হিন্দি সংবাদ-চ্যানেল নিউজ-১৮-এর একটি সাম্প্রতিক সম্প্রচারে দিল্লি পুলিশের এই তত্ত্বটিকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে যে, ৩০ জানুয়ারি, ২০২০-তে জামিয়া মিলিয়ার সামনে বন্দুকবাজের গুলিতে আহত ছাত্র শাদাব ফারুককেই ১৫ ডিসেম্বরের সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেছে, যখন পুলিশ জামিয়া চত্বরে ঢুকে ব্যাপক লাঠি-চার্জ করে। প্রশ্ন হলো, ইতিমধ্যেই ভুয়ো প্রমাণিত এই পুলিশি তত্ত্বটি কে ছড়ালো!
বুম এ ব্যাপারে দিল্লি পুলিশের বক্তব্যও জানতে চায়। ১৫ ডিসেম্বরের ঘটনার তদন্তের ভারপ্রাপ্ত পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (অপরাধ শাখা) রাজেশ দেও জানালেন, তাঁরা ১৫ ডিসেম্বরের ঘটনার ফুটেজে দেখানো ব্যক্তিটির পরিচয় শনাক্ত করে কোনও সরকারি বিবৃতি দেননি।
তিনি বুমকে জানান: "সংবাদমাধ্যমে যে সব রিপোর্ট ভেসে ওঠে, তার সবকিছুর ব্যাখ্যা দেওয়া আমাদের কাজ নয়, যিনি এই রিপোর্টটি লিখেছেন, ব্যাখ্যা দেওয়ার দায় তাঁরই। আমরা অন্তত দুই ব্যক্তিকে জড়িয়ে কোনও বিবৃতি দিইনি, তাই এই খবরের উৎস কী, তাও জানিনা।"
১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ থাকলেও বিকেলের পর ইঁট-পাটকেল ছোঁড়া, গাড়িতে আগুন লাগানো ইত্যাদি মারফত হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি নির্মমতার সঙ্গে ওই বিক্ষোভ দমন করে, যার উত্তরে পুলিশের বক্তব্য, আশপাশের এলাকা থেকে অনেক দাঙ্গাকারী জামিয়া চত্বরে ঢুকে পড়ে ওই বিক্ষোভে যোগ দেয়, যার ফলে পুলিশকে কঠোর হতে হয়।
লাইব্রেরি ভবনের একটি ঘরে ঢুকে ছাত্রদের উপর পুলিশের বেধড়ক লাঠি-চার্জের একটি ফুটেজ ২০২০-র ১৬ জানুয়ারি একটি টুইটার হ্যান্ডেল থেকে ছাড়া হলে জামিয়া আবার সংবাদের শিরোনামে চলে আসে। সেই থেকে ওই ঘটনার নানা ধরনের ফুটেজ ছাড়া হচ্ছে, স্বতন্ত্র বিবরণী ও ব্যাখ্যা দিয়ে।
১৭ ফেব্রুয়ারি বুম এমনই একটি ভুয়ো বিবরণীর পর্দাফাঁস করে, যেখানে দাবি করা হয়েছিল যে, শাদাব ফারুক এবং ১৫ ডিসেম্বরের ঘটনার ফুটেজে দেখা অন্য জামিয়া ছাত্র মহম্মদ আসরফ ভাট একই ব্যক্তি।
আরও পড়ুন: মিথ্যা: সিসিটিভি দৃশ্যেও রয়েছে গুলিতে আহত জামিয়া ছাত্রটি
এই ভুয়ো দাবিটি ছড়ানোর ক্ষেত্রে দায়ী ছিল বেশ কয়েকটি যাচাই করা টুইটার হ্যান্ডেল। কিন্তু পরের দিন, অর্থাৎ ১৭ ফেব্রুয়ারি নিউজ-১৮-এর একটি সংবাদ বুলেটিন এই ভুয়ো দাবিটিকে বিশ্বাসযোগ্য করতে নির্ণায়ক ভূমিকা নেয়। চ্যানেলটির তরফে দাবি করা হয়, পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল নাকি লাইব্রেরির ফুটেজে দেখা ব্যক্তিকে শাদাব ফারুক বলেই শনাক্ত করেছে। এটা স্পষ্ট নয় যে, খবরের উত্স দিল্লি পুলিশের কোনও সরকারি বয়ান, নাকি অন্য কোনও পুলিশি উৎস, কেননা সংবাদ উপস্থাপক তাঁর ভাষ্যে পুলিশের সরকারি জবানির কথা উল্লেখ করেন, কিন্তু সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার জানান, পুলিশের একটি সূত্র থেকে বিষয়টি জানা গেছে।
এটাও স্পষ্ট নয় যে নিউজ-১৮ এই খবরের সারবত্তা যাচাই করতে শাদাব ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল কিনা।
নীচে ক্লিপটি দেখুন:
जामिया हिंसा पर कौन सच्चा- कौन झूठा?#अखाड़ा@AnchorAnandN pic.twitter.com/oMAFo0XVjf
— News18Hindi (@HindiNews18) February 17, 2020
টুইটটি দেখা যাবে এখানে। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
কিন্তু নিউজ-১৮ এই ভুয়ো খবর প্রচার করার আগেই ১৬ ফেব্রুয়ারিতেই বেশ কয়েকটি টুইটার হ্যান্ডেল এই দুই ছাত্রকে জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর পোস্ট ছাড়ানো হয়। নিউজ-১৮ যে দুটি ছবি দেখিয়ে দুই পৃথক ছাত্রকে অভিন্ন ব্যক্তি বলে চালায়, তার আগেই একই ছবি সোশাল মিডিয়ার ভুয়ো প্রচারেও ভাইরাল হয়।
দেখুন প্রথম টুইট, দ্বিতীয় টুইট, তৃতীয় টুইট
এর পরেই বুম তথ্য-যাচাই করে দেখে, দুটি ছবিতে দেখানো দুই ব্যক্তি এক ও অভিন্ন ব্যক্তি নন, আলাদা-আলাদা ব্যক্তি। আমরা দেখি, সিসিটিভি ফুটেজে দেখানো ব্যক্তিটি শাদাব ফারুক নন, বরং তিনি হলেন মহম্মদ আসরফ ভাট।
শাদাব ফারুক নিজেও বুম-এর কাছে জানিয়েছেন যে, লাইব্রেরির ছবিতে দেখানো ব্যক্তিটি তিনি নন, এবং তিনি যে সেদিন জসন-এ-রেক্তা নামে একটি উর্দু কবিতা পাঠের আসরে উপস্থিত ছিলেন, তার প্রমাণও আমাদের দেখান। ফারুক নিউজ-১৮ সংবাদ-চ্যানেলের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে একটি টুইটও করেছেন।
I ask for an apology letter from @News18India
— Shadab Najar (@ashu_najar) February 20, 2020
for defaming me in this video (Kyunki Dilli police ka dawa hai).
Otherwise, I'll be filing a defamation case against the channel.https://t.co/7s5INCkpAc
বুমকে শাদাব জানান: "ভুয়ো ব্যাখ্যা প্রচার করে দিল্লি পুলিশ নিজেকে শান্তিপ্রিয় প্রমাণ করতে পারবে না। দিল্লি পুলিশ একটি পাশবিক শক্তি। আমার বদনাম করে দিল্লি পুলিশের সেই হিংস্রতাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করে নিউজ-১৮ গণতন্ত্রের সেই চতুর্থ স্তম্ভকেই দুর্বল করছে, যার উপর সে দাঁড়িয়ে রয়েছে।"
বুম নিউজ-১৮-এর হিন্দি বিভাগের সম্পাদক প্রবাল প্রতাপ সিং-এর সঙ্গেও এই প্রশ্নে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি এক মাসের জন্য শহরে ছিলেন না, তাই এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারবেন না।
২১ ফেব্রুয়ারি বুমে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নিউজ-১৮-এর তরফে দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
जामिया छात्र शादाब के वायरल वीडियो मामले में NEWS18 ने जताया खेद#SauBaatKiEkBaat@KishoreAjwani
— News18 India (@News18India) February 21, 2020
अन्य खबरें- https://t.co/36nNiSA6Ji pic.twitter.com/6Pu2vFecIP
অতিরিক্ত সংযোজন: স্বস্তি চ্যাটার্জি ও নিবেদিতা নিরঞ্জনকুমার