधी की पोजीशन 12वी है | यह कहना है अमेरिकी वेबसाइट हफ़्फिंगटन पोस्ट वर्ल्ड का)
ভাইরাল পোস্টটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয, "আমার দেশকে ওরা কত লুঠ করেছে...দেশবাসী, অন্তত এবার জেগে ওঠ। ২০ জন ধনীতম রাজনৈতিক নেতার মধ্যে সোনিয়া গাঁধীর স্থান ১২'য়। তাঁর সম্পত্তির নিট মূল্য ২ মিলিয়ন ডলার, যা এক বিলিয়ন টাকার (১০০ কোটি) চেয়েও বেশি।"
(হিন্দিতে মূল লেখা: कितना लूटा है मेरे देश को...अब तो जागो मेरे देशवासियों,! दुनिया के सबसे 12 धनी नेताओं में शामिल सोनिया गांधी, कुल संपत्ति 2 अरब डॉलर, मतलब 1 खरब रुपए से भी ज्यादा,!!!)
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
একই স্ক্রিনশট যাচাইয়ের জন্য বুমের হেল্পলাইনেও আসে।
তথ্য যাচাই
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড দিয়ে বুম সার্চ করলে, হাফিংটন পোস্ট-এর ওয়েবসাইটে ২৯ নভেম্বর ২০১৩ প্রকাশিত একটি লেখা নজরে আসে। সেই তালিকায়, ১৮ জন রাজনৈতিক নেতার নাম আছে। কিন্তু সোনিয়া গাঁধীর নাম নেই সেই তালিকায়। সম্পাদকের লেখা একটি নোটে বলা হয়, সোনিয়া গাঁধী ও আরও একজন রাজনীতিবিদের নাম ওই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
হাফিংটন পোস্ট-এর লেখার সঙ্গে সম্পাদকের যে সংশোধনী দেওয়া হয়, সেটি এরকম:
"এডিটারের নোট: সোনিয়া গাঁধী ও কাতারের প্রাক্তন আমির হামিদ বিন খালিফা আর-থানি-র নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একটি তৃতীয় পার্টির সাইটের ওপর ভিত্তি করে সোনিয়া গাঁধীর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। পরে সেই সাইটটি সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠে। আমাদের সম্পাদকরা পরিমাণটা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি। তাই লিঙ্কটা সরিয়ে দেন ও বিভ্রান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। কাতারের আমিরের ছেলে ২০১৩ সালে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।"
এই তথ্য যাচাই করার সময় বুম ন্যাশনাল ইলেকশন ওয়াচ-এর তথ্য দেখে নেয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সোনিয়া গাঁধী তাঁর সম্পত্তির যে হিসেব দিয়েছিলেন, তা সেখানে রয়েছে। ওই সময়, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৯ কোটি টাকা (৯,২৮,৯৫,২৮৮)। ২০০৯-এর নির্বাচনের আগে তাঁর সম্পত্তির ঘোষিত পরিমাণ ছিল ১ কোটি (১,৩৭,৯৪, ৭৬৮)। এবং ২০০৪ সালে তা ছিল ৮৫ লক্ষ টাকা (৮৫,৬৮,৬৯৪)।
ওই তথ্য দেখা যাবে এখানে।
দ্য গার্ডিয়ান (২০১২) ও ফোর্বস (২০১২) পত্রিকায় প্রকাশিত সবচেয়ে ধনবান ভারতীয় ও বিশ্বের সবচেয়ে ধনি রাজনৈতিক নেতাদের তালিকা খুঁটিয়ে দেখে বুম। সেগুলির কোনওটাতেই সোনিয়া গাঁধীর নাম ছিল না।
আরও পড়ুন: না, কৃষি বিল পাস হওয়ার পর আদানিদের খাদ্য মজুত করার সাইলো তৈরি হয়নি