ভুয়ো খবরের কুখ্যাত ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেইলি রিপোর্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে চিনা কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, চিনের প্রথম করোনাভাইরাস জীবাণুর বাহক ব্যক্তিটি নাকি বাদুড়ের সঙ্গে যৌন সঙ্গম করেছিল। এবং এটি ভাইরাল হওয়ায় অনেক নেটিজেন সেটা বিশ্বাসও করছেন।
প্রতিবেদনটির শিরোনাম: "কোভিড-১৯ চিনা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোগের প্রথম বাহকবাদুড়ের সঙ্গে যৌন সঙ্গম করেছিল" এবং এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে এই লেখার সময় পর্যন্ত প্রতিবেদনটিতে ৩ লক্ষ জন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং ৪০ হাজার জন শেয়ার করেছে, অন্তত সোশাল মিডিয়া পর্যবেক্ষক সংস্থা ক্রাউড ট্যাংগল তেমনটাই দাবি করছে।
গত বছর ১৭ নভেম্বর চিনা কর্তৃপক্ষ শনাক্ত করেন হুবেই প্রদেশের ইন দাও তাং নামের ২৪ বছরের এক তরুণকে, যার দেহে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসের জীবাণু ধরা পড়ে। ওয়েবসাইটটির দাবি, তাং এর আগে বাদুড় সহ বেশ কয়েক প্রজাতির প্রাণীর সঙ্গে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হয়েছিল। আর তা থেকেই নাকি তার দেহে ওই জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। ওয়েবসাইটটি এক বৃদ্ধের ছবিও হাজির করে, যিনি নাকি তাং-এর বাবা এবং যিনি ছেলের এই অপকর্মে ভীষণ রকম লজ্জিত!
আরও পড়ুন: স্পেনে তীব্র শিলাবৃষ্টির পুরনো ভিডিওকে করোনাভাইরাস বিধ্বস্ত ইতালিতে অভিশাপের ঘটনা বলা হচ্ছে
তথ্য যাচাই
গোটা খবরটাই সম্পূর্ণ কাল্পনিক গল্প। গল্পে ব্যবহার করা ছবিটি হঙকঙ ফ্রি প্রেসের এইপ্রতিবেদন থেকে নেওয়া।
ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেইলি রিপোর্ট ভুয়ো খবর প্রচারের একটি পরিচিত সংস্থা, যেটি ব্যঙ্গবিদ্রূপের বেশে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়।
ভুয়ো খবর প্রচারকারী ওয়েবসাইটের তালিকাতেও এই সংস্থার নাম অন্তর্ভুক্ত।
অতীতেও বুম এই সংস্থার ছড়ানো ভুয়ো খবরের পর্দাফাঁস করেছে।
আরও পড়ুন: ভুয়ো খবর: মুসিককে বিয়ে ভারতীয় নাগরিকের, মৃত স্ত্রীর পুনর্জন্ম বলা হল
আরও পড়ুন: যে ভাবে টুইটার প্রভাবকরা ভুয়ো খবরের ওয়েবসাইটের খপ্পরে পড়ছেন
সংস্থাটির নামের মধ্যেই একটা খবর-খবর গন্ধ রয়েছে বলে নেটিজেনরা প্রায়শ এর প্রচার করা খবরকে সত্যই ধরে নেয় এবং ফেসবুকে শেয়ারও করে ফেলে।
ওয়েবসাইটটির অন্যান্য প্রতিবেদনগুলির ওপর চোখ বোলালেও বোঝা যায়, কি ভাবে এরা লোককে চমকে দেওয়ার ওপর জোর দেয়।
"ব্যঙ্গাত্মক বিষয়বস্তু"
সাইটটি তার নিজের সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানায় না, তবে সাইটের একেবারে নীচের দিকে স্ক্রল করে এলে এক জায়গায় দেখা যায়, ওয়েবসাইটটি নিজেই জানাচ্ছে, তার কথা বা খবরকে যেন হুবহু বিশ্বাস করে ফেলা না হয়: "ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেইলি রিপোর্ট তার প্রকাশিত প্রতিবদনের ব্যঙ্গাত্মক বিষয়বস্তু এবং বানানো কল্পকথার দায়িত্ব নিচ্ছে। প্রতিবেদনগুলিতে যে সব চরিত্রের আমদানি করা হয় (যদি তাদের পিছনে বাস্তব কোনো চরিত্রের ভিত্তিও থাকে) সেগুলি সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং যদি কোনও জীবিত বা মৃত ব্যক্তির সঙ্গে তাদের কোনও সাদৃশ্যও ধরা পড়ে, তবে বুঝতে হবে সেটা একটা চমকপ্রদ, কাকতালীয় ব্যাপার!"