অগস্টে, অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আগে, যোগী আদিত্যনাথকে তাঁর বাসভবনে বাজি পোড়াতে দেখা যাচ্ছে একটি ভিডিওয়। সেটি এখন ভাইরাল হয়েছে এই দাবি সমেত যে, পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ করা হলেও, উত্তরপ্রদেশ সহ অনেক রাজ্যে ওই নিষেধ অমান্য করা হয়।
ভিডিওটির সঙ্গে জোড়া হয়েছে অন্য একটি ক্লিপ। সেটিতে বুলন্দশহরে একটি বাচ্চাকে কান্নাকাটি করতে দেখা যাচ্ছে, কারণ বাজি বিক্রি করার জন্য তার বাবাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে উত্তর প্রদেশের পুলিশ।
সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা উত্তরপ্রদেশে আদিত্যনাথ পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ এনেছেন।
ভিডিওটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "দুটি ভিডিওই উত্তরপ্রদেশে তোলা"। দ্বিতীয় ভিডিওটিতে একটি বাচ্চা মেয়েকে পুলিশের জিপের গায়ে মাথা ঠুকতে দেখা যাচ্ছে। সেটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, "বাজি বিক্রি করার জন্য এই মেয়েটির বাবাকে পুলিশ গ্রেফতার করে"। আর যেটিতে যোগী আদিত্যনাথকে বাজি পোড়াতে দেখা যাচ্ছে, সেটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, "দিওয়ালিতে বাজি পোড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ"।
পোস্টগুলি নীচে দেখা যাবে; আর্কাইভ দেখা যাবে এখানে, এখানে ও এখানে।
আরও পড়ুন: মিথ্যে দাবিতে ছড়াল অমিত শাহ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যান্নভোজের ছবি
তথ্য যাচাই
বুম দেখে দুটি ভিডিওর ক্যাপশনই বিভ্রান্তিকর। যে ভিডিওটিতে পুলিশ একজন বাজি বিক্রেতাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, সেটি সত্য এবং সাম্প্রতিক। তাছাড়া এও উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় সোশাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং ওই বাজি বিক্রেতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যেটিতে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে, সেটি অগস্টে তোলা আর দীপাবলি ছিল ১৪ নভেম্বরে।
যে ভিডিওতে আদিত্যনাথকে বাজি পোড়াতে দেখা যাচ্ছে, সেটির ডান দিকের ওপরের কোণে এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল-এর (এএনআই) লোগো রয়েছে। আমরা ভিডিওটির জন্য সার্চ করি। তার ফলে, ৪ অগস্ট ২০২০ তে এএনআই-এর করা একটি টুইট দেখতে পাই। তাতে ওই ভিডিওটি ছিল।
টুইটটিতে বলা হয়, "#দেখুন, আগামী কাল অযোধ্যায় রাম মন্দিরের শিলান্যাসের আগে, 'দীপউৎসবের' অঙ্গ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ লখন্উয়ে তাঁর সরকারি বাসভবনে বাজি পোড়াচ্ছেন।"
এরপর 'ফাদার অফ এ গার্ল অ্যারেস্টেড ফর সেলিং ক্র্যাকার্স' (বাজি বিক্রি করার জন্য মেয়ের বাবাকে গ্রেফতার করা হয়) কি-ওয়ার্ডগুলি দিয়ে আমরা ইউটিউবে সার্চ করি। তার ফলে, আমরা বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন দেখতে পাই যা থেকে স্পষ্ট হয় যে, ঘটনাটি গত সপ্তাহে ঘটেছিল। ১৪ নভেম্বর ২০২০তে, এবিপি নিউজ ইউটিউবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে ওই ভিডিওটি আছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাচ্চা মেয়েটির প্রতি 'অমানবিক' আচরণ করার জন্য পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয় উত্তরপ্রদেশ সরকার। এবিপি নিউজের ভিডিওটি নীচে দেখা যাবে। ওই ঘটনার ওপর আরও রিপোর্ট দেখা যাবে এখানে ও এখানে।
দিওয়ালির আগে, বুলন্দশহরে বাজি বিক্রি ও বাজি পোড়ানর ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। লখনউ সহ উত্তরপ্রদেশের আরও ১২টি শহরে ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বেআইনি বাজি বিক্রি রুখতে পুলিশ নানা জায়গায় অভিযান চালায়। অনেক বাজি বিক্রেতাকে গ্রেফতারও করে। বুলন্দশহরের খুরজায় তেমনই এক অভিযান চালানর সময়, বাচ্চা মেয়েটির ভিডিওটি তোলা হয়। ভিডিওটি ভাইরাল হতেই, আমানবিক আচরণের জন্য ইউপি পুলিশ সমালোচনার মুখে পড়ে। ফলে, মুখ্যমন্ত্রী ওই মেয়েটির বাবাকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর, পুলিশ ও জেলা আধিকারিকদের একটি দল মেয়েটির বাড়িতে উপহার ও মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়। সে বিষয়ে এখানে পড়ুন।
আরও পড়ুন: গুলনাজ খাতুনের জন্য পা মেলালেন তেজস্বী, মিথ্যে দাবিতে ছড়াল ২০১৮'র ছবি