সোশাল মিডিয়ায় কোভিড-১৯ ত্রাণ তহবিল ও রাম মন্দির নির্মাণ প্রকল্পে আয়কর ছাড়ের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম ও ছবি জুড়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ঘোষণা করেছে, করোনা ত্রাণে ছাড় নয়, বরং রাম মন্দির নির্মাণ প্রকল্পে ছাড় দেওয়া হবে।
ফেসবুক পোস্টের গ্রাফিক ছবিতে প্রধানমন্ত্রীর ছবির সঙ্গে লেখা হয়েছে, "করোনা ত্রাণে ছাড় নয়, বরং রাম মন্দির নির্মাণে দান করলে মিলবে আয়করে ছাড় ঘোষনা মোদী সরকারের।"
ফেসবুক পোস্টটিতে কটাক্ষ করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "আবার মাস্টার স্ট্রোক দিলেন মোদী জি।"
বুম যাচাই করে দেখেছে কোভিড-১৯ মোকবিলা করা পিএন কেয়ার্স ফান্ড, রাজ্য সরকারের আপৎকালীন ত্রাণ তহবিল এবং অযোধ্যা রাম মন্দির নির্মাণ প্রকল্পে গঠিত ট্রাস্ট 'শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র' প্রত্যেকটি তহবিলের ক্ষেত্রেই ৮০ জি ধারায় আয়কর ছাড়ের সংস্থান রয়েছে।
পিএম কোয়ার্স ফান্ড
২৮ মার্চ ২০২০ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলায় ১৯৪৮ সালে গঠিত প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে পৃথক একটি ত্রাণ তহবিল গঠন করেন। নতুন গঠিত এই তহবিলের নাম দেওয়া হয়েছে, প্রাইম মিনিস্টার্স সিটিজেন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড রিলিফ ইন ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন ফান্ড বা পিএম কেয়ার্স ফান্ড। এই তহবিলে যেমন ব্যক্তিগত আয়কর ছাড়ের সুবিধা রাখা হয়েছে, তার পাশাপাশি এই তহবিলে কর্পোরেট সংস্থা অর্থ প্রদান করলে কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব বা সিএসআর-এর সুবিধা পাবে। ২০১০ সালের বিদেশি অর্থ নিয়ামক আইনের আওতা থেকে ছাড় রাখা হয়েছে। একই কারণ দেখিয়ে কেরল বন্যাতে সরকার বিদেশি ত্রাণ না নেওয়ার ঘোষণা করেছিল।
এই তহবিলের খরচ আরটিআই বা কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ক্যাগ) এর দ্বারা হিসেব চাওয়া যাবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয় কিন্তু স্বাধীন অডিটর দ্বারা হিসেব করা হবে বলে খবরে প্রকাশ। বিস্তারিত পড়ুন দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে।
পিএম কেয়ার্সের ওয়েবাসাইটটিতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। তহবিলে কে কত টাকা দান করেছে তার যেমন তালিকা নেই, কোন খাতে তা ব্যায় করা হচ্ছে সে ব্যাপারেও এখনও পর্যন্ত কোনও তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল
প্রধানমন্ত্রী আপৎকালীন ত্রাণ তহবিলের মতো বিভিন্ন রাজ্য সরকারেরও নিজস্ব তহবিল আছে। করোনা মোকাবিলা করার জন্য সেই তহবিল ব্যবহার করছে বিভিন্ন রাজ্যের সরকারগুলি। যেমন পশ্চিমবঙ্গে বা মহারাষ্ট্রের এই ধরণের রাজ্য সরকারের তহবিলে কোনও কর্পোরেট সংস্থা অর্থ প্রদান করলে সামাজিক দায়িত্ব বা সিএসআরের অধীন কোনও ছাড় পাবে না। কিন্তু আয়কর আইনের ৮০জি ধারায় ব্যক্তিগত দানের ক্ষেত্রে যে কোনও ব্যক্তি কর ছাড়ের সুবিধা পাবেন।
রাম মন্দির ট্রাস্ট
অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ২০২০ সালের ৫ ফ্রেব্রুয়ারি যে ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে তার নাম 'শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র'। সম্প্রতি, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্সেস এক নির্দেশিকায় জানিয়েছে, 'শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র' ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ৮০ জি ধারা অনুসারে কর ছাড়ের সুবিধা পাবে। এই ট্রাস্টটি আগে আয়কর আইনের ১১ ও ১২ ধারা অনুযায়ী ছাড় পেত। ৮০ জি ধারায় আয়করে ছাড় সব ধরণের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ঐতিহাসিক গুরুত্বযুক্ত ধর্মীয় পুণ্যস্থান যেমন অমৃতসরের শ্রী হারমন্দির সাহেব গুরুদোয়ারা ৮০ জি ধরায় ছাড় পেয়ে থাকে। বিস্তারিত পড়ুন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে।
আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে রেলপুলিশ ঘুষ নিচ্ছে বলে ছড়ালো ২০১৯ সালের ভিডিও