নারী দিবস উপলক্ষে একটি ১৪ বছরের মুসলিম মেয়েকে এক দিনের জন্য সাময়িকভাবে ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ-এর (ডিএসপি) পদে বসানো হয় মহারাষ্ট্রের বুলধানায়। সেই অনুষ্ঠানের ছবি মিথ্যে সাম্প্রদায়িক দাবি সমেত প্রচার করা হচ্ছে এই বলে যে, মেয়েটি একজন পুলিশ অধিকর্তা হওয়া সত্ত্বেও, তার ধর্মের কারণে সে পুলিশের পোশাক পরেনি।
ছবিতে মেয়েটিকে হিজাব পরে টেবিলের পেছনে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। আর তার সঙ্গে ছবি তোলার জন্য তাকে ঘিরে আছেন পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা।
ছবিটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, "উর্দু মাধ্যমে পড়াশোনা করে প্রথম আইপিএস হলেন এক মুসলিম এসপি। তিনি প্রথম দিনই পুলিশের পোশাকের বদলে ইসলামি পোশাক পরেন!! শিব সেনাকে অভিনন্দন!! গজওয়া-এ-হিন্দ-এর জন্য শিব সেনার অবদানও প্রশংসনীয়।"
(আসল হিন্দি ক্যাপশান: उर्दू माध्यम से पहली IPS बनी महाराष्ट्र मे मुस्लिम SP ! जिसने पहले ही दिन अपना पुलिस ड्रेसकोड छोडकर इस्लामिक ड्रेसकोड अपनाया !! शिव सेना सरकार को खुब खुब अभिनंदन !! गझवा ए हिंद मे शिव सेना का योगदान भी सराहनीय रहेगा)
যে হারে মুসলমানরা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু-বিরোধী সুদর্শণ নিউজ টিভি সাম্প্রদায়িক দিকে থেকে এক উস্কানিমূলক অনুষ্ঠানে তার পেছনে 'চক্রান্তের' ইঙ্গিত করে। দিল্লি হাইকোর্ট অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারে অবশ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চায়নি। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকও অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারে অনুমতি দিয়েছে।
এই দাবিটি সব দিক থেকেই সমালোচিত হয়। ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (আইপিএসএ) একটি বিবৃতিতে ওই বক্তব্যের নিন্দা করে বলে, 'এটি হল এক সাম্প্রদায়িক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন সাংবাদিকতার নিদর্শন।'
যাচাই করার জন্য বুমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও (৭৭০৯০৬৫৮৮) পোস্টটি আসে।
ফেসবুকে ভাইরাল
একই ক্যাপশান দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করলে দেখা যায়, একই মিথ্যে দাবি সমেত সেটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন বেরিয়ে আসে। তাতে বলা হয়, ভাইরাল ছবিতে যে মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে তার বয়স ১৪। নারী দিবসের আগে, মহারাষ্ট্রের বুলধানায় এক দিনের জন্য ডিএসপি পদে বসানো হয় তাকে। প্রতি বছর ৮ মার্চ নারী দিবস পালিত হয়্।
৫ মার্চ ২০২০ তে প্রকাশিত টাইমস অফ ইন্ডিয়া'র প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মালকাপুর তেহসিলের জেলা পরিষদ উর্দু হাই স্কুলের ছাত্রী সহরিশ কাওয়াল এক দিনের জন্য ডিএসপি পদে আসীন হন। ওই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায় যে, প্রশাসন কী ভাবে কাজ করে ও কী ভাবে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সে ব্যাপারে মেয়েদের একটা ধারণা দেওয়ার জন্য বুলধানার কালেক্টার সুমন চন্দ্র ওই অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা করেন।
প্রতিবেদনটির ২.৩২ সময়চিহ্নের মাথায়, ওই মেয়েটি ও তার পাশে একই পুলিশ অফিসারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, যেমনটি দেখা গেছে ভাইরাল ছবিটিতে।
বুম বুলধানার সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশের অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায় যে, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ওই মেয়েটিকে এক দিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত ডিএসপি করা হয়। আরও জানা যায় যে, ওই জেলায় কালেক্টার থেকে এসপির মতো প্রশাসনিক পদ সহ অন্যান্য পদেও একজন করে ছাত্রীকে একদিনের জন্য ভার দেওয়া হয়।
"এই বছর, নারী দিবসের ঠিক আগে, এই জেলায় বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রীদের ভারপ্রাপ্ত এসপি, ডিএসপি, কালেক্টার ও অন্যান্য পদ দেওয়া হয়। ছবিতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি এসপি নন, নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী। এবং এর পেছনে কোনও সাম্প্রদায়িক তাৎপর্য নেই। এই প্রোগ্রামের জন্য বিভিন্ন স্কুল থেকে ছাত্রীদের নেওয়া হয়," এসপির অফিস থেকে জানানো হয়।
৪ মার্চ ২০২০ তে, বুলধানা পুলিশও এই পদক্ষেপ সম্পর্কে একটি টুইট করে। তাতেও এখনকার ভাইরাল-হওয়া ছবিটি আছে। অুনবাদ করলে ক্যাপশনটি হবে এই রকম: "আমিও সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ হতে চাই। আজকের দিনটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ! – মালকাপুর জেলা পরিষদ হাইস্কুলের ছাত্রী এক-দিনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ সহরিশ কাওয়াল-এর আকাঙ্খা। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে বুলধানার সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ ডঃ দিলীপ পাতিল-ভুজবাল-এর উদ্যোগ।"