বালিতে চাল ছড়িয়ে খেলার অপরাধে দরিদ্র এক বাবার তার ৬ বছর বয়সী শিশু কন্যাকে শারীরিক নিগ্রহের বিচলিতকর ভিয়েতনামের ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে, ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের আর সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে মনগড়া ক্যাপশন।
বুম দেখে ২৮ মে ২০২০ ফেসবুকে প্রকাশ্যে আসা ঘটনটি ঘটেছে ভিয়েতনামের ভিন চাও শহরের লাই হোয়া কমিউনে। সন্তানের উপর শারীরিক নিগ্রহের জন্য জন্য দান দাহ নামে ২৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে ভিন চাউ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আর নির্যাতিতা শিশুটিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ফেসবুকে পোস্ট করা ১ মিনিট ২ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায় এক ব্যক্তি একটি বাচ্চাকে দড়ি দিয়ে চালার খুঁটির সঙ্গে বেঁধেছে। হাতে লাঠি নিয়ে মারতে শুরু করলে বাচ্চাটি তীব্র আর্তনাদ করে কাঁদতে থাকে। এক সময় দৌড়ে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাচ্চাটিকে ধরে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারতে থাকে। শেষ দৃশ্যে দেখা শিশুটির পেটে লাথি মারতে দেখা যায়। ঘরের দরজার পাশে আরও দুটি ছোট্ট শিশুকে সন্ত্রস্তভাবে দাঁড়িয়ে ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়। দৃশ্যটি জুড়ে কিছু কথোপকথন শোনা গেলেও তা হিন্দি ভাষা নয়।
ফেসবুক পোস্টেের ক্যাপশনে লেখা হয়, "কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছে, তাই বাবা মেনে নিতে পারেন নি। জন্মানোর পরই কন্যা সন্তান সমেত বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বৌকে। কিছু বছর পর ফিরে আসে তাঁরা। তারপরই চলে কন্যা সন্তানের উপর বাবার অকথ্য অথ্যাচার। ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের।"
শিশু নির্যাতনের দৃশ্যটি নির্মম হওয়ায় বুম এটিকে প্রতিবেদনে সংযোজন করা থেকে বিরত থাকছে। পাঠকরা নিজস্ব বিবেচনায় পোস্টটি দেখতে পারেন
এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে
এখানে।
বুম একই ক্যপশন সহ ফেসবুকে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখে যে ভিডিওটি ফেসবুকে
ভাইরাল হয়েছে।
বুম দেখে যে
ভিডিওটি টুইটারেও ভাইরাল হয়েছে। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে
এখানে।
বুম ভিডিওটিকে কয়েকটি মূল ফ্রেমে আলাদা করে নিয়ে ইন্টারনেটে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখে ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের নয়। বুম কয়েকটি ভিয়েতনামি ওয়েবসাইটে ঘটনাটি নিয়ে প্রতিবেদন খুঁজে পায়।
৩০ মে ২০২০ প্রকাশিত '
নগই লউ দং' ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন থেকে বুম জানতে পারে যে ঘটনাটি ভিয়েতনামের ভিন চাও শহরের লাই হোয়া কমিউনের। গত ২৮ মে ২০২০ শিশুকে নির্মম ভাবে মারার ৪ মিনিটের একটি ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করালে নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তড়িঘড়ি ভিন চাউ পুলিশ তৎপর হয়ে ভিডিওতে থাকা নির্যাতনকারী ব্যক্তিকে শনাক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে।
দিন দাহ নামে ওই ব্যক্তিকে পুলিশ সনাক্ত করে তদন্তের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেয়। পুলিশের কাছে দিন দাহ স্বীকার করে যে সে তার বড় মেয়ের উপর নির্যাতন করেছে কেননা সে খাবার চাল বালির মধ্যে মিশিয়ে খেলছিল। দিন দাহের এক প্রতিবেশী ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দী করে ফেসবুকে পোস্ট করে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ৪ বছর ও ২ বছর বয়সী দিন দাহের অপর দুই সন্তান তাদের এক আত্মীয়ের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। নির্যাতনের শিকার হওয়া ছয় বছরের শিশু কন্যটি সাধারন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
'
ফুনুসুকো' নামের একটি সংবাদ ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে হো চি মিন সিটি পুলিশের বয়ান অনুযায়ী ২৭ বছর বয়েসি দরিদ্র ভাড়াটে শ্রমিক দান দাহ তার তিন সন্তানের সাথে সরকারের বরাদ্দ ঘরে থাকে। কনিষ্ঠতম ছেলের জন্মানোর পর দান দাহের স্ত্রী, তিন সন্তান ও স্বামীকে পরিত্যাগ করে নিজের বাবার কাছে চলে গেছে। প্রশাসনের তরফে দান দাহ কে আপাতত একটি কাজের সংস্থান করে দেওয়া হয়েছে, বলে জানিয়েছে ওই প্রতিবেদনটি।