সোশাল মিডিয়ায় পাকিস্তানের সিন্ধ ও পাঞ্জাব প্রদেশে হওয়া হিংসাত্বক ঘটনার তিনটি বিচ্ছিন্ন ছবিকে মিথ্যে করে হুগলি জেলার তেলিনিপাড়ায় ঘটা সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ছবি বলা হচ্ছে।
ফেসবুক পোস্টে তিনটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। এই ফেসবুক পোস্টের প্রথম ছবিতে হালকা আশমানি রঙের কুর্তা পরিহিত এক প্রৌঢ়কে দড়ির খাটায়ায় বসে থকতে দেখা যাচ্ছে। মাথায় আঘাতের ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। পরের দুটি ছবিতে লেলিহান শিখায় দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখা যায় খড়ের চালের বাড়ির একাংশ।
ছবিগুলি শেয়ার করে ফেসবুকে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "হুগলীর তেলেনি পাড়ায় জিহাদীরা জ্বালিয়ে দিলো অবলা হিন্দুদের ঘরবাড়ি তার সঙ্গে চলছে হিন্দু মা বোনের ইজ্জত হরণের পালা আর বেগম কেড়ে নিয়েছে হিন্দুদের বাচার অধিকার, এরজন্য দায়ী একমাত্র হাওয়াইচটি"
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে, আর্কাইভ করা আছে এখানে।ফেসবুক পোস্টে হিন্দি ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার তেলিনিপাড়াতে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের ঘরদোর আগুনে জ্বালানো হচ্ছে, সরকার এখন ধ্যান দিক এই দিকে, জল মাথার অনেকটা উপরে চলে গেছে, কট্টর হিন্দুদের কিন্তু এখন ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছে।"
(মূল হিন্দি ক্যাপশন: "पश्चिम बंगाल के हुगली जिले के टेलनीपारा में दलित हिन्दुओं के घरों को जलाया जा रहा है सरकार ध्यान दें अब पानी सर के ऊपर से जा रहा है अब शहन सकती हम कट्टर हिंदुओं की खत्म हो रही है।।")
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
টুইটেও শেয়ার করা হয়েছে ছবিটি। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
पश्चिम बंगाल के हुगली जिले के टेलनीपारा में दलित हिन्दुओं के घरों को जलाया जा रहा है। pic.twitter.com/BSE1Zw5JpF
— #आत्म_निर्भरभारत (@bababairagi12) May 13, 2020
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে জানতে পারে ছবিগুলি ১০ মে ২০২০ রবিবার পশ্চিমবঙ্গের হুগলীর তেলিনিপাড়ায় ঘটে যাওয়া গোষ্ঠী সংঘর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
বুম 'ভয়েস অফ পাকিস্তান মাইনরিটি' নামের এক টুইটার ব্যবহারকারীকে খুঁজে পায়। ওই টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ১১ মে ২০২০ আহত ওই ব্যক্তি ও মহিলার ছবি টুইট করা হয়েছিল। টুইটটিতে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের রহিম ইয়ার খান এলাকার ঘটনা বলা হয়েছে। ধর্ম পরিচয়ে হিন্দু গুলাব ও তার স্ত্রীকে প্রতিবেশী গুন্ডারা আক্রমণ করে। মহিলা যৌণ নিগ্রহেরও শিকার হন।
Once again attack on #Hindu community, Gulab and his wife were attacked by neighborhood goons in Rahimyar khan, Punjab.
— Voice of Pakistan Minority (@voice_minority) May 11, 2020
His wife was sexually assaulted in front of Public.
Shame on you people who are torturing minorities in #Pakistan. @KashifMD @bilalfqi @NatashaFatah @AWGoraya pic.twitter.com/4m2wfeQJqB
ঘটনাটি নিয়ে ১২ মে ২০২০ গালফ নিউজে একটি প্রতিবেদনেও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এই প্রতিবেদনে আহত ব্যাক্তিদের পরিচয় যাচাই করা হয়নি। প্রতিবেদনটির শিরোনাম লেখা হয়েছিল, "পাকিস্তান: পাঞ্জাবের গ্রামে হিন্দু দম্পতির উপর নির্মম হামলা, কারণ অজ্ঞাত।"
(মূল ইংরেজী শিরোনাম: "Pakistan: Hindu couple in rural Punjab brutally attacked, reason unclear.")
বুম পাঞ্জাব পুলিশের একটি টুইট খুঁজে পায়। ছবি সহ এক জনের টুইটের প্রত্যুত্তরে বলা হয়েছে সম্পত্তিগত বিবাদের জন্য ঐ দম্পতির উপরে আক্রমণ করা হয়েছে, ঘটনাটিতে কোনও বিদ্বেষের যোগ নেই।
یہ بنیادی طور پر زمین کی ملکیت کا تنازع ہے جس کے ہندو اور مسلم دونوں خاندان دعویدار ہیں جس پر فریقین باہم دست و گریبان ہوئے دونوں طرف سے زخمی ہونے والے افراد کی میڈیکل رپورٹ پر کاروائی جاری ہے جس کے بعد مزید قانونی کاروائی کی جائے گی.
— Punjab Police Official (@OfficialDPRPP) May 11, 2020
জ্বলন্ত ঘরবাড়ির ছবি
বুম আগুনের লেলিহান শিখার গ্রাসে জ্বলতে থাকা ঘরবাড়ির ভাইরাল ছবির হদিশ পায় দুজন পাকিস্তানি টুইটার ব্যাহারকারীর টুইটে। ওই টুইট অনুযায়ী, এই ছবিগুলি সিন্ধ প্রদেশের থারপারকারে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ছবি।
A report coming from #Tharparkar Near Border area of Sindh
— Aneesa Baluch انیسہ بلوچ (@AneesaBaluch) May 11, 2020
Around 21 houses of Hindus are burnt in Tadados, #Tharparkar, Sindh
The source says that some people, including children are burnt & in critical condition.
This is condition of #Hindus in Pakistan.#SaveUsandHindusByPak pic.twitter.com/BETXZwKR6L
At the same time while Kabul and Ningarhar is burning because of the Taliban terrorists attacks sponsored by Pakistan, Pakistan Army burned a whole village in Baluchistan!
— Col Rahman Rahmani (@rahmanrahmanee) May 12, 2020
The whole region must stand against Pakistan and its terrorist activities! pic.twitter.com/4mQ0279y7G
যদিও বুমের পক্ষে স্বাধীনভাবে ঘটনাটি যাচাই করা যায়নি তবে বুম এব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে এই ছবিগুলি হুগলীর তেলিনিপাড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১০ মে রবিবার রাতে লকডাউনের মধ্যেই ভদ্রেশ্বর থানা এলাকার তেলিনিপাড়ায় দু'টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সূত্রের খবর, যথেচ্ছ ইট-পাটকেল ছোড়া থেকে বোমাবাজি ও পরে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
তেলিনিপাড়ায় সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে জেলার স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে।
129 people arrested so far for their alleged involvement in clashes in Telinipara in West Bengal's Hooghly district: State Home Department
— Press Trust of India (@PTI_News) May 14, 2020