যোগগুরু বাবা রামদেব দাবি করেছেন যে কেউ যদি ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট শ্বাস বন্ধ রাখতে পারেন, তবে নিজেই বুঝতে পারবেন তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত কি না। তিনি আরও দাবি করেছেন যে নাকে সর্ষের তেল দিলে তা পাকস্থলিতে গিয়ে এই ভাইরাস মেরে দিতে পারে। দুটি দাবিরই কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
২০২০ সালের ২৫ এপ্রিল আজ তকের এ-অ্যাজেন্ডা শীর্ষক অনুষ্ঠানে একটি ২৪ মিনিটের ভিডিওয় রামদেব এই দাবিগুলি করেছেন। নীচে এই সাক্ষাৎকারের ভিডিওতি দেখতে পাবেন। ভিডিওটির পাঁচ মিনিটের মাথায় রামদেব নিজে কোভিড-১৯ পরীক্ষার একটি পদ্ধতির কথা বলেন।
তিনি বলেন যে রোগের কোনও লক্ষণ থাকুক বা নাই থাকুক, কেউ যদি ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট অবধি কোনও শ্বাসকষ্ট ছাড়াই নিজের নিঃশ্বাস আটকে রাখতে পারেন, তবে তিনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত নন। তিনি পুরো পক্রিয়াটি করে দেখান।
ভিডিওটির ছয় মিনিটের মাথায় তিনি নাকে সর্ষের তেলের ফোঁটা দিতে বলেন। তিনি দাবি করেন যে তাতে করোনা ভাইরাস শ্বাসযন্ত্র থেকে পাকস্থলিতে চলে যাবে এবং সেখানে বিভিন্ন জারক রস এই ভাইরাসকে ধ্বংস করে দেবে।তথ্য যাচাই
রামদেব দুটি দাবিই করেন ২৫ এপ্রিল, আজতক-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে। বুম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই দাবির কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
দাবি ১: শ্বাস আটকে রেখে করোনাভাইরাস পরীক্ষা
বুম মুম্বই-এর ওখার্ড হাসপাতালের পালমুনোলজিস্ট ডঃ জিনম শাহের সঙ্গে কথা বলে জানতে চায়, যদি কারও নিজের শ্বাসপ্রশ্বাসের ওপর ভাল নিয়ন্ত্রণ থাকে, তবে কি তা করোনাভাইরাসের অনুপস্থিতির প্রমাণ?
ডক্টর শাহ জানান, "এই থিওরির সপক্ষে কোনও গবেষণা নেই। করোনাভাইরাস আছে কি না, তা জানা যেতে পারে একমাত্র আরটি-পিসিআর টেস্টের সাহায্যে।"
এর আগে যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক পোস্টে কোভিড-১৯ নিজে পরীক্ষা করা যাবে বলে দাবি করা হয়, তখন এএফপি এই দাবির সত্যতা যাচাই করে, এবং সেগুলিকে মিথ্যে প্রমাণ করে। যে বিজ্ঞানীর সঙ্গে এএফপি কথা বলে, তিনি জানান যে শ্বাস ধরে রেখে ফাইব্রোসিস নির্ণয় করার পদ্ধতি ঠিক নয়। ফাইব্রোসিস একটি ক্রনিক এক্সপোজার, যা বহু বছর ধরে টানা ভোগার ফলে হয়। এটি কোভিড-১৯'এর মত দ্রুত ছড়ায় না। (আরও পড়ুন: শ্বাস বন্ধ করে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা যায়না)
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে কোভিড-১৯'এর উপসর্গ হল জ্বর, শুকনো কাশি এবং ক্লান্তি। কিছু রোগীর সেই সঙ্গে শরীরে ব্যথা বা যন্ত্রণা, নাক বন্ধ, গলায় ব্যথা বা ডায়েরিয়ার মত উপসর্গ থাকতে পারে এবং প্রতি পাঁচ জনে এক জনের শ্বাসকষ্ট থাকতে পারে।
দাবি ২: সর্ষের তেল করোনাভাইরাসকে পাকস্থলিতে পাঠিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন জারক রসের প্রভাবে ধ্বংস হয়ে যায়
পাকস্থলির গাস্ট্রিক জুসের মধ্যে হাইড্রোক্লরিক অ্যাসিড থাকে ঠিকই, কিন্তু তা সার্স-কোভিড-২ ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে, এ রকম কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বা স্টাডি নেই। তা ছাড়া করোনাভাইরাসের উপর সর্ষের তেলের কোনও প্রভাব আছে কি না, সে বিষয়ে কোনও স্টাডি হয়নি।
ডঃ শাহ জানিয়েছেন যে সার্স-কোভিড-২'এর উপর সর্ষের তেল বা অন্য কোনও তেলের কোনও প্রভাব আছে কি না, সে বিষয়ে এখনও কোনও স্টাডি বা তত্ত্ব সামনে আসেনি।
একটি গবেষণা থেকে সর্ষের তেলের বিবিধ গুণের কথা জানা যায়, কিন্তু কোনও স্টাডি কোভিড-১৯'র উপর এই তেলের প্রভাব আছে কি না তা প্রমাণ করতে পারেনি।
সর্ষের তেল হজম ক্ষমতা বাড়াতে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে, শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে, এমনকি সর্ষের তেল ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি রোধ করে, লোহিত রক্ত কণিকাকে সবল করে, কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়বেটিস কমাতে পারে বলে প্রমাণ হয়েছে।