২৫ ফেব্রুয়ারি অশোক নগরের একটি মসজিদের মিনারে উঠে এক দল লোকের সেখানে ভাঙচুর চালানোর ভিডিওটি বুমের পক্ষে ঘটনাস্থলে গিয়ে যাচাই করা সম্ভব হয়েছে।
ঘটনার এক দিন পরে পূর্ব দিল্লির শাহদরার পশ্চিম জ্যোতি নগরে অবস্থিত বড়ি মসজিদের মিনারে বুম-এর যাচাইকারী দল মসজিদের মিনারে দাঙ্গাকারীদের লাগানো গেরুয়া পতাকা উড়তে দেখেছে।
শুধু তাই নয়, গোটা ভিডিওটিকে ভুয়ো বলে নস্যাৎ করার চেষ্টা এবং ২০১৮ সালে বিহারের সমস্তিপুরে অনুরূপ একটি ঘটনার সঙ্গে তাকে তুলনা করার চেষ্টা যে বৃথা, সেটাও বুম প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।
সাংবাদিক রানা আয়ুব তাঁর টুইটে প্রথমে ছাত থেকে তোলা ভিডিওটি প্রকাশ করেন, তারপর মুছে দেন, তারপর আবার সেটি প্রকাশ করেন, যাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, মসজিদের মিনার বেয়ে লোকেরা ওপরে উঠছে এবং তারপর দুজন সেই মিনারে গেরুয়া ঝান্ডা লটকে দিচ্ছে।
Re-posting this video after verifying its authenticity. It is from Delhi. Men marching on top of a mosque, vandalising it and placing a saffron flag over it. pic.twitter.com/bScgJMxKc3
— Rana Ayyub (@RanaAyyub) February 25, 2020
একই ঘটনার অন্য একটি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, দাঙ্গাকারীরা মিনারে উঠে তার ওপর চাঁদের কলার যে কাঠামোটা থাকে, সেটা ধ্বংস করছে।
A right wing goon trying to hoist the saffron flag on the mosque minaret.
— Salman Nizami (@SalmanNizami_) February 25, 2020
Sab Yaad Rakha Jaye Ga! #DelhiRiots pic.twitter.com/I7WEKZgyIb
"মসজিদে তাণ্ডবের ভিডিওটি ভুয়ো"
রানা আয়ুবের টুইটটি প্রকাশ হওয়ার পরেই বেশ কিছু নেটিজেন দাবি করতে থাকেন যে, ভিডিওটি ভুয়ো এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি সিএএ সমর্থক ও সিএএ-বিরোধীদের মধ্যে শুরু হওয়া দাঙ্গার সঙ্গে এর কোনও সংশ্রব নেই।
Tweet delete by Rana Ayyub 🤔 Seems another stunt of fake news factory !
— Tanmay Shankar (@Shanktan) February 25, 2020
Luckily the video still open and got played... pic.twitter.com/g0fsLilu4Y
Rana Ayyub deletes her tweet after people expose her fake video.
But police shouldn't spare her.@MumbaiPolice @DelhiPolice please ensure the arrest of the big hatemonger Rana Ayyub.
She is a big danger to peace in the country.@HMOIndia @AmitShah #DelhiCAAClashes #DelhiRiots https://t.co/ZXHGljKZY7— 🇮🇳 Badri#ModiSarkar2 (@badri4BJP) February 25, 2020Will @DelhiPolice please arrest this worst hatemonger - communal bigot, masquerading as a journalist?
— Sadhavi Khosla🇮🇳 (@sadhavi) February 25, 2020
Dear @nytimes — your celebrated opinion writer is a hatemonger of a worst order and inciting violence in India. She writes garbage on INDIA. @Twitter @jack Please take action. pic.twitter.com/bP1ERAWkIF
Will @DelhiPolice please arrest this worst hatemonger - communal bigot, masquerading as a journalist?
— Sadhavi Khosla🇮🇳 (@sadhavi) February 25, 2020
Dear @nytimes — your celebrated opinion writer is a hatemonger of a worst order and inciting violence in India. She writes garbage on INDIA. @Twitter @jack Please take action. pic.twitter.com/bP1ERAWkIF
ফেসবুকে রানা আয়ুবের টুইট করা ভিডিওর স্ক্রিনশট দিয়ে দাবি করা হয়, এই ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর।
আয়ুবের প্রথম টুইটের আর্কাইভ বয়ানটি দেখা যাবে এখানে। আয়ুব পরে এটি মুছে দিলেও ঘটনাস্থল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর সেটি পুনরায় টুইট করেন।
মসজিদে তাণ্ডবের ভিডিওটি ভুয়ো, এই মিথ্যা দাবির ভিত্তিতে সংবাদ-চ্যানেল টাইমস নাউ-ও একটি পুরো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে বসে।
EXPOSED | Watch: On @thenewshour AGENDA Padmaja Joshi confronts the activist @sairashahhalim who is one among those who shared the fake video of 'mosque vandalisation'.
— TIMES NOW (@TimesNow) February 25, 2020
Delhi Police has declared that no such incident took place. | #DelhiFightHate pic.twitter.com/oS5K5uSKEv
ভিডিওটি বিহারের সমস্তিপুরের নয়
অনেক নেটিজেনই ভিডিওটিকে ভুল করে বিহারের সমস্তিপুরের ঘটনার ছবি বলে দাবি করেন, যেখানে ২০১৮ সালে একটি মসজিদের উপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তাণ্ডব চালানো হয়েছিল।
Don't brainwash people with 2 year old video you are spreading nothing but haterd, see the date of article which is march 28, 2018https://t.co/3WAOasDwFx
— Shivam Awasthi (@iamShivamA) February 25, 2020
যাই হোক, বুম নিশ্চিত হতে পেরেছে যে উপরের ভিডিওটি সাম্প্রতিক এবং বিহারের নয়। নীচে হামলার সম্মুখীন হওয়া মসজিদের গঠনের তুলনা করলে বোঝা যায় দুটি একই মসজিদের দৃশ্য নয়।
তথ্য যাচাই
বুম বুধবার অশোক নগরের মসজিদটি সরেজমিনে দেখতে যায় এবং দেখে আগের দিন, ২৫ ফেব্রুয়ারি সেখানে চলা তাণ্ডবের চিহ্নগুলো স্পষ্ট রয়ে গেছে। বস্তুত, দুজন দাঙ্গাকারী মিনারের মাথায় হনুমানের ছবি আঁকা এবং "জয় শ্রীরাম" লেখা যে গেরুয়া ঝান্ডা টাঙিয়ে দিয়েছিল, সেটাও পতপত করে উড়ছে। দাঙ্গাকারীরা যে তেরঙা পতাকাটাও সঙ্গে নিয়ে উঠেছিল, বুম-এর তোলা ছবিতে সেটাও ধরা পড়েছে।
নীচে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর স্ক্রিনশট এবং বুম-এর তোলা ছবির তুলনা করা হয়েছে।
বুম-এর তোলা নীচের দুটি ছবিতে মিনারের আশপাশে ভাঙচুর হওয়া মসজিদের চিত্র দেখা যাচ্ছে। দাঙ্গাকারীরা মসজিদের ভিতরে ঢুকে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং তার লাগোয়া দোকানপাটগুলো লুঠ করে।
উপরন্তু, সংবাদ-ওয়েবসাইট দ্য ওয়্যার মঙ্গলবার এই মসজিদটিতে তাণ্ডব চালানোর খবরটি পরিবেশন করে। এই ওয়েবসাইটের সচিত্র প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল,"দিল্লি দাঙ্গা: অশোকনগরের মসজিদে আগুন, মিনারে হনুমানের পতাকা।" প্রতিবেদনটিতে অকুস্থলটিকে অশোক নগর বলেই উল্লেখ করা হয়, যদিও তার প্রাথমিক বয়ানে অশোক বিহার বলে ভুলবশত উল্লেখ করা হয়েছিল, পরে যা শুধরে নেওয়া হয়।
বুম যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওটি শাহদরার অশোক নগরের মসজিদেরই। আমরা পাশাপাশি ঘটনাস্থলে উপস্থিত দ্য ওয়্যার-এর দুই সাংবাদিক নাওমি বার্টন এবং অবিচল দুবের সঙ্গেও কথা বলেছি। নাওমি আমাদের জানান, মসজিদটি বড়ি মসজিদ, যেটি পশ্চিম জ্যোতি নগরের ডি ব্লকে অবস্থিত, যেটিতে প্রথমে ভাঙচুর চালানো হয় ও পরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। "বিকেল ৪টের সময় আমরা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছই, ততক্ষণে মসজিদটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশের একটি বাড়ি থেকে আমরা যখন তার ছবি তুলি, তখনও সেটি জ্বলছে।"
আরও পড়ুন: দিল্লি হিংসা: ডিসিপি অমিত শর্মার মৃত্যুর ভুয়ো খবর ভাইরাল
ওই সাংবাদিকদ্বয় ২৫ ফেব্রুয়ারি মসজিদের এক তলার ছবি ও ভিডিও আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন, যা বুমের প্রতিবেদনকে সমর্থন করে।
মসজিদটির ঠিকানা ও অবস্থান গুগলমানচিত্রের সঙ্গেও মিলিয়ে নেওয়া যায়। মসজিদের প্রার্থনাস্থল থেকে ২০০ মিটার দূরে বাস করেন, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক ব্যক্তি জানালেন: "মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনার সূত্রপাত যখন একদল লোক এসে মসজিদে ও তার পাশের জুতোর বাজারে চড়াও হয়। প্রথমে তারা জুতোর বাজারে তাণ্ডব চালায় এবং যথেচ্ছ লুঠপাট চালায়। তারপর তারা মসজিদে ঢোকে এবং সেখানেও তাণ্ডব চালায়। আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে যে-যার ঘরে ঢুকে খিল তুলে দিই।"
মসজিদের সঠিক অবস্থানটি দ্য ওয়্যার-এর অন্য রিপোর্টার অবিচল দুবেও সমর্থন করেন, যাঁর শেয়ার করা ভিডিওতে জ্বলন্ত মসজিদটির আগুন নেভাবার দৃশ্য ধরা পড়েছে।
মসজিদটি অশোক বিহারের নয়, অশোক নগরের
উত্তর-পশ্চিম দিল্লির পুলিশের ডেপুটি কমিশনার যখন অশোক বিহারে একটি মসজিদে আগুন লাগানোর খবরকে ভুয়ো গুজব বলে উড়িয়ে দেন, তখন ভিডিওটির সত্যতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল।
DCP North West, Delhi: Some false information/news item has been circulating regarding damage to a mosque in Ashok Vihar area. It is to clarify that no such incident has taken place in the area of Ashok Vihar. Please do not spread false information.
— ANI (@ANI) February 25, 2020
কিন্তু তারপর নেটিজেনদের বিভ্রান্তি ও সংশয় দুর করতে জানানো হয়, মসজিদটির অবস্থান অশোক বিহার নয়, অশোক নগর, যা অশোক বিহার থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে।