কলকাতার বাঘাযাতীনের একটি মোটর বাইক সারাইয়ের দোকানে বিশ্বকর্মা পুজোকে ঘিরে সোশাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায় মহম্মদ আনোয়ার নামে এক ব্যক্তির দোকানে বিশ্বকর্মা পুজো করা হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়েছে সাইনবোর্ডটি বদল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দোকানের বর্তমান মালিকের ধর্মপরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর ক্যাপশন সহ ছবি শেয়ার করা হচ্ছে।
ভাইরাল ছবিতে দেখা যায় হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরা এক যুবক বিশ্বকর্মা পুজোর তোড়জোর করছেন। সেই দোকানের ডানদিকের তাকে রয়েছে ধন ও সমৃদ্ধির দেবদেবী লক্ষ্মী-গণেশের মূর্তি।
ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে বলা হচ্ছে দেকানের নামটি ফটোশপ করা। ওই গ্রাফিক পোস্টে লেখা হয়েছে, এটি আসলে হিন্দুর দোকান। সাজিয়ে ছবি তোলার পরে সরিয়ে নেওয়া হয় ঠাকুর।
পোস্টটিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, ''সে কি কমরেড!!! ফোটোশুটেও জালিয়াতি"
আরেকটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে দোকানটির বর্তমান মালিক হিন্দু ব্যক্তি। সম্প্রতি দোকানের প্রাক্তন মালিক যিনি ধর্মপরিচয়ে মুসলিম, তাঁর থেকে কিনেছেন। কিন্তু তিনি সাইন বোর্ডটি বদলাননি এখনও।
ওই পোস্টের সারাংশ, "…বিরক্তি ভরা গলায় জানালেন, দোকানটি উনি অতি সম্প্রতি একজন হিন্দু ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছেন। কিন্তু দোকানের নতুন মালিক এখনও পর্যন্ত দোকানে নতুন নেমপ্লেট লাগায়নি, তাই এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি।''
এই ধরণের একই বয়ানে লেখা কয়েকটি পোস্ট আর্কাইভ করা আছে এখানে, এখানে ও এখানে।
অনেক নেটিজেন ছবিটিকে আবার নিছক সম্প্রীতির নিদর্শন বলে দাবি করেছেন। এরকম একটি পোস্ট আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম সাইন বোর্ডে থাকা দোকানের নম্বরে ফোন করে দোকানের বর্তমান মালিক মহম্মদ আনোয়ারের সঙ্গে কথা বলে। তিনি বুমকে জানান, ''দোকানটি হিন্দু ব্যক্তির সম্পত্তি। আমি ৪-৫ বছর ধরে ঘরটি ভাড়া নিয়ে দোকান খুলেছি। সাইনবোর্ডটি আমার নামে, এটি ফটোশপ করা নয়।''
তাঁর দোকানের হিন্দু কর্মচারীরা লোহালক্কড়ের কাজ বলে বিশ্বকর্মা পুজোর সিদ্ধান্ত নেয়। পুজোর দিনই শ্রী বৃদ্ধি কামনায় লক্ষ্মী-গণেশ মূর্তি রেখেও পুজো করা হয়। বিশ্বকর্মা পুজো মিটলে সমস্ত প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। ভাইরাল ছবিটি পুজো করার মুহূর্তে তোলা। সেকারণে দেওয়ালের তাকে নেই লক্ষ্মী-গণেশের মূর্তি।
বুম বিষয়টি নিশ্চিত করতে বর্তমান দেকানটির ভেতর ও বাইরের দৃশ্যের ভিডিও চায়। বুমকে পাঠানো ভিডিওতে দেখা যায় ডানদিকের দেওয়ালে কোনও লক্ষ্মী-গণেশের মূর্তি নেই, সাইনবোর্ডটি রয়েছে আগের মতই।
বুম আলাদাভাবে এলাকার ব্যক্তি বাপ্পাদিত্য কুন্ডুর সঙ্গে কথা বলেছে। তিনি বলেন,''আনোয়ার'দা আমাদের কাছের লোক। ওর দোকানের ছেলেরাই পুজোর আয়েজন করে।'' ''হলুদ পাঞ্জাবি পরা ছেলেটি আনোয়ার'দার দোকানেরই কর্মচারী। কিন্তু এই নিয়ে এত হইচই কেন বুঝি না!''
সোশাল মিডিয়ায় ছবি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে তাদের নানা ব্যক্তি ফোন করছে, সেসব সামলাতে গিয়ে কাজযোগ উঠেছে শিকেই, বুমকে খেদ ব্যাক্ত করেন দোকানের আরেক কর্মচারী।
আরও পড়ুন: সুদর্শন টিভি'র ইউপিএসসি অনুষ্ঠান: ৫টি বিভ্রান্তিকর দাবি