বিগত সপ্তাহের শুরুতে উত্তরাখণ্ডের অরণ্যে শুরু হওয়া অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষিতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বেশ কিছু দাবানলের দৃশ্য জিইয়ে তোলা হয়েছে। বন দফতরের অফিসাররা অবশ্য জানাচ্ছেন, সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এই সব দাবানল উত্তরাখণ্ডের জঙ্গলের আগুনের তুলনায় অনেক বেশি ভয়াবহ ছিল। তাঁদের মতে, এই অগ্নিকাণ্ডে মাত্র ৮১ হেক্টর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ২ লক্ষ ১৯ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বুম নিজেও উত্তরাখণ্ডের দাবানল বলে চালানো ছবিগুলির উৎস অনুসন্ধান করতে সক্ষম হয়েছে।
নেটিজেনরা এই দাবানলের খবর প্রধান গণমাধ্যমগুলি প্রকাশ না করায় কিছুটা চটে গেছেন এবং বিধ্বংসী দাবানলের পুরনো ছবি দিয়ে করা পোস্ট ও টুইটগুলি সমর্থন করেছেন। দক্ষিণবঙ্গে আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের পর এই দাবানলকেও আর একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসাবে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে।
এ ধরনের একটি টুইট আর্কাইভ করা আছে এখানে।
How many of you are aware that our Uttarakhand is burning for the last few days?
— Nausheen Khan (@DrNausheenKhan) May 26, 2020
46 wildfire incidents, 51.34 hectares, 71.05 repository of herbs & wildlife diversity gutted. It's sad to see so much wildlife destroyed.
Bdw 2020, what else?#UttarakhandForestFire@ParveenKaswan pic.twitter.com/mxnp2a5PM1
এ ধরনেরই একটি টুইটের ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "৪৬টি দাবানল এবং প্রায় অর্ধেক বন্যপ্রাণি বিপন্ন l চার দিন ধরে উত্তরাখণ্ড জ্বলছে, অথচ কেউ তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না।" নীচে এই টুইটটি দেখতে পারেন। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
46 Wildfires & Over Half The Wildlife Species In Danger: Uttarakhand Has Been Burning For 4 Days, nobody is talking about this..@narendramodi@PMOIndia #uttarakhandfire#UttarakhandForestFire pic.twitter.com/d78NI4wVn8
— Suraj (@IronicSalt) May 26, 2020
দাবানল বলে চালানো উত্তরাখণ্ডের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের অন্য একটি ছবি দেখতে এখানে ক্লিক করুন। একই ধরনের আগুনের ছবির দৃশ্য দেখতে ক্লিক করুন এখানে এবং এখানে।
ফেসবুকেও এই একই ছবির গুচ্ছ ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম এই সবকটি ছবিরই খোঁজখবর চালিয়ে দেখেছে, উত্তরাখণ্ডের অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে এই সব ছবির কোনও সম্পর্ক নেই।
প্রথম ছবি
এই ছবিটি কলম্বিয়া ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া, যেখানে বলা হয়েছে, ছবিটি গেট্টি ইমেজেস-এর স্বত্ব। ছবিটি তোলেন ডেভিড ম্যাকনিউ এবং ২০০৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এটি গেট্টি ইমেজেস-এর স্টক ছবিতে আপলোড করা হয়। ক্যাপশনে বলা হয়েছে, এটি ক্যালিফর্নিয়ার ফনস্কিনে দাবানলের ছবি।
দ্বিতীয় ছবি
উত্তরাখণ্ডের জঙ্গলের আগুন নিয়ে তোলা টুইটারে ভাইরাল এই ছবিটি স্ক্রল-এ প্রকাশ করা হয় ২০১৬ সালে। ছবিটি তোলেন চিত্রগ্রাহক অনুপ শাহ। অনুপ শাহের ফোটোগ্রাফির ফেসবুক পেজেও আমরা এই ছবিটি আপলোড হতে দেখেছি ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল।
তৃতীয় ছবি
এই ছবিটার খোঁজ করে আমরা দেখেছি, প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার তোলা এই ছবিটি হিন্দু বিজনেস লাইন পত্রিকা ছাপে ২০১৬ সালের মে মাসে, তখন উত্তরাখণ্ডে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
চতুর্থ ছবি
ক্যালিফর্নিয়ার এই দাবানলের ছবিটি নাসার ওয়েবসাইটে ছাপা হয়, যার শিরোনাম ছিল—'আরও ঘন-ঘন দাবানল, আরও দীর্ঘস্থায়ী।' ছবিটির ক্যাপশন ছিল: "২০১৩ সালে ক্যালিফর্নিয়ার ইয়েসোমাইট ন্যাশনাল পার্কের এই বিধ্বংসী দাবানল সে রাজ্যের ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম, যাতে আড়াই লক্ষ একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দু বছর পরেও সেই জঙ্গলের বৃক্ষসম্পদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শেষ করা যায়নি। সৌজন্য: মাইক ম্যাকমিলান/ইউএসএফএস।"
পঞ্চম ছবি
অস্ট্রেলিয়ার দাবানল সংকট নিয়ে তোলা এই ছবিটি ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ডিপ্লোম্যাট ডটকম-এর সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়।
ষষ্ঠ ছবি
এই ছবিটিও আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়ার, গ্রোভল্যান্ড-এর কাছে টুওলুমনে ফ্যামিলি ক্যাম্পের। ছবিটি ২০১৩ সালের অগস্টে যে প্রতিবেদনে ছাপা হয়, তার শিরোনাম ছিল: "উচ্চ পর্যায়ের নেটিভ আমেরিকান দমকলকর্মীরা ইয়েসোমাইট পার্কে আগুন নির্বাপনে ব্যস্ত।"
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ও বন-দফতর বিধ্বংসী আগুনের গুজব উড়িয়ে দিয়েছে
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত একটি টুইটে বলেন, এই ভুয়ো ছবিগুলি উত্তরাখণ্ডের নয়। এ বছর যে সীমিত অগ্নিকাণ্ড সেখানে হয়েছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় তার তীব্রতা অনেক কম ছিল।
A misleading propaganda, using old pics of forest fires of 2016 & 2019 & that of forest fires in Chilean & Chinese forests, is raging on SM. I req everyone to not believe such motivated campaign. Fire incidents reported until yesterday is way less than PYhttps://t.co/d5R4aq5mjW
— Trivendra Singh Rawat (@tsrawatbjp) May 27, 2020
রাজ্যের বন-দফতরও ওই ভুয়ো টুইটগুলি নস্যাৎ করে দিয়েছে।
রাজ্য পুলিশের তরফে আইপিএস অশোক কুমারও টুইটগুলিকে ভুয়ো আখ্যা দিয়ে বলেছেন—যারা এই সব গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Rumours about Forest Fire in uttarakhand using #uttarakhandwildfire #PrayForUttarakhand are completely false and mischievous.. Uttarakhand police is going to lodge FIR against such rumour mongers@ANI @aajtak @ABPNews @PIBHindi @PIBFactCheck @tsrawatbjp @News18India pic.twitter.com/MAli1ZObxm
— Ashok Kumar IPS (@Ashokkumarips) May 27, 2020
আরও পড়ুন: গাঁধী পরিবারকে মিথ্যে করে জোড়া হল ইতালির তুরিনের হেরিটেজ এলাকার সঙ্গে