সোশাল মিডিয়ায় ভুয়ো ব্লগে লেখা প্রতিবেদন শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে করোনা ভাইরাসের সতর্কতায় ১৯ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ থাকবে পশ্চিমবঙ্গে। নবান্নে এক বৈঠকে এমনই নাকি জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুম যাচাই করে দেখেছে ১৬ মার্চ সোমবারের ওই বৈঠকে করানোভাইরাসের সতর্কতার কথা ভেবে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩১ মার্চ থেকে বাড়িয়ে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধের কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
ভুঁইফোড় ব্লগ যেমন উত্তরবঙ্গ গ্রামোন্নয়ণ ও বং এক্সক্লসিভ এই ধরণের ভুয়ো শিরোনামে সংবাদ প্রচার করেছে। ফেসবুকে সেই খবরের লিঙ্ক অনেকেই শেয়ার করেছেন।
এরকম একটি ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ করা আছে এখানে।
উত্তরবঙ্গ গ্রামোন্নয়ণ তাদের প্রতিবেদনে শিরোনাম লিখেছে, ''করোনার কোপ এবার ইন্টারনেটে, ১৯শে মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ইন্টারনেট পরিষেবা : ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর''
প্রতিবেদনের ভেতরে উত্তরবঙ্গ গ্রামোন্নয়ণ লিখেছে, ''মারণ ভাইরাসের থেকে সতর্কতায় রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩১ মার্চ থেকে বাড়িয়ে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হল ও তার সাথে সাথে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে আগামী ১৯শে মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত।''
বং এক্সক্লুসিভ নামে আরেকটি ব্লগ ওয়েবসাইট তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, ''করোনার কোপে এবার ইন্টারনেট আগামী ১৯শে মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ''
প্রতিবেদনটিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করতে ব্যবহার করেছে এবিপি আনন্দের সংবাদের ছবি। যেখানে লেখা রয়েছে, ''করোনার কোপে এবার ইন্টারনেট। আগামী ১৯ শে মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে।''
প্রতিবেদনটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ১৯শে মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধের সত্যতা নিয়ে নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমের কোনও প্রতিবেদন খুঁজে পায়নি। করোনাভাইরাস নিয়ে নবান্নে ১৬ মার্চ প্রেস কনফারেন্স করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্সের ভিডিও নীচে দেওয়া হল।
এই প্রেস কনফারেন্সে ১৮৯৭ সলের মহামারী আইন লাগু ও ২০০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রেস কনফারেন্সে ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ করার ব্যাপারে কোনও নির্দেশের কথা বলেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী সোমবার ১৬ মার্চ নবান্নে করোনোভাইরাস মোকাবিলায় কনফারেন্স করার আগে পর্যালোচনা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, রাজ্যের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থকাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রাজ্যের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহ, অডিটোরিয়াম, স্টেডিয়াম এবং রিয়েলিটি শো আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই সংক্রান্ত আনন্দবাজারের প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে।
বুম ১৬ মার্চ ২০২০ প্রচারিত এপিবি আনন্দের অনুষ্ঠানের ইউটিউব ভিডিওর সঙ্গে ভুয়ো ভাইরাল ছবির তুলনা করে দেখেছে। আসল উইন্ডো ও নকল ভাইরাল হওয়া ছবিটির মধ্যে হরফের তারতম্য রয়েছে।
ভারতে ডিজিট্যাল রাইটস নিয়ে আইনি আন্দোলন করছে ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন। কোরোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন সংস্থা ঘরে বসে কাজের নিদান দিয়েছে, আর তার জন্য অপরিহার্য দ্রুত গতির অবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পরিসেবা। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যেন এমতাবস্থায় ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ না করে তার আবেদন জানানো হয়েছে ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন এর তরফে। ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ হলে তা তুলে নেওয়ার আর্জি জানায়। ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে করোনা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধের ব্যাপারে কোনও প্রতিবেদন খুঁজে পায়নি।
Due to COVID-19, many businesses are initiating "work from home" protocols. Significant enterprise grade activities will stress network capacity. We write to the Government to take steps:
— Internet Freedom Foundation (IFF) (@internetfreedom) March 18, 2020
(1/6)https://t.co/1Xl2uSCBZz
বুমের তরফে এবিপি আনন্দ কতৃপক্ষকে ইমেল পাঠানো হয়েছে। তাদের তরফে প্রত্যুত্তর পাওয়া গেলে প্রতিবেদনটি সংস্করণ করা হবে।