একটি মিথ্যে ভাইরাল বার্তায় গুগুল পে ব্যবহার করার ব্যাপারে সাবধান করে বলা হয়েছে যে, তার মাধ্যমে টাকা হস্তান্তর করা ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অনুমদিত নয়। গুগুল পে ও ন্যাশনাল পেমেন্টস করপোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এনপিসিআই) জানিয়েছে যে, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে টাকা হস্তান্তর করার ক্ষেত্রে ভারতের আইন ও সংশ্লিষ্ট সুরাক্ষাবিধি প্রযোজ্য।
একটি ফরওয়ার্ড-করা বার্তা যাতে গুগুল পে সম্পর্কে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে, সেটি হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হয়েছে। বার্তাটির সত্যতা যাচাই করার জন্য সেটি বুমের হেল্পলাইনে (৭৭০০৯০৬১১১) আসে। বার্তাটির বয়ান এই রকম:
"আরবিআই ঘোষণা করেছে যে, জিপে মারফৎ টাকা হস্তান্তর করার সময় যদি সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে কোনও রকম সুরাহা দাবি করা যাবে না। কারণ ন্যাশনাল পেমেন্টস করপোরেশন অফ ইন্ডিয়ার অনুমোদিত টাকা মেটানর সিস্টেমের লিস্টে সেটি নেই। গুগুল পে ব্যবহার করার ব্যাপারে সাবধান হন। গুগুল পে ব্যবহার করে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও গোলমাল হলে বা জালিয়াতি ধরা পড়লে, তা আরবিআই-এর আওতার মধ্যে পড়বে না। তাই সাবধান থাকুন!"
তাছাড়া, ওই ফরওয়ার্ড-করা বার্তাটিতে 'ইন্ডিয়া টুডে'র একটি রিপোর্টের ভুল ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয় যে, একটি জনস্বার্থ মামলায়, আরবিআই দিল্লি হাইকোর্টকে জানায় যে, গুগুল পে টাকা মেটানর ব্যবস্থা নয়। বরং সেটি ইউপিআই-এর একটি তৃতীয়-পক্ষ (থার্ড পার্টি) অ্যাপ হিসেবে কাজ করে।Online payment systems has to be authorised by RBI. As per RBI Google Pay does not operate any payment system, it does not find a place in the list of authorised payment system operators published by the National Payments Corporation of India (NPCI).
— Tahir Ashraf (@Tahir_A) June 24, 2020
গুজবটি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে গুগুল পে বলে, তারা হল একটি প্রযুক্তিগত প্ল্যাটফর্ম, যা ইউপিআই-এর মাধ্যমে টাকা পাঠাতে সাহয্য করে। এবং তাদের পরিষেবা কোনও অর্থেই 'পেমেন্টস অ্যান্ড সেটলমেন্ট সিস্টেম অ্যাক্ট, ২০০৭'-এর বিরোধী নয়। তাছাড়াও গুগুল পে জানায় যে, তাদের অ্যাপের মাধ্যমে ইউপিআই লেনদেন আরবিআই ও এনপিসিআই-এর নিয়মাবলি অনুযায়ী করা হয় বলে, তা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত।
"সোশাল মিডিয়ায় আরবিআই-এর নাম করে কিছু ভুল উদ্ধৃতিতে দাবি করা হয়েছে যে অ্যাপটি অনুমোদিত না হওয়ায়, গুগুল পের মারফৎ টাকা পাঠানো আইনের দ্বারা সুরক্ষিত নয়। এটা সম্পূর্ণ ভুল, এবং তা এনপিসিআই-এর ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করে নেওয়া যেতে পারে," গুগুল পে এক বিবৃতিতে জানায়।
বুম নিজে যাচাই করে দেখে গুগুল পে একটি তৃতীয-পক্ষ অ্যাপ যা ইউপিআই-এর মাধ্যমে টাকা পাঠাতে সাহায্য করে। (লিস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন)All transactions made via Google Pay are fully protected by redressal processes laid out by applicable guidelines of the RBI/NPCI, and users can reach out for any help 24/7, through Google Pay customer care.
— Google Pay India (@GooglePayIndia) June 24, 2020
একটি স্বতন্ত্র বিবৃতিতে, এনপিসিআইও জানায় যে, ইউপিআই প্ল্যাটফর্মে গুগুল পে হল একটি তৃতীয়-পক্ষ অ্যাপ যেটি আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এবং ইউপিআই লেনদেনে গরমিল দেখা দিলে প্রতিকারের ব্যবস্থাও আইন (ও আরবিআই) দ্বারা সুরক্ষিত।
এনপিসিআই-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে: "আমরা এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, গুগুল পেকে একটি 'থার্ড পার্টি অ্যাপ প্রোভাইডার' (টিপিএপি) বা তৃতীয়-পক্ষ অ্যাপ প্রদানকারী হিসেবে গণ্য করা হয়। যারা, আরও অনেকের মত, তাদের ব্যাঙ্ক পার্টনারদের মাধ্যমে এনপিসিআই-এর ইউপিআই পরিকাঠামোর মধ্যে থেকে ইউপিআই লেনদেনের পরিষেবা দিয়ে থাকে। সব অনুমোদিত টিপিএপি-দের নাম এনপিসিআই ওয়েবসাইটে রয়েছে। অনুমোদিত টিপিএপি-দের মাধ্যমে করা সব লেনদেন এনপিসিআই/আরবিআই-এর নিয়মাবলীর অধীনে প্রতিকার ব্যবস্থার দ্বারা সুরক্ষিত। এবং ক্রেতারা তা ব্যবহার করতে পারেন।"
সুরক্ষার কারণে তাঁরা ক্রেতাদের অনুরোধ করেছেন যে, তাঁরা যেন ওটিপি ও ইউপিআই পিন কারও সঙ্গে শেয়ার না করেন।
এনপিসিআইয়ের বিবৃতি পড়া যাবে এখানে।
ইউপিআই-এর তৃতীয়-পক্ষ অ্যাপ কি?
ইউপিআই-এর পদ্ধতি-সম্পর্কিত হ্যান্ডবুক (অক্টোবর ২০২০) অনুযায়ী, ব্যাঙ্কগুলির জন্য ইউপিআই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়। কিন্তু ব্যাঙ্ক নয় এমন সংস্থাও তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ইউপিআই-যুক্ত ব্যাঙ্কের (পিএসপি) মাধ্যমে ইউপিআই লেনদেনে সাহায্য করতে পারে। তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে কাজ করানো ও তার আর্থিক ব্যয়ভার বহন করার দায়িত্ব ব্যাঙ্কগুলির। এই লেখার ওপরের দিকে দেওয়া লিঙ্ক থেকে দেখা যায় যে, গুগুল পে একটি তৃতীয়-পক্ষ অ্যাপ হিসেবে কাজ করে। আর তার পিএসপি হিসেবে আছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ও স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। ওই লিস্টে তার জনপ্রিয় বিকল্পগুলির নামও রয়েছে। যেমন, ফোন পে (ইয়েস ব্যাঙ্ক), অ্যামাজন পে (অ্যাক্সি ব্যাঙ্ক), মোবিকুইক (এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক) ও এমআই পে (আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক)।