বড় পরিবারকে নিরুৎসাহিত করতে এবং দুই সন্তানে পরিবারকে সীমিত রাখতে পার্লামেন্টে এক সাংসদের আনা ব্যক্তিগত সংবিধান সংশোধনী বিলকে ভুল ভাবে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে বলা হচ্ছে, বিজেপি পরিচালিত এনডিএ সরকারই নাকি বিলটি এনেছে।
বিলটির প্রস্তাব: "সংবিধানের ৪৭ নং অনুচ্ছেদে একটি নতুন ধারা সংযোজন করা হোক, যা হবে ৪৭-এ। এই ধারায় পরিবারকে ছোট রাখতে সরকার জনসাধারণকে নানা রকম উত্সাহ দিক, যেমন কর আদায়ে ছাড়, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে সুবিধা, ইত্যাদি। বিপরীতে যে সব পরিবার দুটির বেশি সন্তান উত্পাদন করবে, তাদের এই সব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হোক। তবেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।"
হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হওয়া এই বার্তায় প্রস্তাবিত বিলটির একটি স্ক্রিনশটও দেওয়া হয়েছে, যেখানে লেখা: "রাজ্যসভায় এই সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ হয়েছে, যাতে দুটির বেশি সন্তান আছে, এমন সব পরিবারের প্রাপ্য যাবতীয় সরকারি ভর্তুকি ও সুযোগসুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে..."
বুম তার হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও( ৭৭০০৯০৬১১১) এই বার্তাটি পেয়েছে এবং এটির সত্যতা যাচাই করার অনুরোধও এসেছে।
জনৈক টুইটার ব্যবহারকারীও এই স্ক্রিনশট শেয়ার করে রাজ্যসভায় এই সংশোধনী আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
Constitution amendment bill 👇 introduced in rajyasabha, All the benefits / subsidies shall be withdrawn for the family having more than Two Children....Bravo ! Thanks to PM @narendramodi ji & @HMOIndia @AmitShah ji pic.twitter.com/8YwwtO7BFc
— Bharat Sanghvi #ISupportCAA (@rajamaka) February 11, 2020
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ফেসবুকেও ভাইরাল
আমরা একই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে খোঁজ করে দেখতে পাই, সেখানেও বার্তাটি অভিন্ন ক্যাপশন সহ ভাইরাল হয়েছে।
এই বার্তাটি ভাইরাল করার নেপথ্যে রয়েছে সেই জল্পনা যে, ১১ ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যসভায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংক্রান্ত বিল আনা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তেমন কোনও বিল অবশ্য আসেনি।
তথ্য যাচাই
রাজ্যসভার ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, স্ক্রিনশটে যা দেখানো হয়েছে, সংসদের চলতি অধিবেশনে রাজ্যসভায় পেশ হওয়া বিলটি হুবহু তেমনই। কিন্তু ১১ ফেব্রুয়ারি বিলটি নিয়ে কোনও আলোচনা সভায় হয়নি।
সংসদে ব্যক্তিগতভাবে সাংসদদের আানা বিল এবং সরকারি বিলের মধ্যে পার্থক্যটি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি বিল অধিবেশনের যে কোনও দিনই আলোচিত হতে পারে, কিন্তু বেসরকারি বিল আলোচনার জন্য গৃহীত হতে পারে কেবল শুক্রবারই।
উপরন্তু, ব্যক্তিগতভাবে কোনও সাংসদের আনা বেসরকারি বিল যদি আলোচিত না হয়, তাহলে ওই সাংসদের অবসরগ্রহণের সঙ্গে-সঙ্গে সেটি খারিজ হয়ে যায়।
বিলটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
বুম এ ব্যাপারে জানতে একটি অলাভজনক, নিরপেক্ষ স্বাধীন সংস্থা পিআরএস লেজিসলেটিভ রিসার্চ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে। একটি ই-মেল মারফত সংস্থাটি জানিয়েছে: "সাংসদদের আনা বেসরকারি বিল কেবল তাঁরাই পেশ করতে পারেন, যাঁরা মন্ত্রী নন। সাধারণত সরকারি বিলের ফাঁক-ফোকরগুলি তুলে ধরতে এবং জাতীয় গুরুত্বের নানা বিষয় নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই সব বিল আনা হয়।"
"যেমন ২০১৫ সালে ট্রান্সজেন্ডার বা পরিবর্তনকামী মানুষদের অধিকার সংক্রান্ত বিলটি (২০১৪) রাজ্যসভা পেশ করা হয়, যেটি এনেছিলেন সাংসদ তিরুচি শিবা। সে সময় সরকার নিজেই এই বিলটির একটি নিজস্ব বয়ান পেশ করে এবং সাংসদকে অনুরোধ করে তাঁর বিলটি প্রত্যাহার করে নিতে।"
তবে এ ক্ষেত্রে বিলটি পেশ করেন বিরোধী পক্ষের একজন সাংসদ এবং ব্যক্তিগতভাবে পেশ করা বেসরকারি বিলের সচরাচর অনুমোদিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। পিআরএস-এর সংগৃহীত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৫২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মাত্র ১৪টি বেসরকারি সাংসদ-বিল পাশ হয়েছে, এবং সর্বশেষ বিলটি পাশ হয় ১৯৭০ সালে।