ভারতের অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব সম্পর্কে রতন টাটার বক্তব্য বলে যে উদ্ধৃতিটি ভাইরাল হয়েছে, সেটি ভুয়ো। শিল্পপতি নিজেই তাঁর টুইটারে সেটিকে ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
সোশাল মিডিয়ায় একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কেটে গেলে, ভারতের অর্থনীতি খুব তাড়াতাড়ি আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে, যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্য কথা। ওই মেসেজে একাধিক সাফল্যের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের ঘুরে দাঁড়ানো, আরবদের সঙ্গে ইজরায়েলের যুদ্ধ, এয়ারোডাইন্যামিকসের নিয়ম, ১৯৮৩ সালে ভারতের ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়, অলিম্পিকে উইলমা রুডলফের স্বর্ণপদক জেতা, এবং অরুণিমা সিংহের এভারেস্ট বিজয়।
সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ছবিটি বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে একাধিকবার আসে। পাঠকরা জানতে চান, রতন টাটা সত্যিই ওই বার্তাটি দিয়েছেন কিনা।
অনেক সেলিব্রিটি মেসেজটিকে রতন টাটার মনে করে সেটি নিজেদের সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করেন। অভিষেক বচ্চনও সেটি তাঁর ইনস্টাগ্র্যাম অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করেন, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে আবার সেটি ডিলিটও করে দেন।
আরশাদ ওয়ারসিও ছবিটি শেয়ার করে বলেন যে, এখনকার হতাশাজনক পরিস্থিতিতে ওই ধরনের বার্তা উদ্বুদ্ধ করে।
After all the depressing news, came across something so true and motivating. My level of respect for Mr Ratan Tata is inexplicable... 🙏🏼 pic.twitter.com/5kMfYg5VfL
— Arshad Warsi (@ArshadWarsi) April 11, 2020
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
টাটা সন্স-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান টুইটারে ওই উদ্ধৃতিকে ভুয়ো বলে ঘোষণা করেছেন। সেই সঙ্গে উনি টুইটার ব্যবহারকারীদের অনুরোধ করেছেন যে, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্য সোশাল মিডিয়ায় পাওয়া মেসেজগুলি তাঁরা যেন যাচাই করে নেন।
This post has neither been said, nor written by me. I urge you to verify media circulated on WhatsApp and social platforms. If I have something to say, I will say it on my official channels. Hope you are safe and do take care. pic.twitter.com/RNVL40aRTB
— Ratan N. Tata (@RNTata2000) April 11, 2020
লিখিত বয়ানটির উৎস খুঁজতে বুম গুগুলে সার্চ করে। দেখা যায় পুনের একটি রিয়েল এস্টেট এজেন্সির 'পারপলরিয়ালটার্স' নামের ওয়েবসাইটে বক্তব্যটি ৯ এপ্রিল ২০২০-তে প্রথম আপলোড করা হয়। ওই মেসেজটি ছিল একটি ব্লগ পোস্ট। তার লেখকের কোনও নাম ছিল না। এবং আসল পোস্টে টাটার কোনও উল্লেখও পাওয়া যায় না।
টাটা গ্রুপ অফ কম্পানিজ কোভিড-১৯ প্রতিহত করার কাজে সাহায্য করার জন্য ১,৫০০ কোটি টাকা দান করে। ওই তহবিলের টাকা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম, পরীক্ষা করার কিট, ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সহায়ক যন্ত্র তৈরির কাজে এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় করা হবে।
রতন টাটার নামে ভুয়ো উদ্ধৃতি ছড়ানোর ঘটনা এই প্রথম নয়। বুম আগেও এই ধরনের মিথ্যে বার্তা খণ্ডন করেছিল। অতীতে, টাটার কম্পানিগুলি জেএনইউ-Sর ছাত্রদের চাকরি দেবে না বলে রতন টাটার নামে একটি বার্তা ছড়ায়। পাকিস্তান আর কংগ্রেস পার্টিকে সমালোচনা করেও একটি বার্তা রতন টাটার নামে প্রচার করা হয়েছিল। আর লোকসভা নির্বাচনের আগে একটি ভুয়ো টুইটার হ্যান্ডেল এমন একটি বর্তা ছড়ানো হয় যা পড়ে পাঠকের মনে হয়ে ছিল যে, উনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করেছেন।