ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে একটি পার্কে পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছে, ব্যয়ামাগারের কিছু যন্ত্রপাতি কোনও মানুষ তাদের ব্যবহার না করলেও নিজেরাই ওঠানামা করছে। এটিকে একটা ভৌতিক ঘটনা বলে বর্ণনা করার চেষ্টা হলেও আসলে এর পিছনে কোনও অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপার নেই।
সোশাল মিডিয়ায় এই ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এই শোল্ডার-প্রেস যন্ত্রটিকে কেউ ব্যবহার না করলেও এটি নিজে-নিজেই যখন নড়াচড়া করছে, তখন একে নিশ্চয় ভূতে পেয়েছে এবং সেই ভূতটা হয়তো জিমে গিয়ে পেশি বানাতে আগ্রহী।
বুম দেখলো, ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসির ঘটনা এবং এর একটি দীর্ঘতর ভিডিও হাতে এসেছে, যেটি ঝাঁসির পুলিশই তুলেছিল এটা দেখাতে যে, জিম-এর এই যন্ত্রপাতিগুলো ত্রুটিপূর্ণ এবং সেগুলোয় এত বেশি করে গ্রিজ মাখানো হয়েছে, যে কেউ এগুলি ব্যবহার না করা সত্ত্বেও নিজে-নিজেই তারা হাত-পা নাড়ছে। ঝাঁসি পুলিশের ডেপুটি সুপার সংগ্রাম সিং বুমকে জানালেন, "সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি মূল ভিডিওকে কাটছাঁট করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে দেখানো হয়েছিল যে, তিনি নিজে ওই যন্ত্রপাতি সরিয়ে রেখে দেখাচ্ছিলেন যে, যখন যন্ত্রের নড়াচড়া থেমে যাওয়ার কথা, তার ৩০ সেকেন্ড পরেও থামছে না।"
সংগ্রাম সিং বললেন, "ভাইরাল ভিডিওটি এমন ভাবে কাটছাঁট করা হয়েছে যে, আমিই যে যন্ত্রটা সরাচ্ছি, সেটা দেখানো হচ্ছে না, দেখানো হয়েছে যেন যন্ত্রটির বাহুগুলো নিজে থেকেই নড়াচড়া করছে আর অন্যান্য পুলিশরা যেন ভূতগ্রস্ত সেই যন্ত্রটির নড়াচড়া হাঁ করে দেখছে।"
ফেসবুক ও টুইটারে ভিডিও ক্লিপটি ভাইরাল করে দাবি করা হয়েছে, এটি দিল্লির একটি পার্কের ঘটনা, যেখানে একটি ভূত জিম-এর যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যয়াম করছে।
ফেসবুকে এই
ভিডিওটিই একই ভুল ক্যাপশন দিয়ে ভাইরাল হয়েছে যে, দিল্লির পার্কে ভূতেরা ব্যায়াম করছে।
তথ্য যাচাই
বুম ঝাঁসির পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে স্বভাবতই তারা গোটা বিষয়টাকে ভুয়ো বলে নস্যাৎ করে দেন। তাঁরা বলেন—"ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে একবারের জন্যও দেখানো হয়নি যে পুলিশই জিম-এর যন্ত্রগুলোকে সরিয়ে নাড়িয়ে রাখছে, শুধু তার পরের সময়টুকু অর্থাৎ কোনও লোকের সাহায্য ছাড়াই যন্ত্রগুলো নড়ছে-চড়ছে, এমন দেখানো হয়েছে।"
ঝাঁসির ডেপুটি পুলিশ সুপার জানান, পুলিশের কাছে ভাইরাল হওয়া অন্য একটি ভিডিও এসে পৌঁছয়, যাতে দেখা যাচ্ছে, একদল যুবক দাঁড়িয়ে ওই যন্ত্রপাতিগুলোর নড়াচড়া মজা করে দেখছে।"এর পরই আমি ঘটনাস্থলটা শনাক্ত করি এবং নিজে সেখানে পৌঁছই। আমি ওখানকার দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি যে ওই শোল্ডার-প্রেস যন্ত্রটা বসানোর সময় থেকেই ও রকম, ওর যন্ত্রাংশগুলোয় বেশি গ্রিজ পড়ে যাওয়ায় নিজে-নিজেই হাত-পা নাড়তে থাকে।"
তিনি বলেন—ওই যন্ত্রটা কেউ ব্যবহার করার পর এমনিতেই কয়েক সেকেন্ড নড়াচড়া করার কথা। কিন্তু সম্প্রতি ওতে বেশি করে তেল লাগিয়ে দেবার ফলে ব্যবহার করে চলে যাওয়ার পরেও বাড়তি কিছুক্ষণ তেল বেশি থাকার ফলে নিজে-নিজেই আরও নড়াচড়া করে। তরুণরা সেটাকেই একটা মজার ভূতুড়ে ব্যাপার মনে করে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে দেখে। এটাকে একটা আদিভৌতিক কাণ্ড ধরে নিয়েই তারা বিষয়টা ভিডিও রেকর্ডও করে এবং তারপর সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়।
ঝাঁসি পুলিশের সরকারি টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও এই কাটছাঁট করা ভিডিও সহ দীর্ঘতর ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
ওই টুইটার হ্যান্ডেল থেকে প্রকাশিত দীর্ঘতর ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, সংগ্রাম সিংয়ের এক সহকারী এগিয়ে গিয়ে শোল্ডার-প্রেস যন্ত্রটা একটুখানি হাত দিয়ে ছুঁতেই সেটি পরবর্তী ৩৯ সেকেন্ড ধরে নড়তে লাগলো।
সংগ্রাম সিং নিজেই দীর্ঘতর ভিডিওটি বুমকে পাঠিয়ে দেন এবং বলেন, তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই ভিডিওটি তুলিয়েছেন। তাঁকে জিগ্যেস করা হয়, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে পুলিশদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে কেন? উত্তরে তিনি বলেন: "আমি তো আমার লোকজন নিয়েই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম আর আমাদের দেখে অন্য কিছু উৎসক লোকও ভিড় জমিয়ছিল। তাদের মধ্যেই কেউ ক্যামেরা ফোনে ছবি তুলে নিয়ে পরে তা এমন ভাবে কাটছাঁট করে প্রচার করে থাকবে, যাতে মনে হয়, পুলিশ নিজেও এই ভৌতিক কর্মকাণ্ডের কথা অবগত রয়েছে।"
ঝাঁসি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাহুল শ্রীবাস্তবও এই ভূতেদের ব্যায়াম করার ঘটনাটি টুইট করে বলেন, "যে সব বদমায়েশরা এই সব গুজব ছড়াচ্ছে, শিগ্গিরই তারা নিজেরাও লক-আপের ভিতর ভূতেদের ক্রিয়াকলাপ দেখতে পাবে।"