বৃহস্পতিবার বিকেলে দিল্লির জামিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী প্রতিবাদীদের উপর এক ব্যক্তি গুলি চালিয়েছে, এই খবর প্রচারিত হবার সঙ্গে-সঙ্গে রিপাবলিক টিভি প্রতিবাদীদের একজনই গুলি চালিয়েছে বলে মিথ্যে খবর প্রচার করতে থাকে।
বুম রিপাবলিক টিভির প্রচারিত খবরের শিরোনামগুলি বিশ্লেষণ করে দেখে, তাতে "জামিয়ার প্রতিবাদী বন্দুক ব্যবহার করলো", "প্রতিবাদীরা হিংসাত্মক হয়ে উঠলো", ইত্যাদি মিথ্যে খবর প্রচার করা হচ্ছে। ঘটনাটির সরাসরি সম্প্রচারের সময় রিপাবলিক টিভির রাজনৈতিক সম্পাদক ঐশ্বর্য কাপুর একটি ভুয়ো তত্ত্ব প্রচার করতে থাকে যে, এই বন্দুকধারীই হচ্ছে নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী প্রতিবাদীদের আসল চেহারা। এক সময় কাপুর এমনকী এমন প্রশ্নও তোলে যে, মিডিয়ার মনোযোগ আকৃষ্ট করতেই প্রতিবাদীরা এই আচরণ করছে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
যাদের উপর হামলা চালানো হলো, সেই প্রতিবাদীদের ঘাড়েই হামলার দায় চাপানোর ভেলকি দেখিয়ে সম্প্রচারে এ ভাবে বন্দুক ব্যবহারের দায়ে হিসেবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর কাছেও প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হলো।
২ টো বেজে ২ মিনিটের মাথায় কাপুরকে বলতে শোনা যায়, ''...কিন্তু এটা অভূতপূর্ব! দিল্লির রাস্তায় এভাবে খোলাখুলি বন্দুক নিয়ে ঘোরা... প্রতিবাদের নামে গুলি চালিয়ে দেওয়া...এটা যদি নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চেহারা হয়, তাহলে তাদের ভেবে দেখা উচিত এটা কী হচ্ছে...এবং লোকটা গুলিও ছুঁড়লো..."
কিন্তু যতই এটা স্পষ্ট হতে লাগল যে বন্দুকধারী প্রতিবাদীদের মারতেই গুলি চালিয়েছে, ততই বোঝা যেতে লাগল যে টিভি ভাষ্যকারের এই বিবরণী সম্পূর্ণ মিথ্যা। বুম হামলাকারীর একাধিক ফেসবুক পোস্ট খতিয়ে দেখেছে, যেখানে হামলা করতে যাওয়ার আগে সে লিখেছে— "শাহিন বাগ, খেল খতম!" এ থেকে বোঝা যায়, বন্দুকবাজ নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী প্রতিবাদীদের পক্ষের লোক নয়, তাদের বিরোধী শিবিরের লোক।
কিছুক্ষণের মধ্যেই (২টো বেজে ৮ মিনিটের মাথায়) সম্প্রচারের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া হয় এই আলোচনায় যে, এ সবই আসলে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার কৌশল!
''মিডিয়ার মনোযোগ''
অ্যাঙ্কর: কিন্তু ঐশ্বর্য, দেখে মনে হচ্ছে, লোকটি সংবাদ-মাধ্যমের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে চাইছে। ও জানে যে অনেক আলোকচিত্রী উপস্থিত, যারা সবাই ওর দিকে ক্যামেরা তাক করে রয়েছে আর ও রাজধানীর রাজপথ দিয়ে যেতে-যেতে ব্যাপারটা ঘটাচ্ছে।
ঐশ্বর্য কাপুর (রাজনৈতিক সম্পাদক): কিন্তু এই মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা কেন? এটাই কি প্রতিবাদের নেপথ্যের আদর্শ? ওরা চায় লোকে প্রতিবাদের কার্যকারণ জানুক, কিন্তু এটাই কি তার কৌশল? তাহলে যে কেউ সংবাদ-মাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইবে, সে অমনি বন্দুক হাতে তুলে নেবে? তারা কি দেশের রাজধানীর রাস্তায় এ ভাবে গুলি চালাবে? এটা তো চলতে দেওয়া যায় না!
অ্যাঙ্কর: ঠিক সেটাই। এ জন্য ওদের কোনও অনুতাপও নেই!
ঐশ্বর্য কাপুর: এই গণতন্ত্রে রাহুল গান্ধী এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জবাব দিতে হবে কী ভাবে তাঁরা এদের সমর্থন করছেন! জানাতে হবে, কী শর্তে ওঁরা এদের সমর্থন করছেন, কোন শর্তে? কেননা নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী আন্দোলনের নামে এ সব করা হচ্ছে.. দেশের রাজধানীর রাস্তায় খোলাখুলি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে ওরা আস্ফালন করছে, আর রাহুল ও কেজরিওয়াল ওদের সমর্থন করছেন! কী করে! ওঁরা কি এ সব দেখতে পাচ্ছেন না? দিল্লি কি তাহলে বিপন্ন? ওঁরা কি এসব দেখেও দেখছেন না? তা সত্ত্বেও ওদের সমর্থন করে চলেছেন! ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্যে...
টুইটার ব্যবহারকারীরা রিপাবলিক টিভিকে এক হাত নিলেন
রিপাবলিক টিভির এই ভুয়ো সম্প্রচার বেশ কয়েকজন টুইটার-ব্যবহারকারী হাতে-নাতে ধরিয়ে দেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন দ্য কুইন্ট সংবাদ-ওয়েব-এর সিনিয়র এডিটর জসকিরত সিং বাওয়া, যিনি বলেন কী ভাবে ঘন্টার-পর-ঘন্টা রিপাবলিক টিভি ঘটনাটির অপপ্রচার করে চলেছে।
'Guns are being brandished in the national capital, Rahul Gandhi and Arvind Kejriwal are supporting it.'
— Jaskirat Singh Bawa (@JaskiratSB) January 30, 2020
For a good half and hour or more @republic TV and their reporter @aishkapoor passed off the shooter as the 'real face of anti-CAA' protests. pic.twitter.com/QrMkeiT5Kr
Shameless Republic TV. pic.twitter.com/VKRiE4QdFM
— naresh fernandes (@tajmahalfoxtrot) January 30, 2020
They're spinning the narrative where they want to say that Jamia or someone from it was involved in the shooting. pic.twitter.com/2vnpXubPO1
— Vasundhara Singh Sirnate (@vsirnate) January 30, 2020
সঙ্গে-সঙ্গে আমরা ভুল শুধরে নিয়েছি: অর্ণব গোস্বামী, প্রধান সম্পাদক, রিপাবলিক টিভি
চারিদিকে বিরুদ্ধ সমালোচনার মুখে পড়ে রিপাবলিক টিভি টুইটারে তার সম্প্রচারের কৈফিয়ত দেবার চেষ্টা করে।
চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক অর্ণব গোস্বামী জানান, "যখন হামলাকারীর নাম জানতে পারা যায়, সঙ্গে-সঙ্গেই ভুল সংশোধন করে নেওয়া হয়েছে।" কিন্তু বুম দেখেছে, মোটেই "সঙ্গে-সঙ্গে" ভুল শুধরে নেওয়া হয়নি।
When initial news of shots fired at Jamia came in, there were incorrect reports on the identity of the gunman as one of the protesters. This was immediately corrected by Republic TV when reports confirmed his name was Gopal Sharma. This was clarified by the channel on-air as well pic.twitter.com/obRlUXPkbo
— Republic (@republic) January 30, 2020
ঘটনা ঘটে যাওয়ার বেশ কয়েক ঘন্টা পরেও একই ভাবে ভুয়ো ও মিথ্যা সম্প্রচার চলতেই থাকে, যেখানে আক্রমণকারী বন্দুকবাজের ছবির চারপাশে গোল দাগ দিয়ে সমানে বলা হয় যে সে নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী আন্দোলনকারীদেরই একজন, যে 'হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে'।
দেখুন এখানে।
আরও পড়ুন: না, জামিয়ায় গুলিবিদ্ধ ছাত্রের ক্ষত ভুয়ো নয়