দুটি পুরানো এবং পরস্পর সম্পর্কহীন ছবি ভাইরাল হয়েছে। সঙ্গে দাবি, নেপাল ভারতী বায়ুসেনার একটি বিমানকে গুলি করে নামালো, ঘটনায় নিহত দুই ভারতীয় বিমানচালক। ওই মেসেজে আরও বলা হয়েছ যে, দুই দেশের সীমান্তের কাছে ভারতীয় বাহিনী একটি এয়ারস্ট্রাইক চালায় এবং তার প্রতিক্রিয়ায় নেপাল ওই বিমানটিকে গুলি করে নামালো।
প্রথম ছবিটিতে একটি এয়ারক্র্যাফট পড়ে যেতে এবং তাতে আগুন ধরে যেতে দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে মাটিতে ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে। ছবি দুটি @Irmaknepal নামের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা হয়েছে। ভারত এবং নেপাল সংক্রান্ত ভুয়ো খবর শেয়ার করার জন্য এই অ্যাকাউন্টটি কুখ্যাত।
ছবিগুলি শেয়ার করার সময় সঙ্গে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "আজ ভারতীয় বিমানবাহিনী এয়ার স্ট্রাইক করার জন্য সীমান্ত পেরিয়ে নেপালের সীমানায় ঢোকে। ভারত নেপাল সীমান্তের কাছে কোট খড়ক সিং পেরনাওয়ান অঞ্চলে ভারত এই হামলা চালায়। উত্তরে আমরা ভারতীয় বিমান গুলি করে নামায় এবং তাতে দুজন ভারতীয় বিমানচালকের মৃত্যু হয়।"
এর আগে বুম এই একই অ্যাকাউন্ট থেকে আসা ভুয়ো তথ্য যাচাই করেছে এবং তা মিথ্যে বলেপ্রমাণ করেছে। সে সময় এই অ্যাকাউন্ট থেকে একটি কোয়াডকপ্টারের ছবি শেয়ার করা হয়েছিল এবং মিথ্যে দাবি করা হয়েছিল যে নেপালি বাহিনী ভারতীয় নজরদারি ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে।
ফেসবুকে ভাইরাল
এই একই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করে আমরা দেখতে পাই এই একই ছবি একই মিথ্যে দাবির সঙ্গে ফেসবুকেও শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা দেখতে পাই যে এই দুটি ছবি পুরনো এবং এই ধরনের কোনও ঘটনার সঙ্গে ছবিগুলির একেবারেই কোনো যোগাযোগ নেই। একটি ছবি ২০১১ সালে লিবিয়ায় তোলা, এবং অন্যটি কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুর।
প্রথম ছবি
আমরা দেখতে পাই যে এই ছবিটি ২০১১ সালের ১৯ মার্চ পূর্ব লিবিয়ার বেনঘাজির শহরতলিতে একটি লিবিয়ার যুদ্ধ বিমান গুলি করে নামানোর ছবি। ছবিটি তোলেন জার্মান ফোটোগ্রাফার আনজা নিয়েদ্রিংহাউস। সিবিএস নিউজ তাদের প্রতিবেদনে জানায় যে এটি মোয়াম্মার গদ্দাফি পরিচালিত সরকারের বিমান, না কি বেনঘাজির বিদ্রোহীদের বিমান, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। সে সময় লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছিল।
আমরা এপি ইমেজের আর্কাইভে এই একই ছবি দেখতে পাই।
দ্বিতীয় ছবি
গুগল ইমেজে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা দেখতে পাই যে এই ছবিটি বেঙ্গালুরুর পূর্ব শহরতলিতে একটি মিলিটারি বিমানবন্দরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর মাইরেজ-২০০০ ফাইটার ভেঙে পড়ার পর তোলা হয়। ছবিটি ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তোলা হয়।
২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দ্য স্টেটসম্যান তাদের প্রতিবেদনে জানায় যে বেঙ্গালুরুর কাছে সামরিক বিমান ঘাঁটির রানওয়েতে এই বিমান দুর্ঘটনায় স্কোয়াড্রন লিডার সমীর আবরোল এবং সিদ্ধার্থ নেগি গুরুতর আহত হয়ে মারা যান। এইচএএল এই এয়ারক্র্যাফটের আধুনিকীকরণ করার পর এই সময় তার কার্যক্ষমতা দেখা হচ্ছিল।
ডেকান হেরাল্ড তাদের প্রতিবেদনে জানায় হিন্দুস্তান এয়ারোনটিকস লিমিটেড জানিয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। হিন্দুস্তান এয়ারোনটিকস লিমিটেড ওই বিমান ঘাঁটির কর্ণধার এবং তারাই এখানকার কাজকর্ম দেখাশোনা করে।
এছাড়া প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর একটি তথ্য যাচাই সংস্থা পিআইবি ফ্যাক্টচেক এবং তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে যে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
ভারত-নেপাল সীমান্তে কোট খড়ক সিং পেরনাওয়ান অঞ্চলে ভারতের তরফ থেকে বিমান হানার বিষয়ে আমরা কোনও বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাইনি।
আরও পড়ুন: রাম মন্দিরের নক্সা বলে ৬ বছরের পুরনো থ্রি-ডি অ্যানিমেশন ভিডিও ভাইরাল