৩৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপে আম আদমি পার্টির (আপ) এক বিধায়কের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভিডিওটি এই মিথ্যে দাবি সমেত ভাইরাল হয়েছে যে, ওই ব্যক্তি হলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী।
বুম ওই নেতাকে আপ এমএলএ অজয় দত্ত হিসেবে শনাক্ত করে। আর দত্ত নিজেই বুমকে নিশ্চিত করে বলেন যে, ভিডিওতে তাঁকেই দেখা যাচ্ছে। "ভিডিওতে আমাকেই দেখা যাচ্ছে। হাথরাসের নির্যাতিতার পরিবারকে সাহায্য করতে আমি সফদর জং হাসপাতালে গিয়ে ছিলাম। আর সেখানেই পুলিশ আমাকে গালিগালাজ করে ও অভদ্র আচরণ করতে থাকে," বলেন দত্ত।
কিন্তু হাথরাসে ইউপি পুলিশের হাতে গাঁধীর গ্রেপ্তারির পরিপ্রেক্ষিতে ভিডিওটি মিথ্যে দাবি সমেত ভাইরাল হয়েছে। হাথরাসে যে ১৯ বছরের মহিলা এক কথিত গণধর্ষণ ও নিপীড়নের পর মারা যান, তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় রাহুল গাঁধী গ্রেপ্তার হন।
যাচাইয়ের জন্য ভিডিওটি বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে আসে। জানতে চাওয়া হয়, ভিডিওতে যে নেতাকে দেখা যাচ্ছে তিনি রাহুল গাঁধী কিনা।
ব্যবহারকারীর মালয়ালাম ভাষা থেকে অনুবাদ করা এই ক্যাপশনটি পাঠান: "ইনি হলেন ভারতের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বাবা প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বাবার মাও প্রধানমন্ত্রী। তাঁর যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কি হবে?"
(মূল ক্যাপশান: "ഇത് 🇮🇳ഇന്ത്യയുടെ ഭാവി പ്രധാനമന്ത്രി, അച്ചൻ പ്രധാനമന്ത്രി, അച്ചന്റെ അമ്മ പ്രധാനമന്ത്രി, അച്ചമ്മയുടെ അച്ചൻ പ്രധാനമന്ത്രി ഇദ്ധേഹത്തിന്റെ ഗതി ഇതാണെങ്കിൽ സാധാരണക്കാരന്റെ കാര്യം എന്ത് പറയാനാ")
আমরা ক্যাপশানটি সার্চ করে দেখি একই ভিডিও একই ক্যাপশান সমেত একাধিক বার শেয়ার করা হয়েছে ফেসবুকে।
একই পোস্ট টুইটারেও শেয়ার করা হয়।
আরও পড়ুন: মৃতের অধিকার ও শেষকৃত্য: যা জানা প্রয়োজন
তথ্য যাচাই
আমরা দেখি ভিডিওতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি রাহুল গাঁধী নন। তিনি হলেন আপ বিধায়ক অজয় দত্ত। আপ-এর নিজস্ব টুইটার থেকেও সেটি টুইট করা হয়। তাতে দাবি করা হয়, হাথরাসের নির্যাতিতার পরিবারকে সাহায্য করতে গেলে পুলিশ তাঁর ওপর বল প্রয়োগ করে।
ভিডিওটি খুব মন দিয়ে শুনলে, একজনকে বলতে শোনা যায়, "এসিপি সাহেব, একনায়কত্ব চলবে না্ (ए सी पी साहब तानाशाही नहीं चलेग)।" ক্লিপটির শেষের দিকে আমরা "দিল্লি পুলিশ মুর্দাবাদ" স্লোগান শুনতে পাই।
বুম ভিডিওটি দত্তের সঙ্গে শেয়ার করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ভিডিওটিতে তাঁকেই দেখা যাচ্ছে।
"আমি জানতে পারি যে, সফদর জং হাসপাতালে পুলিশ হাথরাসের প্রয়াত মহিলাটির পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে। তাই তাদের সাহায্য করতে আমি সেখানে যাই। আমি পুলিশকে মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দিতে বলি। তারপরই পুলিশ আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে ও আমাকে ভেতরে টেনে নিয়ে যায়, যেমন ভিডিওটিতে আপনারা দেখেছেন," বলেন দত্ত।
ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়। হিন্দুস্থান টাইমস দিল্লি পুলিশের এক মুখপাত্রের উদ্ধৃতি প্রকাশ করে। তাতে দত্তের ওপর বলপ্রয়োগের কথা অস্বীকার করা হয়।
"হতে পারে কোনও এক ব্যক্তি পুলিশের পরামর্শ উপেক্ষা করে বচসা শুরু করে দেন। কেউ ধাক্কা দেয়নি বা বলপ্রয়োগ করেনি। মাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আবেদন করা হচ্ছিল। সেখানে অন্য আরও গ্রুপ উপস্থিত ছিল কিন্তু তাদের কেউই ধস্তাধস্তির কোনও উল্লেখ করেননি," দিল্লি পুলিশের মুখপাত্রর বিবৃতে এ কথা বলা হয়।
আরও পড়ুন: হাথরস ঘটনা: অভিযুক্তের বাবা বলে ভাইরাল ইউপির বিজেপি নেতার ছবি