পাকিস্তান ও সিরিয়ার পুরনো ও সম্পর্কহীন ছবি এই বলে শেয়ার করা হচ্ছে যে, 'করাচিতে গৃহযুদ্ধ' হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বুম দেখে ছবিগুলি পুরনো। এবং পাকিস্তানের ওই শহরের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সেগুলির কোনও সামঞ্জস্য নেই। আমরা এও লক্ষ করি যে, ভাইরাল পোস্টটিতে এমন কিছু ছবি আছে যেগুলি করাচির নয়।
পাকিস্তানে এক রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ছবিগুলি শেয়ার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আরও পড়ুন এখানে।
ইন্দোরের বিজেপি এমএলএ ওই ছবিগুলিই শেয়ার করেছেন। সেই সঙ্গে হিন্দি ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "গত দু'দিন ধরে করাচিতে গৃহযুদ্ধের আগুন জ্বলছে। সিন্ধের পুলিশ আর পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে। প্রতিদিনই বিস্ফোরণ হচ্ছে। আমাদের কোনও সংবাদের চ্যানেল এই খবর দেখাচ্ছে না কেন?"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: कराची दो दिनों से सिविल वार की आग में झुलस रहा है। सिंध प्रांत की पुलिस और पाकिस्तान की सेना आमने सामने खड़ी है। रोज धमाके हो रहे है पर हमारा कोई न्यूज़ चैनल ये खबर क्यों नहीं दिखा रहा ?)
একই ছবির ওই সেটটি টুইটারেও ভাইরাল হয়েছে। সঙ্গের ক্যাপশনে বলা হয়েছে: "সারা রাত গৃহযুদ্ধ চলার পর করাচির অবস্থা। খুবই দুঃখজনক। আমাদের সিন্ধ পুলিশ ও করাচির মানুষজনের জন্য আওয়াজ তুলুন।"
একই দাবি সমেত ছবিগুলি ফেসবুক ও টুইটারে ও ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: দুর্গা ঠাকুর বিসর্জনে মুঙ্গেরে পুলিশের বর্বরতা ছড়াল পশ্চিমবঙ্গের বলে
তথ্য যাচাই
বুম প্রতিটি ছবির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। তার ফলে, সেগুলির পেছনে আসল ঘটনাগুলি সামনে আসে।
১ ছবি
এই ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, আমরা 'ইন্ডিপেন্ডেন্ট'-এ প্রকাশিত একটি ছবি দেখতে পাই। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তে রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়। সেটির শিরোনামে বলা হয়, 'পাকিস্তানে গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ: পেশাওয়ারের সবচেয়ে পুরনো বাজারে হামলায় ৩৭ নিহত'। রিপোর্টটিতে ওই একই ছবি ছাপা হয় এবং বলা হয়, পাকিস্তানের পেশাওয়ারে বোম বিস্ফোরণের পর তোলা হয় ছবিটি।
ওই লেখাটির সূত্র ধরে, আমরা কি-ওয়ার্ড সার্চ করি। তার ফলে দেখা যায়, ছবিটি পেশাওয়ারের ওপর 'আউটলুক'-এর প্রকাশিত ফটো গ্যালারিতেও রয়েছে। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তে ছবিটি সিএনএন-এর একটি লেখার সঙ্গেও ছাপা হয়। এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এর মোহম্মদ সাজ্জাদের নাম দেওয়া হয় ছবিটার চিত্রসাংবাদিক হিসেবে।
এপি-র ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় যে, আসল ছবিটি ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩-য় পেশাওয়ারে তোলা, করাচিতে নয়।
২ ছবি
খুব ভাল করে লক্ষ করলে, ছবিটির ডানদিকের ওপরের কোণে এএফপি/গেট্টির জলছাপ দেখা যায়। ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, ১৩ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে সিএনএন-এ প্রকাশিত করাচিতে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলার রিপোর্ট বেরিয়ে আসে।
যেহেতু ছবিটিতে গেট্টি ইমেজেস-এর জলছাপ ছিল, তাই আমরা গেট্টির ওয়েবসাইটটি দেখি। দেখা যায়, সেখানে ওই ছবিটি রয়েছে।
ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়: "২৮ ডিসেম্বর, ২০০৯-এ, করাচিতে একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রার ওপর বোমা হামলার পর, পাকিস্তানি সুরক্ষা আধিকারিকরা বিস্ফোরণ স্থলটি পরিদর্শন করছেন। শিয়া মুসলমানদের পবিত্রতম দিনে, তাঁদের সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রার ওপর হামলা চালায় এক আত্মঘাতি বোমারু। সুরক্ষার কড়াকড়ি উপেক্ষা-করা ওই হামলায় ২০ জন মারা যান আর আহত হন আরও অনেকে। ওই বোমা বিস্ফোরণ পাকিস্তানের আর্থিক রাজধানী করাচির সবচেয়ে বড় বুলেভার্ডে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। সেখানে ক্ষিপ্ত, শোকগ্রস্ত লোকজন পাথর ছুঁড়তে থাকেন ও শূণ্যে গুলি ছোঁড়েন। কর্তৃপক্ষ সকলকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন। এএফপি ফোটো/আসিফ হাসান (ফোটো ক্রেডিটে লিখতে হবে আসিফ হাসান/এএফপি/ভায়া গেট্টি ইমেজেস)।
৩ ছবি
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, পাকিস্তানের 'সামা টিভি'র ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ৮ মার্চ একটি লেখা নজরে আসে।
লেখাটিতে ছবিটি একটি ভিডিও স্লাইডের মত করে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু স্পষ্ট করে বলা হয় না সেটি কোথায় তোলা। লেখাটিতে 'অসুর বিস্ফোরণের' উল্লেখ আছে, কিন্তু ছবিটি কবে তোলা হয়, তা বলা নেই।
সামা টিভির সূত্র ধরে, আমরা 'করাচিতে আসুরা ব্লাস্টের পুলিশের ভিডিও' শব্দগুলি দিয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চ করি। তার ফলে, ডিসেম্বর ২০০৯ তে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এর ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা একটি ভিডিও আমরা দেখতে পাই। দেখা যায়, ভাইরাল ফটোগুলিতে যে ছবি আছে, সেই একই দৃশ্য ভিডিওটিতেও রয়েছে।
৪ ছবি
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, দেখা যায় ২০০৬ তে 'চায়না ডেইলি'তে প্রকাশিত একটি লেখার সঙ্গে ওই একই ছবি ব্যবহার করা হয়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২ মার্চ, ২০০৬ তে পাকিস্তানে করাচির মারিয়ট হোটেলের কাছে ঘটনাটি ঘটে। এবং ছবিটি রয়টার্স-এর কাছ থেকে পাওয়া বলেও জানানো হয়।
রয়টার্স-এর ওয়েবসাইটে আমরা আসল ছবিটি দেখতে পাই। সেটির ক্যাপশনে বলা হয়, "২ মার্চ ২০০৬ তে পাকিস্তানের করাচিতে বোমা বিস্ফোরণের ফলে জ্বলন্ত গাড়ি থেকে ধোঁয়া উঠছে। পুলিশ ও সুরক্ষা আধিকারিকরা জানান যে, বৃহস্পতিবার, দক্ষিণ পাকিস্তানের করাচি শহরে মারিয়ট হোটেলের বাইরে পর পর দু'টি বোমা বিস্ফোরণে দু'জন মারা যান। রয়টর্স/জাহিদ হোসেন।"
৫ ছবি
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে জানা যায় যে, সেটি সিরিয়ার আলেপ্পো-তে তোলা, করাচিতে নয়।
২০১৬ সালে, সিরিয়ার যুদ্ধের ওপর সিএনএন-এ প্রকাশিত একটি লেখার সঙ্গে ওই একই ছবি ব্যবহার করা হয়। ছবিটিতে আলেপ্পোর বাসিন্দাদের অবস্থা দেখানো হয়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ আলেপ্পোর পূর্ব দিকের বসতি আল-সালেহিন-এ ট্যাঙ্ক টহল দিচ্ছে।
সিএনএন-এ ব্যবহৃত ছবিটি গেট্টি ইমেজেস থেকে নেওয়া। আমরা দেখি, গেট্টি ইমেজেস-এরওয়েবসাইটে ছবিটি ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ আপলোড করা হয়।
ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়: "বিদ্রোহীদের কাছে থেকে সরকার-পন্থী বাহিনী অ্যালেপ্পো শহরের পূর্ব দিক পুনর্দখল করার পর আল-সালেহিন-এ ট্যাঙ্ক টহল দিচ্ছে।/এএফপি/জর্জ আওয়ারফালিয়ান/ (চিত্র সৌজন্য পড়তে হবে জর্জ আওয়ারফালিয়ান/এএফপি/ভায়া গেট্টি ইমেজেস)"।