২০১৬ সালে উত্তর-পশ্চিম চিনের নিংশিয়া হুই অঞ্চলে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সফরের সময় তোলা তিনটি ফুটেজকে মিলিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ভুয়ো প্রচার চলছে যে, কোভিদ-১৯ বা করোনাভাইরাস কেন ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের ছুঁতে পারেনি, সেটা জানতেই নাকি তিনি সেখানে সফর করছেন।
সাড়ে তিন মিনিটের এই ভিডিও ফুটেজটিকে চাতুর্যের সঙ্গে সম্পাদনা করে বাংলায় বর্ণনা করা হয়েছে যে, যে-কালান্তক ভাইরাসে ইতিমধ্যেই ৩৩০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, কী ভাবে তার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়, সেটা বুঝতে চিনা প্রেসিডেন্ট একাধিক মুসলিম পরিবারের বাড়ি গিয়ে দীর্ঘ সময় কাটান এবং তাদের জীবনযাত্রার পদ্ধতি অনুসরণ করার চেষ্টা করেন। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই করোনাভাইরাসে ভারতেও ৩০ জন আক্রান্ত হয়েছে।
ভিডিওটিতে চিনা প্রেসিডেন্টের মুসলিম পরিবারগুলির মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ধারাবিবরণীতে বলা হয়েছে যে, শি জিনপিং মুসলিমদের জীবনচর্চা দেখে খুব প্রভাবিত হয়েছেন। "যে সময় গোটা চিন করোনাভাইরাসে কাঁপছে, তখন মুসলিমরা এই সংক্রমণ থেকে মুক্ত সুস্থ জীবন কী ভাবে যাপন করছে, তা চিনা প্রেসিডেন্টকে রীতিমত বিস্মিত করেছে। এখনও চিনের একজন মুসলমানও এই ভাইরাসে সংক্রামিত বা অসুস্থ হয়নি। কেন তা হয়নি এবং কীভাবে তারা নিজেদের সংক্রমণ থেকে নিরাপদ রেখেছে, তা নিয়ে রকমারি জল্পনার অবসান ঘটাতেই চিনা প্রেসিডেন্ট পায়ে হেঁটে ওই অঞ্চলের মুসলিম বাড়িগুলিতে ঘুরে বেড়ান—মুসলিমরা কী খায় এবং তাদের রোজকার অভ্যাস কী রকম, তা সরজমিনে জানতে। আর সে সব জেনে তিনি খুব অবাকও হয়েছেন। মুসলিমদের মাংস কাটার হালাল পদ্ধতিটাও তিনি ঘুরে-ঘুরে দেখেছেন এবং তাঁর মনে হয়েছে, এটাই সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্য প্রস্তুতির পদ্ধতি।"
এর পরেই ভাষ্যকার শি জিনপিং-এর মুখেই নানা কথা বসিয়েছেন—যেমন তিনি নাকি মুসলিমদের কাছে জানতে চেয়েছেন তারা কী ভাবে মাংস কাটে এবং খায়। তার পরের দিনই নাকি চিনা প্রেসিডেন্ট আবার ওই এলাকায় সফরে এসেছেন এবং মুসলিমদের নিরামিষ খাওয়ার পদ্ধতিও খুঁটিয়ে দেখেছেন। এর পরে যখন শি জিন পিং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন, ভাষ্যকারের মতে তখন নাকি তিনি হালাল করে মাংস খাওয়ার পদ্ধতির প্রশংসা করেছেন।বুম এই ভিডিওটির উপরের ডান দিকে JADIDTVBANGLA এই প্রতীক বা লোগোটি দেখতে পায়। ওই নামের ইউটিউব চ্যানেলটি ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ইউটিউবে একই ভিডিও আপলোড করে।
বাংলায় ভিডিওটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে: ''এবার চীনে ইসলাম ধর্ম কায়েম হবে ইনশাআল্লাহ। দেখুন চীনের প্রেসিডেন্ট মোসলমানদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরামর্শ নিচে''
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে চিনের রাস্তায় ছড়ালো শব দেহ? একটি তথ্য যাচাই
বুম দেখে, এই ভিডিওটি তিনটি আলাদা-আলাদা ভিডিও মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং উত্তর-পশ্চিম চিনের নিংশিয়া হুই স্বশাসিত প্রদেশে সফরে গিয়েছিলেন সেখানকার ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণের প্রচেষ্টা জারি রাখার উপর জোর দিতে।
ফুটেজের দ্বিতীয় অংশটিতে (০১৬ থেকে ০:৫০) প্রেসিডেন্ট জিন পিংকে দেখা যাচ্ছে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে। এটিও আপলোড হয় ২১ জুলাই ২০১৬ তারিখে। সে সময় জিন পিং চিনের নিংশিয়া হুই প্রদেশের ইনচুয়ান(Yinchuan) শহরে শিনহেং মসজিদ সফর করছিলেন।
করোনাভাইরাস এবং ধর্মান্তর বিষয়ে ভুল তথ্য
সোশাল মিডিয়ায় বেশ কিছু ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যাতে দাবি করা হচ্ছে, কোনও বিশেষ ধর্মবিশ্বাসে বিশ্বাসী লোকেদের নাকি করোনাভাইরাসের সংক্রমিত হচ্ছে না। এমন কিছু ভুয়ো ক্লিপও ভাইরাল করা হচ্ছে, যাতে দেখানো হচ্ছে, মুসলিমদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয় না বলে অনেক চিনা বা এশীয় নাকি ইসলামে ধর্মান্তরিত হচ্ছেন। এই ব্যাখ্যা বা বিবরণী যে ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন, তা বিশ্বব্যাপী তথ্য-যাচাইকারী সংগঠন খণ্ডন করেছে।