তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রীরামপুর কেন্দ্রের লোকসভা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সংসদের চলতি বাদল অধিবেশনে পেশ করা বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ বিকৃত করে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। ওই ফেসবুক পোস্টে বিভ্রান্তিকর দাবি করা হয়েছে যে, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নেশা করে ওই দিন সংসদে বক্তব্য পরিবেশন করেছেন।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে হিন্দিতে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার সভা পরিচালনায় ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ করতে দেখা যায়। সমস্ত ভিডিওটি শুনলেই যেন মনে হয় তিনি নেশা করে আছেন।
ভিডিওটিতে কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় স্পিকার ওম বিড়লাকে বলেন, "কিন্তু আপনি বিজেপির কোনও সদস্য যখন আমাদেরকে যা খুশি বলছে, কিছু বলছেন না কিন্তু আমরা প্রতিক্রিয়া দিলে আমাদেরকে বলবেন, তা হবে না।" তিনি স্পিকারকে আরও বলেন, "আপনি আমার নাম ধরে আমাকে সাসপেন্ড করে দিন, আমার কোনও অসুবিধে নেই, কিন্তু লকেট চট্টোপাধ্যায়কে আর বিজেপি সদস্যদের রক্ষা করবেন তা হতে দেব না, কোনও ভাবেই না।"
ভিডিওটিতে সম্পাদনা করে লেখা হয়েছে, "বাংলার টপ মাতালের পাগলামি। মাতাল মাতাল ভাব শুধু ছন্দের অভাব।''
ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যপশন লেখা হয়েছে, "এই ভাবেও কি পার্লামেন্টে ঢোকা যায় !!! ছিঃ ছিঃ ছিঃ !!! একি লজ্জা!!! "
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি নিচে দেখুন।
বুম ভাইরাল ভিডিওটির ৪০ সেকেন্ড সময়ে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার বক্তব্যতেও জড়তা লক্ষ্য করে। ভিডিওটির গতি কমানো হয়েছে তখনই অনুমান করে বুম।
বুম 'বাদল অধিবেশন ২০২০', 'কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যয় বক্তব্য' প্রভৃতি কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে ইউটিউবে শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সম্প্রচারিত
ওয়াইওওয়াইও কানাডা টিভির একটি ক্লিপের সন্ধান পায়। সেখানে রয়েছে এই ভাইরাল হওয়া দৃশ্যটি। কোনওরকম আরষ্ঠতা ছাড়াই ওই বক্তব্য বেশ করেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যয়।ভিডিওটির শিরোনাম "২০২০- লোকসভায় অনুরাগ ঠাকুরের মন্তব্যে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, সংসদ সরাসরি"
(মূল ইংরেজিতে: Kalyan Banerjee Reaction On Anurag Thakur Statement At Lok Sabha 2020 | Parliament Live | Day 5)
বুম কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল খুঁজে দেখে ওই একই ভিডিও
পরের দিন অর্থাৎ ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি
ফেসবুক ও
টুইটারে পোস্ট করেছেন। টুইটে তিনি লেখেন,
"পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সাংসদদের আইন বহির্ভূত সুযোগ দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।"দিল্লি ভিত্তিক স্বাধীন স্বতন্ত্র নীতি গবেষণা সংস্থা
'মাধ্যম' যারা সংসদের অধিবেশন চালাকালীন লাইভ টুইট করে #SansadWatch হ্যাশট্যাগ সহ, তারাও সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পিকারের কাছে অপ্রসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে বিজেপি সাংসদদের অনুমতি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে টুইট করেছে।
লোকসভায় ১৮ সেপ্টেম্বরের অধিবেশনে করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নব গঠিত পিএম কেয়ারস ফান্ড সম্পর্কে বিরোধীরা তথ্য চাইলে অর্থদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর অভিযোগ তোলেন ১৯৪৮ সালে নেহরু গঠিত প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল নথিভুক্তি না থেকেই বিদেশি অর্থ সাহায্য নিয়েছে। এরপর সাংসদ অধীর রঞ্জন চোধুরির সঙ্গে বাকযুদ্ধ শুরু হয় অনুরাগ ঠাকুরের। দফায় দফায়
৪ বার সভা মুলতুবি হয় ওই দিনের সভা।
রাজ্যসভায় সাম্প্রতিক বিরোধ
রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর রাজ্যসভায় দুটি কৃষি সংস্কার সংক্রান্ত বিল পেশ করে ধ্বনি ভোটে পাশ করানো নিয়ে বিরোধীর ও সরকার পক্ষের তীব্র বিরোধ বাঁধে। বিরোধীরা কগজ পত্র ছেঁড়ে, মাইক্রোফোন ভাঙে ও ওয়েলে নেমে হট্টগোল শুরু করে। অভিযোগ করা হয় বিলটি নিয়ে আলোচনা ছাড়াই সংসদের নিয়ম না মেনে একতরফা ভাবে পাশ করানো হয়েছে। পরের দিন
তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, সিপিআইএম ও আপের ৮ জন সাংসদকে এক সপ্তাহের জন্য বহিস্কার করা হয়।
বিজেপি সরকারের
কৃষি সংস্কার বিলের বিরোধিতা করে জোট সঙ্গী শিরোমণি অকালি দলের (এসএডি) নেত্রী ও
খাদ্য ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মন্ত্রী হরসিমরত কউর বাদল তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দেন।
লোকসভার বাদল অধিবেশন ১৪ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়ার পর থেকেই কৃষি বিল, পিএম কেয়ার ফান্ডের তথ্য, কোভিড নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি, রাজ্যগুলির বকেয়া জিএসটি টাকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সরগরম হয়ে রয়েছে সংসদের উভয় কক্ষ।