হায়দরাবাদে মহিলা পশু-চিকিৎসকের গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তরপ্রদেশের এক স্বঘোষিত সাধু নরসিংহ বানির একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। নরসিংহর দাবি, অভিযুক্ত হিসাবে গ্রেফতার হওয়া ৪ জনের মধ্যে ৩ জন অর্থাৎ নবীন, শিব ও কেশবুলু, সকলেই আসলে নাবালক মুসলিম এবং পুলিশ তাদের ইচ্ছাকৃতভাবেই ভুয়ো হিন্দু নাম দিয়েছে।
২৭ নভেম্বর রাত্রে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর তেলেঙ্গানার গণধর্ষিতা ও শ্বসরোধ করে নিহত মহিলা পশু-চিকিত্সকের আগুনে ঝলসানো দেহ খুঁজে পাওয়া যায় তার পরদিন, ২৮ নভেম্বর। সারা দেশ জুড়ে এই অপকাণ্ডে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং ধর্ষক সন্দেহে ৪ ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করে—মহম্মদ আরিফ, জল্লু শিবা, জল্লু নবীন এবং চিন্তাকুন্টা চেন্নাকেশবুলু। ডিসিপি প্রকাশ রেড্ডি নিউজ মিনিটকে বলেন, যে পুলিশের থেকে অভিযুক্তরা অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের এনকাউন্টারে মারা পরে।
বেশ কিছু দক্ষিণপন্থী টুইটার হ্যান্ডেল এবং ওয়েবসাইট ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়ার চেষ্টা করে ধর্ষক ও ঘাতক হিসাবে কেবল মহম্মদ আরিফের নাম উল্লেখ করে এটি মুসলিমের কাজ বলে চালাতে চায়। নরসিংহের দাবির মধ্যেও সেই প্রয়াসই লক্ষ্য করা গেছে। পোস্টকার্ড নিউজ-এর প্রতিষ্ঠাতা মহেশ হেগড়ে এবং সুদর্শন নিউজ-এর প্রতিষ্ঠাতা সুরেশ চাভাঙ্কে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, পুলিশ অন্যায়ভাবে হিন্দুদের এই অপকর্মের দায়ে গ্রেফতার করেছে। দক্ষিণপন্থী সংবাদমাধ্যম স্বরাজ্য ধর্ষক হিসাবে কেবল মহম্মদ আরিফের নামই উল্লেখ করে।
২ ডিসেম্বর নরসিংহ তার ফেসবুক পেজ ইয়াতি নরসিংহানন্দ সরস্বতী-তে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেন, "ধর্ষণকারীরা সকলেই মুসলিম, কিন্তু সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের তিনজনকে হিন্দু নাম-পরিচয় দিয়েছে।"
ভিডিওটিতে তার দাবি, "পুলিশ ধর্ষণের দায়ে ৪ জনকে গ্রেফতার করে, যাদের মধ্যে ৩ জনই নাবালক l যেহেতু তিনজনই নাবালক, তাই পুলিশ ইচ্ছে করেই তাদের হিন্দু নাম সাজিয়ে দেয়। সত্য ঘটনা এটাই যে ওই বাকি তিনজনও মুসলমান এবং তাদের হিন্দু নাম দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র ইসলামের শয়তানি আড়াল করতে এবং হিন্দুদের বদনাম করতে।" তার পরেই তিনি, "দেশজুড়ে হিন্দুদের জেগে উঠতে" এবং সরকারকে "হিন্দুদের এই অপমানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে" আহ্বান জানান।
নরসিংহ, যিনি ইয়ানি নরসিংহানন্দ সরস্বতী নামেও পরিচিত, তিনি উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের এক স্বঘোষিত সাধু এবং সেখানকার দশনা দেবী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত।
ভিডিওটি দ্রুত টুইটার, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হয়ে যায় এবং বুম-এর হেল্পলাইন নম্বরেও জমা পড়ে।
অন্যান্য টুইটার হ্যান্ডেলও একই ভুয়ো দাবি জানাতে থাকে যে অভিযুক্ত তিন হিন্দু নামধারী নবীন, শিব এবং কেশবুলু নাবালক।তথ্য যাচাই
গ্রেফতারির কয়েক ঘন্টা পরেই ২৯ নভেম্বর সায়বরাবাদের পুলিশ কমিশনারের সাংবাদিক বৈঠকে বুম ঘটনা সম্পর্কে বিশদে জানতে পারে। তাতে ধৃতদের সবার পরিচয় জানানো হয়।
ওই প্রেস বিবৃতির বুম সংগৃহীত প্রতিলিপি থেকে দেখা যাচ্ছে—অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি এবং সংগৃহীত প্রমাণ থেকে স্পষ্ট যে নিম্নোক্ত ৪ ব্যক্তি এই কাণ্ডে লিপ্ত ছিল:
১) মহম্মদ আরিফ, বয়স ২৬ বছর, পিতা হুসেন
২) জল্লু শিবা, বয়স আনুমানিক ২০, পিতা রাজাপ্পা
৩) জল্লু নবীন, বয়স আনুমানিক ২০ বছর, পিতা ইয়ালাপ্পা
৪) চিন্তাকুন্টা চেন্নাকেশবুলু, বয়স আনুমানিক ২০ বছর
এ ছাড়া আমরা কয়েকটি সংবাদ রিপোর্টও দেখেছি, যেখানে অভিযুক্তদের পরিবারের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদমাধ্যম দ্য কুইন্ট নবীন, শিবা ও কেশবুলু সহ সব অভিযুক্তেরই পরিবারের লোকের সাক্ষাৎকার নেয়।
পরিবারের সদস্যরা অভিযুক্তদের যে নাম-ধাম, পিতৃপরিচয় জানিয়েছে, তার সঙ্গে সাইবরাবাদ পুলিশের দেওয়া তথ্য সম্পূর্ণ মিলে গেছে। তা ছাড়া বুম পুলিশ কমিশনার ভি সি সজ্জনারের সঙ্গেও যোগাযোগ করে, যিনি ধৃত তিনজনের নাবালক হওয়ার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।