পাকিস্তানে ফেলে দেওয়া ডিম ফুটে বেরনো এক ঝাঁক মুরগির বাচ্চার ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে গুজরাটের ঘটনা বলে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে যে লকডাউন চলেছে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ার করা হচ্ছে ভিডিওটি।
পিছনে লোকজনকে উর্দুতে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। ভিডিওটি এই দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে যে, কোভিড-১৯ ঠেকাতে যে লকডাউন চলছে, তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে খারাপ হয়ে যায় এমন খাদ্য দ্রব্যের ওপর। ক্রেতার অভাবে সেগুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে, ভারত সরকার ২৪ মার্চ তিন সপ্তাহের জন্য দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করে।
ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, "ভারতে করোনার জন্য গুজরাটে ডিম ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ পরে সেই ডিম ফুটে বাচ্চা বেরয়। প্রকৃতির সৃষ্টি।"
ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করে দেখার জন্য আমাদের কাছে মারাঠি ও ইংরেজিতে আবেদন আসে।
পুদুচেরির লেফটেন্যান্ট গভর্নর কিরণ বেদিও ভিডিওটি টুইট করেন। পরে অবশ্য টুইটটি ডিলিট করে দেন। তবে জায়গাটি কোথায় তা উনি উল্লেখ করেননি।
তথ্য যাচাই
উর্দু শব্দগুলির ভিত্তিতে, কি-ওয়ার্ড "Thousand Chicks hatch from egg in Pakistan" (পাকিস্তানে ডিম থেকে ফুটে বেরয় এক হাজার মুরগির বাচ্চা) দিয়ে সার্চ করা হয়। তার ফলে ২৭ মার্চ২০২০ আর ৩০মার্চ ২০২০ তারিখে ইউটিউবে আপলোড করা দু'টি ভিডিও সামনে আসে। ভিডিওগুলির বিবরণে বলা হয় ঘটনাটি করাচির সুরজানি শহরের।
কি-ওয়ার্ড দিয়ে আরও সার্চ করলে, ফেসবুকে আপলোড-করা ওই একই ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়। পোস্টগুলিতে জায়গাটিকে করাচির সুরজানি শহর বলে চিহ্নিত করা হয়। পোস্ট দুটি আর্কাইভ করা আছে এখানে ও এখানে।
তাছাড়া আমরা 'মিঞাওয়ালি নিউজ' ও 'জিএনএন' এই দু'টি স্থানীয় চ্যানেলে ওই সংক্রান্ত খবর দেখতে পাই। রিপোর্টে বলা হয় ডিমগুলি খারাপ হয়ে গেছে বলে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু অনুকূল তাপমাত্রার ফলে সেগুলি ফুটে যায়।
খোলা জায়গায় কি ডিম ফুটতে পারে?
ডিম দু'ধরনের হয়: যা থেকে বাচ্চা ফোটে আর যা থেকে ফোটে না। যে ডিম খাওয়া হয় সেগুলি অনিষিক্ত, সেগুলি খাওয়ার যোগ্য সেগুলি থেকে বাচ্চা হয় না। অন্যদিকে নিষিক্ত ডিম থেকে খামারে ব্রয়লার মুর্গির বাচ্চা তৈরি করা হয়। বুম যোগাযোগ করে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভারসিটি অফ অ্যানিম্যাল অ্যান্ড ফিসারিজ সায়েন্সেস-এর অ্যানিম্যাল নিউট্রিশনের বিভাগীয় প্রফেসর ডাঃ বরুণ রায়ের সঙ্গে। ভিডিওতে যা দাবি করা হয়েছে, প্রফেসর রায় তা খণ্ডন করে বলেন, "ভিডিওতে যেমনটা দেখানো হয়েছে, সে ভাবে ডিম ফুটে বাচ্চা বেরতে পারে না। দু'একটা জন্মালেও, তারা শেষমেশ মারা যায়। লকডাউনের সময় দাম পড়ে যাওয়ার কারণে হয়ত বাচ্চাগুলি ফুটে বেরনোর পর মুরগি খামারের লোকেরা সেগুলিকে ফেলে দিয়ে যায়।"
২০১৮ সালের জুন মানে একই ধরনের এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল জর্জিয়ায়। সেখানেও মুর্গি খামার থেকে কয়েক'শ ডিম ফেলে দেওয়া হয়, যেগুলি থেকে বাচ্চা ফুটে বেরয় বলে দাবি করা হয়েছিল। 'ডেইলি মেল-এর' প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯ লকডাউন ভাঙায় পাকিস্তান পুলিশের দাওয়াইকে ভারতের ঘটনা বলা হল