বুম রাজশ্রী সেলভাকুমার নামে জনৈক ব্যক্তির দুটি টুইটার অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেয়েছে, যাতে ওই দম্পতির ছবি দিয়ে তাঁদের মধ্যে নিষিদ্ধ যৌন সম্পর্কের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এই অ্যাকাউন্টটি মালয়েশিয়ার এক ফিজিওথেরাপিস্ট দম্পতি রিসেলভা রাজেন্দ্র এবং প্রীতিলক্ষ্মী সেলভারাজার ফোটো চুরি করে এই অপকর্মটি সাধন করেছে।
আমরা রাজেন্দ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ছবিটি তাঁর এবং তাঁর স্ত্রী প্রীতিলক্ষ্মীর, স্ত্রীর সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে যা চুরি করা হয়েছে। "আমরা বন্ধুবান্ধবদের কাছে খবর পাই যে আমাদের ছবি ইন্টারনেটে অপব্যবহার করা হচ্ছে। এটা আমাদের পক্ষে একটা খুবই বিড়ম্বনাময় পরিস্থিতি।"
১৮ অগস্ট রাজশ্রী সেলভাকুমার সোশাল মিডিয়ায় এই অপকর্মটি শুরু করে এবং নেটিজেনরা ওই দম্পতিকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতে থাকে এই মা-ছেলের কাল্পনিক যৌন সম্পর্ক নিয়ে। বুম ওই দুটি মিথ্যা টুইটার অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছে, পরে মুছে দেওয়া হলেও যেগুলিতে ওই নিষিদ্ধ সম্পর্কের কথা প্রচার করা হয়েছে।
দুটি টুইটার হ্যান্ডেলেই দাবি করা হয়েছে যে, সেলভাকুমার তাঁর নিজের পুত্রকেই বিয়ে করেছেন এবং তাঁরা দুজনে এক সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করছেন।
এর আগেও বুম একটি ভুয়ো ক্যাটফিস (অন্যজন সেজে থাকা ভুয়ো ব্যক্তি) টুইটার অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেয়েছিল, যাতে একজন ডাক্তারি ছাত্রের ছবির অপব্যবহার করে দাবি করা হয়েছিল, কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত ডাক্তার আইশা নিজেই কোভিড-১৯-এ মারা গেছেন। এ সংক্রান্ত তথ্য-যাচাইকারী প্রতিবেদনটি পড়ুন
এখানে।
একটি ভাইরাল টুইটে ওই দম্পতির দুটি ছবি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, সেলভাকুমার ও তাঁর পুত্রের অজাচারের মাধ্যমে তাদের একটি তিন বছর বয়সের সন্তানও হয়েছে। টুইটে লেখা হয়েছে, "আমার প্রথম স্বামী যখন মারা যান, তখন আমার ছেলের বয়েস ছিল ১২ আর আমার বয়স ৩০। আমরা দুজন একসঙ্গেই থাকছিলাম এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে ছেলে তার স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ হতেই আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে ছেলের প্রস্তাবে সম্মতও হয়ে যাই এবং ২০১৬ সালে আমরা বিয়ে করি। এখন আমাদের একটি ৩ বছরের পুত্রসন্তানও রয়েছে।"
এই ভুয়ো টুইটের স্ক্রিনশট বহু সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী শেয়ার করতে শুরু করে। পোস্টগুলির আর্কাইভ বয়ান দেখুন
এখানে,
এখানে, এবং
এখানে।
এর পরই আমরা রিসেলভা রাজেন্দ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করি, যিনি স্বীকার করেন, টুইটে ব্যবহৃত ছবি তাঁর এবং স্ত্রী প্রীতিলক্ষ্মীরই। তিনি বলেন, "টুইটারের স্ক্রিনশট ভাইরাল হওয়ার পর গতকাল থেকেই আমরা প্রচুর ফোন পাচ্ছি। ছবিগুলি ২০১৭ সালে আমাদের ভারতে বেড়াতে যাওয়ার সময় তোলা, এগুলো আমাদের প্রাক-বৈবাহিক শুটিংয়ের ছবি বলতে পারেন।"
মালয়েশিয়ার পেটালিং জায়া-তে এই দম্পতি গত ৭ বছর ধরে একটি ফিজিওথেরাপি কেন্দ্র চালান, যার নাম ওয়েলবর্ন ফিজিও সেন্টারl ইন্টারনেটে সর্বত্র তাঁদের ছবি ও সঙ্গের ভুয়ো বিবরণী ভাইরাল হওয়ায় ওঁরা একদম বিপর্যস্ত হয়ে গেছেন।
একটি ক্যাটফিস অ্যাকাউন্টে তাঁদের পেশার বিষয়টা সঠিকভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে। "এটা খুবই উদ্ভট ব্যাপার যে আমাদের সম্পর্কটাকে অজাচার বলে বিবৃত করা হচ্ছে! কারণ একই পেশার অন্যান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে এবং পেশার বাইরের লোকেদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক খুবই প্রীতির। এমন কাজ কে করতে পারল, আমি জানি না," বললেন রাজেন্দ্র। ওঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালয়েশিয়ার সাইবার অপরাধ শাখায় এ নিয়ে অভিযোগ জানাবেন।
আমরা এ নিয়ে ২০২০ সালের ২ এপ্রিল
বর্ণম ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও পেয়েছি, যেটা ট্রেনার সিং তাঁর ফেসবুক পোস্টে উদ্ধৃত করেছেন। ওয়েবসাইটটি মালয়েশিয়ায় ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের বিষয়ে খবর করে।
বুম ক্যাটফিস অ্যাকাউন্টগুলির আর্কাইভ লিঙ্ক সরিয়ে নিয়েছে ওই দম্পতির ইমেল-এ অনুরোধের প্রেক্ষিতে।