পাঞ্জাব পুলিশের এক মহিলা কনস্টেবলের পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। ইন্টারনেটে এটিকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা বলে মিথ্যে দাবি করে শেয়ার করা হয়েছে।
ওই মহিলা কনস্টেবল ধর্ষণের শিকার বলে যে দাবি করা হয়েছে,বুম অমৃতসর রুরাল পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা সেই দাবি উড়িয়ে দেয় এবং জানায় যে একটি পথ দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর তিনি তাঁর স্কুটারে করে ডিউটিতে যাচ্ছিলেন। সেইসময় একটি গাড়ি তাঁর স্কুটারে ধাক্কা মারে।
উত্তরপ্রদেশের হাথরসে এক দলিত তরুণীর গণধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ছবিগুলি শেয়ার করা হয়েছে। হাথরসের ঘটনা এই মুহূর্তে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে।
ছবিগুলিতে পুলিশের পোশাক পরা এক মহিলাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। অন্য ছবিটিতে একটি আইডি কার্ড দেখা যাচ্ছে, যাতে ওই মহিলার পরিচয় কনস্টেবল নোমি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ছবিগুলিতে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "পাঞ্জাব পুলিশ@নোমিকে(খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী)অমৃতসরে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়। ভারতের সংবাদপত্র, সাংবাদিক, সোশ্যাল মিডিয়া এই ব্যাপারে নীরব দেখে দুঃখ হচ্ছে।" (ইংরেজিতে মূল ক্যাপশন:"Punjab Police @Nomi (Christian Girl) Rape & Murdered in Amritsar. Sad to hear that Indian Newspaper, Journalist, Social Media are silent on this")
আর্কাইভ দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
টুইটারে ভাইরাল হয়েছে
আমরা কিছু টুইট দেখতে পাই যাতে একই মিথ্যে দাবি একই ভাইরাল হওয়া ছবিরসঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।
(বাংলায় অনুবাদ: পাঞ্জাবে পুলিশ কনস্টেবলকে খুন করা হয়েছে। পুলিশও কি তবে নিরাপদ নয়?
উত্তর: হ্যাঁ, সারা ভারতে কোনও মেয়েই সুরক্ষিত নয়। করোনার এই আবহে রাতারাতি বিল পাশ হয়ে যায়, রাতারাতি আইন তৈরি হয়ে যায়, কিন্তু মেয়েদের ধর্ষণ করা হয় প্রতিদিন, সরকার কেন এই বিষয়ে একটি কঠোর আইন তৈরি করছে না?)
আর্কাইভ দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
(বাংলায় অনুবাদ: এখন মহিলা পুলিশকর্মীরাও নিরাপদ নয়, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদরাও একজন নারী, তোমার মুখে কথা বলার জন্য জিভ আছে না নেই? মহিলা কনস্টেবলের দেহ পাওয়া গেল সঙ্গতপুরার পাঞ্জাবের চুরিয়ান রোড ইয়ার্ড সঙ্গনা প্লেস অঞ্চলে। এবার কে উত্তর দেবে ওখানে তো তোমাদের সরকার আছে।)
আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রদেশের পোড়া দেহের ছবি সাম্প্রদায়িক বার্তা সহ ভাইরাল
তথ্য যাচাই
আমরা 'পাঞ্জাব পুলিশ' ' মহিলা কনস্টেবল' কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করি এবং ওই ঘটনার উপর সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাই। ওই সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০২০ সালের ১ অক্টোবর পাঞ্জাবের সঙ্গতপুরা গ্রামে একটি এসইউভি তীব্রগতিতে মহিলা পুলিশ কনস্টেবল নোমির স্কুটারে ধাক্কা মারলে তাঁর মৃত্যু হয়।
সংবাদ প্রতিবেদনে ওই মহিলা পুলিশ কনস্টেবলের যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তা ভাইরাল ছবিতে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে তাঁর পাশে যে আইডি কার্ড পাওয়া গেছে, তার নামের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। এতে বোঝা যায় ওই মহিলা পাঞ্জাব পুলিশের কনস্টেবল।
২০২০ সালের ১ অক্টোবর দ্য ট্রিবিউনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, শিরোমণিঅকালি দলের প্রেসিডেন্ট ও প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদল স্বর্ণমন্দিরে আসা উপলক্ষে নোমি সেখানে ডিউটি করতে যাচ্ছিলেন। সেইসময় তীব্রগতিতে একটি মহিন্দ্রা স্করপিও এসইউভি তাঁর স্কুটারে ধাক্কা মারে এবং ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। অভিযুক্ত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, পুলিশ অভিযুক্তদের শনাক্ত করার জন্য তদন্ত শুরু করেছে এবং অমৃতসর রুরাল পুলিশে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
দৈনিক ভাস্করের ২০২০ সালের ২ অক্টোবরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় পোস্টমর্টেমের পর তাঁর মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
বুম অমৃতসর রুরাল পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা নিশ্চিত করে যে ভাইরাল হওয়া ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি কনস্টেবল নোমি।তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল, এই দাবি পুলিশ উড়িয়ে দেয় এবং এটি একটি পথ দুর্ঘটনা বলে জানায়। আজনালার ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট (ডিএসপি) অব পুলিশ বিপন কুমার বুমকে জানান, "কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি, এটি একটি পথ দুর্ঘটনা ছিল। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর সকাল সাড়ে সাতটায় তিনি যখন তাঁর ডিউটিতে যাচ্ছিলেনতখন একটি স্করপিও তাঁর স্কুটারে ধাক্কা মারে। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।"
কুমার আরও জানান, "এই ঘটনার তদন্ত চলছে। আমরা গাড়িটি উদ্ধার করেছি, তবে চালক এখনও পলাতক। আমরা অভিযুক্তকে ধরার চেষ্টা করছি।"
আরও পড়ুন: বোনের ধর্ষকের মাথা কেটে থানায়? জিইয়ে উঠল কর্নাটকের পুরনো ভিডিও